মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে এক রাজমিস্ত্রিকে অপহরণের অভিযোগে ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবলসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে অপহরণে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল, হ্যান্ডকাপ ও স্প্রিংয়ের লাঠি উদ্ধার করা হয়েছে।
Advertisement
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে তাদেরকে মুন্সিগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে শ্রীনগর ও ঢাকার দোহার এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল তায়েবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে উপজেলার ফুলকুচি এলাকা থেকে মো. সুজন (২০) নামে এক রাজমিস্ত্রিকে পুলিশ পরিচয়ে ৬ যুবক মিলে তুলে নিয়ে যান। এ ঘটনায় আরিফ মির্জাসহ আরও একজন পলাতক রয়েছেন।
Advertisement
গ্রেফতাররা হলেন, শ্রীনগর উপজেলার উত্তর কামারগাঁও গ্রামের আক্তার খানের ছেলে ফয়সাল খান(২৩), দামলা গ্রামের শেখ খলিলের ছেলে আরিফ হোসেন (২০), মাহি শেখের ছেলে মুজিবুর রহমান শাফিন ও ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল লিয়াকত হোসেন লিমন (২৫)। লিয়াকত মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী থানার কুন্ডেরবাজার ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার কনস্টেবল নম্বর ১১৬৩।
পুলিশ ও ভিকটিমের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ব্রাক্ষ্মণপাইকসা এলাকার রাজমিস্ত্রি সুজনকে বৃহস্পতিবার রাতে ফুলকচি এলাকার হৃদয় মার্কেটের সামনে কোমলপানীয় পান করার সময় দুইটি মোটরসাইকেলে করে কনস্টেবল লিয়াকতসহ ৬ যুবক উপস্থিত হন। এ সময় তারা তার কাছে মাদক আছে বলে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিয়ে যান। পরে তাকে রাঢ়ীখাল এলাকার নির্জন স্থানে এবং বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ছনবাড়ি ফ্লাইওভারের নিচে এনে বাড়ি থেকে মুক্তিপণ এনে দিতে বলেন।
এ সময় সুজন অপারগতা প্রকাশ করলে অপহরণকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বেদম মারধর করেন। রাত ৯টার দিকে সুজনের মায়ের কাছে ফোন দিয়ে ত্রিশ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন তারা। সুজনের মা আনোয়ারা বেগম তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়দের পরামর্শে বিষয়টি শ্রীনগর থানা পুলিশকে অবহিত করেন।
পুলিশের পরামর্শে আনোয়ারা বেগম টাকা নেওয়ার জন্য অপহরণকারীদেরকে সমষপুর এলাকায় তাদের বাড়ির সামনে আসতে বলেন। বেশ কয়েকবার তালবাহানা করে রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি অ্যাপাচি মোটরসাইকেল নিয়ে টাকা নিতে পার্শ্ববর্তী ব্রাক্ষ্মণপাইকসা মসজিদের সামনে গেলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা শ্রীনগর থানা পুলিশ ফয়সাল খান, আরিফ হোসেন ও মাহি শাফিনকে আটক করে। পরে পুলিশ তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে রাতেই ছনবাড়ি এলাকায় গেলে লিয়াকত হোসেন লিমন ও আরিফ মির্জাসহ অজ্ঞাত আরও একজন পালিয়ে যান।
Advertisement
পরে শুক্রবার দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে বিকেলে দোহার ও শ্রীনগর থানা পুলিশ দোহার উপজেলার নিকরা গ্রামে একটি বিল্ডিং থেকে লিয়াকত হোসেন লিমনকে গ্রেফতার করে। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিপি লেখা হ্যান্ডকাপ, স্প্রিংয়ের লাঠি ও অপহরণ কাজে ব্যবহৃত ইয়ামাহা এফজেড মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। লিমন ওই গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।
মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার আসলাম খান জানান, এ ঘটনায় শ্রীনগর থানায় অপহরণ মামলা হয়েছে। ৪ জনকে গ্রেফতার করে মুন্সিগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে কনস্টেবল লিয়াকতের রিমান্ড আবেদন করা হবে।
আরাফাত রায়হান সাকিব/এফএ/জেআইএম