# মহাখালী র্যাম্প চালু হলে মহাখালী টার্মিনালে সহজেই যাতায়াত করবে দূরপাল্লার বাস
Advertisement
যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ। আজ (২ সেপ্টেম্বর) বিমানবন্দরের কাছের কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার উদ্বোধন করা হবে। তবে এই অংশেই থাকা বনানী ও মহাখালী র্যাম্প এখনই খুলছে না।
সেতু বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই দুটি র্যাম্প চালুর জন্য এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। র্যাম্পের অবকাঠামো নির্মাণকাজ বাকি। এসব কাজ শেষ করতে সময় লাগবে আরও কয়েক মাস।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে বনানী ও মহাখালী র্যাম্পের কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এছাড়া সাধারণ যানবাহন চালকরাও হতাশ। তারা বলছেন, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী পরিবহন করে হাজারো বাস। ফলে প্রতিদিন মহাখালী থেকে বিমানবন্দর হয়ে উত্তরা পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এ কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনের আগেই এ দুটি র্যাম্পের নির্মাণ শেষ করা দরকার ছিল। এ দুটি র্যাম্প চালু হলে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে সহজেই এক্সপ্রেসওয়েতে বাস ওঠা-নামা করতে পারতো।
Advertisement
সেতু বিভাগের তথ্যমতে, ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার উড়াল সড়কের সঙ্গে র্যাম্প ১১ কিলোমিটার। যে অংশ উদ্বোধন হচ্ছে সেখানে মোট ১৫টি র্যাম্প নির্মিত হচ্ছে। এরমধ্যে ১৩টির নির্মাণ শেষ হয়েছে। এগুলো খুলে দেওয়া হবে। বনানী ও মহাখালী র্যাম্প এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
আরও পড়ুন: বিমানবন্দর সড়কে অসহনীয় যানজট, ফ্লাইট মিস করছেন যাত্রীরা
শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণির ডিএনসিসি হাসপাতালের ঠিক বিপরীত পাশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মহাখালী র্যাম্প। বুধবার (৩০ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, এ র্যাম্পের একাংশ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণিতে নেমে এসেছে। মসৃণ এ র্যাম্প দেখলে মনে হয় কোনো ফ্লাইওভার মিশে গেছে সড়কে। এই র্যাম্পের ওপরের অংশে (এলিভেটেড এক্সপ্রেসের ওপর) নির্মাণ করা হয়েছে টোলঘর। র্যাম্পের আরেক অংশ নির্মাণকাজ করছেন প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা। এজন্য সেখানে বড় বড় যন্ত্রপাতি রাখা হয়েছে। তবে নিরাপত্তার অজুহাতে র্যাম্প এলাকা ঘুরে দেখার অনুমতি দেননি সংশ্লিষ্টরা।
একইভাবে বনানীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণকাজ চলমান। বনানীতে সেতু ভবনের উত্তর পাশে পৃথক দুটি স্থানে র্যাম্প নেমেছে। সেখানে অর্ধশতাধিক শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। তবে নিরাপত্তার অজুহাতে এটিও ঘুরে দেখতে দেওয়া হয়নি।
Advertisement
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে এনা পরিবহন। এই পরিবহনের চালক মাহতাব উদ্দিন। তিনি ময়মনসিংহ থেকে মহাখালী যাত্রী পরিবহন করেন। আলাপকালে মাহতাব বলেন, অনেক সময় ময়মনসিংহ থেকে দুই ঘণ্টায় আব্দুল্লাহপুর চলে আসি। কিন্তু আব্দুল্লাহপুর থেকে মহাখালী পৌঁছাতে সময় লাগে তিন ঘণ্টা। আবার যানজট কম থাকলেও আব্দুল্লাহপুর থেকে মহাখালী আসা বা যাওয়ার জন্য এক ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়েতে মাত্র ১০ মিনিটে মহাখালী থেকে কাওলা পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হবে। তাই যতো দ্রুত সম্ভব মহাখালী র্যাম্প চালু করে দেওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে তীব্র যানজট লেগেই থাকে
দুপুর ১২টায় জামালপুরের একটি বাসে মহাখালী বাস টার্মিনালে নামেন আক্তার হোসেন। পথে যানজট কেমন ছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামালপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত তেমন যানজট ছিল না। কিন্তু টঙ্গী পার হয়ে আব্দুল্লাপুর আসতেই চাপ বাড়তে থাকে। উত্তরা থেকে মহাখালী আসছে এক ঘণ্টা ১৫ মিনিটে। এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর যদি উত্তরাঞ্চলের বাসগুলো ওপর দিয়ে যাতায়াত করে তাহলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে গণপরিবহনে যাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি বলেন, মহাখালী এবং বনানী র্যাম্প চালু হলে বিমানবন্দর রোডে (শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি) যানজট কমবে। তখন দূরপাল্লার বাসগুলো এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে সহজে ঢাকায় ঢুকতে এবং বের হতে পারবে।
তিনি বলেন, এখন মহাখালী থেকে উত্তরা পর্যন্ত যেতে এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১০-১২ মিনিটের মধ্যে এই দূরত্ব যাওয়া যাবে। এতে জ্বালানি খরচ বাঁচবে, যাত্রীরাও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবেন।
জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত মোট ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩টি র্যাম্প খুলে দেবো। তবে বনানী ও মহাখালীর দুটি র্যাম্প এখনই খুলবে না। এরমধ্যে মহাখালী র্যাম্পের নামার পথের কাজ শেষ হয়েছে। ওঠার পথের কাজ বাকি। একইভাবে বনানীতে ওঠার পথের কাজ শেষ হলেও নামার পথের কাজ বাকি।
আরও পড়ুন: রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট, ভোগান্তি চরমে
সেতু বিভাগের দাবি, নগরীর যানজট নিরসনে জাদুরকাঠি হিসেবে কাজ করবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক)। দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে প্রকল্পের সার্বিক কাজ। যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল লেনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত দৈর্ঘ্য সাড়ে ১১ কিলোমিটার। এই অংশটি খুলে দেওয়া হবে। প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হলে বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটেই পাড়ি দেওয়া যাবে যাত্রাবাড়ী। ওঠা-নামার জন্য মোট ২৭ কিমি দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিমি।
এমএমএ/এমএইচআর/এএসএম