আন্তর্জাতিক

প্রেমের টানে ভারতে গিয়ে বিপাকে বাংলাদেশি তরুণ

প্রেমিকের হাত ধরে বাংলাদেশে গিয়ে ঘর সংসার করার স্বপ্ন ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক কিশোরী। তাকে দেশে নিয়ে যেতে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন তার প্রেমিক। সাথে ছিল তারই এক বান্ধবী। তারা দুজনেই বাংলাদেশি।

Advertisement

তবে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশ। অন্যদিকে আটক করা হয়েছে ওই বাংলাদেশি দুই নাগরিককে। পুলিশের অভিযোগ ভারতীয় ওই কিশোরীকে পাচার করা হচ্ছিল। এই অভিযোগেই আটক করা হয়েছে দুই বাংলাদেশি নাগরিককে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ১৬টি সোনার বিস্কুট পাচারের চেষ্টা

জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় আট মাস আগে বাংলাদেশি এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয় পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম থানার ওই কিশোরীর। এরপর ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা।

Advertisement

মুঠোফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ করেছেন তারা। একসময় ওই তরুণের হাত ধরে বাংলাদেশে পাড়ি দিয়ে সেখানে ঘর-সংসার পাতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায় ওই কিশোরী। কিন্তু ওই কিশোরীর এমন পরিকল্পনার কথা একদমই টের পায়নি তার পরিবার।

গত ২৭ আগস্ট হঠাৎ করেই ওই কিশোরী নিখোঁজ হয়ে যায়। তারপরেই হুঁশ ফেরে পরিবারের। পরদিন ২৮ আগস্ট দিনের আলো ফুটতেই কুমারগ্রাম থানার পুলিশের কাছে ওই কিশোরীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে জানায় তার পরিবার।

এরপরেই আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ ওই কিশোরীর খোঁজে তৎপর হয়। ঘটনার গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করে পুলিশ একপ্রকার নিশ্চিত ছিল যে বড়সড় পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছে ওই কিশোরী।

এরপর ওই কিশোরী অন্তর্ধান রহস্য খুঁজে বের করতে কুমারগ্রাম থানার দুদে কর্মকর্তাদের উপর দায়িত্ব দেন জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী।

Advertisement

পাশাপাশি পুলিশ সুপার নিজেও রাত জেগে ওই কিশোরীর মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং শুরু করতে থাকেন। প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায় যে, ঠিক যখন যখন ওই কিশোরী তার মোবাইল ফোনটি চালু করেছে, তখন তখনই তাকে উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য আসামের দিকে এগোতে দেখা গেছে।

তদন্তে উঠে আসে বাংলাদেশি তরুণ মহম্মদ আবদুল সুফিয়ান ও তারই এক সহযোগী তরুণী রুবা আখতারের নাম। তদন্তে এও জানা যায়, আবদুল ও রুনা উভয়েই গত ২৮ আগস্ট গুয়াহাটির একটি হোটেলে রাত কাটায়। বাংলাদেশের ওই তরুণ ও তরুণী নিজেদের পাসপোর্ট দেখিয়ে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে হোটেলে ঠেন। ওইদিন তাদের সাথেই ওই হোটেলেই অবস্থান করেছিল ওই ভারতীয় কিশোরীও।

এরপর ওই দুই বাংলাদেশির পাসপোর্টে থাকা মোবাইল নম্বরের সুত্র ধরে তদন্তে আরও গতিশীল হয় পুলিশ। দেখা যায়, ২৯ আগস্ট শিলং হয়ে ওই তিনজন ত্রিপুরার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই ত্রিপুরার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সহায়তা চান আলিপুরদুয়ার জেলার পুলিশ সুপার।

গত ৩০ আগস্ট সকালে উত্তর ত্রিপুরার উনাকাটা ও কুমারঘাট থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল মেঘালয় রাজ্যের শিলং থেকে আসা একটি বাসে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে দুই বাংলাদেশিকে আটক করে। সেই সাথে ওই বাস থেকেই উদ্ধার করা হয় অপহৃত ওই কিশোরীকেও। এরপর তাদের তিন জনকেই আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

তদন্তে উঠে এসেছে, প্রেমের জালে ফাঁসিয়েই আলিপুরদুয়ারের ওই কিশোরীকে বাংলাদেশে পাচার করে বেচে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ওই দুই বিদেশি নাগরিক।

পুলিশ তাদের দুজনের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা দায়ের করেছে। আদালত অভিযুক্তদের ৬ দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দিয়েছে। যদিও পাচারের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিক আবদুল সুফিয়ান। তিনি বলেন, মেয়েটি আমার সাথে ঘুরতে গিয়েছিল। পাচার করার অভিযোগ সব ভুল।

আরও পড়ুন: ভারতের চাল-ডাল রপ্তানিতে আরও কড়াকড়ির শঙ্কা

কুমারগ্রাম থানার কর্মকর্তা বাসুদেব সরকার জানান, বাংলাদেশি তরুণের মোবাইল নম্বার ট্র্যাক করেই আমরা তাদের সন্ধান পাই। মাঝে মাঝেই ও মোবাইল নম্বর চালু করছিল। তারাই ওই ভারতীয় মেয়েটিকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে যাচ্ছিল। আমরা তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ভিসা পেয়েছি। সবগুলোই জব্দ করা হয়েছে। যেখান থেকে তাদের আটক করা হয়েছে, ওই পথ দিয়েই তারা বাংলাদেশে যাচ্ছিল। তিনি আরও জানান, আলিপুরদুয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ওই মামলাটি ওঠে। আদালত ছয় দিনের পুলিশ রিমান্ড দিয়েছে।

আলিপুরদুয়ার জেলার পুুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, সত্যিই ওই অপহরণের ছক বাঞ্চাল করতে প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের ক্লাইম্যাক্সের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমাদের পুলিশ কর্মকর্তাদের দক্ষতায় শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি। একবার দেশের সীমান্ত পার করে ফেললে ওই কিশোরীর আর কোনো হদিশ পাওয়া যেতো না, তাতে আমরা নিশ্চিত।

ডিডি/টিটিএন