মতামত

চাই শৈশব থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনধারা

শিশু বয়স থেকেই একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা প্রতিষ্ঠা করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাঁপানি এবং উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করবে। তাই জীবনের শুরু থেকেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করা জরুরি। শিশুরা পরিবার থেকে শিখে এবং পরবর্তীতে তাদের পিতামাতাকে অনুকরণ করে।

Advertisement

শিশুদের খাওয়া নিয়ে অনেক মায়েরই অভিযোগ থাকে, খেতে চায় না। শিশুদের যেভাবে খাওয়ানো হয়, তা কিন্তু ঠিক নয়। শিশুকে নির্দিষ্ট সময় মেনে খেতে দেয়া হয়, অনেক সময় খেতে বাধ্য করা হয়। জোর করে খাওয়ানো হয়, খেতে চায় না, কান্নাকাটি করে। এতে শিশুদের খাবারের প্রতি অনীহা চলে আসে। ধীরে ধীরে সে খাবারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

আগে বাবা- মা রা এভাবে জোর করেননি, কারণ তারা জানতেন খাবার নিয়ে বেশি জোড়াজুড়ি করা ঠিক না। ক্ষুধা লাগলে এমনিতেই খাবে, চেয়ে খাবে এটাই নিয়ম। অনেকে টিভি দেখিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করেন যা ঠিক নয়। একটি স্বাস্থ্যকর প্রাতঃরাশ দিয়ে দিন শুরু করতে হবে শিশুর। এটি শরীরকে পর্যাপ্ত পুষ্টি দেয় এবং দিনের জন্য শক্তি সরবরাহ করে৷ শিশুকে খাবার টেবিলে নিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে, সবার সাথে টেবিলে খাবে, নিজ হাতে খেতে দিন। সময় লাগলেও ধৈর্য ধরে এ অভ্যাস করালে খাবার নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না।

অনেক শিশু পানি খেতে চায় না। পানি ছাড়া শরীরের স্বাভাবিক কাজ চলে না। তাই ছোটবেলা থেকেই পানি পানের অভ্যাস করাতে হবে। প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে যা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শিশুটিকে রক্ষা করবে। শাকসবজি না খাইয়ে শুধু মাংস খাওয়ালে পেটের অনেক সমস্যা তৈরি হয়।

Advertisement

সঠিক যত্নের অভাবে অনেক সময় শিশু অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। সুস্থ শিশু মানেই হাসি খুশি ও আনন্দময় জীবন। কম পরিশ্রম শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই বাইরে খেলতে যেতে চাইলে না তাদেরকে উৎসাহ দিতে হবে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বাচ্চাদের প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা খেলতে দিতে হবে। এটা কম্পিউটারে না, খোলা মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট, দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। এটা শিশুর শরীর গঠনে খুব উপকারী। বাসার আশপাশে হলে ও হবে। বাড়ির কাছাকাছি কোনো মাঠ না থাকলে চেষ্টা করুন অন্তত কিছুটা সময় সাইকেলিং, সাঁতার বা কোনো খেলার প্রশিক্ষণে ভর্তি করতে।

কম ঘুম ওর মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে শিশু অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অনেক সময় কম বয়সেই অনিদ্রার শিকার হতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ে আলো নিভিয়ে শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে দিন। শিশুদের জন্য ঘুম খুব প্রয়োজনীয়।

সারা দিনে শরীরের যত ক্ষয় হয়, ঘুমের সময় তা ঠিক হয়। শিশুদের ঘুমের সময় বেশি হতে হবে। দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মতো। কম ঘুম শিশুদের জন্য খুব ক্ষতিকর। অনেক শিশু মা-বাবার সঙ্গে রাত ১টা/২টা পর্যন্ত জেগে থাকে। যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। রাতের বেলা ঘুমালে শরীরে বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ হয়, যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

Advertisement

অসময়ের ঘুম এতে বিঘ্ন ঘটায়। তাই শিশুকে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করাতে হবে। এটা শুধু বললেই হবে না, এর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে, শিশুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বিছানা যেতে হবে। বিছানায় যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবে গান দেখাবেন না, এতে ঘুমে সমস্যা হয়।

সামান্য অসুখে অ্যান্টিবায়োটিক দিলে ক্ষতি হবে শিশুর, তা প্রভাবিত করে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে। শরীরে অ্যান্টিবডি রেজিস্ট্যান্ট তৈরি হয়। ক্লান্ত থাকলেও বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ ধোয়া, দিনে দু’বার দাঁত ব্রাশ করা, হাত ধুয়ে খেতে বসা, ঠিক ভাবে গোসল করা- এই নিয়মগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে শরীরে সহজে জীবাণু বাসা বাঁধবে না।

বাইরের খাবারে অভ্যস্ত হলে এখন থেকে হাই প্রোটিন আর লো কার্বসের ডায়েট রাখতে হবে শিশুর বিকাশের কথা ভেবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীরকে সুস্থ রাখে এমন খাবার দিতে হবে। ফাস্টফুড থেকে শিশুদের সরিয়ে রাখতে হবে। ফাস্টফুড শরীরের জন্য বেশ ক্ষতির কারণ হতে পারে। বর্তমানে মুটিয়ে যাওয়া বিশ্বব্যাপী বড় সমস্যা। স্থূল শিশুরা ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়। তাই ফাস্টফুড খেতে না দেয়াই ভালো।

শিশুর কাছে সহজ হতে হবে যাতে সে সব বলতে পারে। এতে তার মন ভালো তো থাকবেই, সঙ্গে স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কমে শরীর ও মন থাকবে সতেজ ও তরতাজা। শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্য, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। শিশুদের সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম,স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাথে থাকবে দৈনিক ব্যায়াম, স্ক্রিন টাইম কমানো, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যাস,জীবাণুর বিস্তার কমাতে ঘন ঘন হাত ধোয়া, স্কুলে মাস্ক ব্যবহার, শিশুর মানসিক চাপ কমাতে হবে।

ন্যূনতম চিনি খাওয়া, প্রচুর পানি পান করা, পানীয় চেক করুন, মাঝে মাঝে ডেজার্ট, সুষম খাদ্য ও ফল এবং সবজি, এই অভ্যাসগুলি তাদের অল্প বয়সে শুরু করা উচিত, যাতে তারা বড় হওয়ার সাথে সাথে এটি তাদের আয়ত্তে আনতে পারে। টিভি, কম্পিউটার এবং ভিডিও গেমের সময় প্রতিদিন দুই ঘন্টার কম সীমাবদ্ধ করতে হবে। শারীরিক কার্যকলাপে উৎসাহিত করতে হবে। প্রতিদিন ত্রিশ থেকে ষাট মিনিটের মধ্যে শারীরিক কার্যকলাপ করার চেষ্টা করতে হবে শিশুকে নিয়ে।

লেখক: নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এবং চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট এন্ড পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট, বেটার লাইফ হসপিটাল। প্রাক্তন অটিজম বিশেষজ্ঞ: ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল।

এইচআর/এএসএম