চাঁদের মাটিতে পা রাখার পর এবার সূর্যের দিকে চোখ ভারতের। শনিবার (০২ সেপ্টেম্বর) দেশটির প্রথম সূর্য অভিযান শুরু হচ্ছে। এই অভিযানে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো বাজি রেখেছে আদিত্য-এল১ মহাকাশযানের ওপর। ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ আগেই জানিয়েছিলেন যে, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে শনিবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে এই মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হবে ।
Advertisement
শ্রীহরিকোটায় সতীশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টারের লঞ্চিং প্যাডে আদিত্য-এল১ স্থাপন করে ফেলেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও তুঙ্গে। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের কাছে সংস্থার চেয়ারম্যান সোমনাথ বলেন, উৎক্ষেপণের জন্য তৈরি হচ্ছি আমরা। রকেট এবং উপগ্রহ প্রস্তুত। চূড়ান্ত মহড়াও শেষ হয়ে গেছে।
মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই চন্দ্রাযভিযানে সাফল্যের মুখ দেখেছে ভারত। ২৩ আগস্ট চাঁদের মাটিতে নেমেছে ইসরোর চন্দ্রযান-৩। ভারতই প্রথম পা রেখেছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম পাখির পালকের মতো অবতরণ করেছে চাঁদে। তা থেকে বেরিয়ে এসেছে রোভার প্রজ্ঞান। চাঁদের নানা প্রান্তে ঘুরে মোট ১৪ দিন অনুসন্ধান চালাবে সেটি।
আরও পড়ুন: চাঁদে ভূমিকম্প রেকর্ড করলো ভারতের চন্দ্রযান-৩
Advertisement
তবে সূর্যের কাছাকাছি যাওয়ার চিন্তা ভারতের কাছে প্রথম। সৌরজগতের কেন্দ্রের অতি কাছে থাকা রবির পর্যবেক্ষণের জন্য এই অভিযানের পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ১৫ বছর আগে। ২০০৮ সালে প্রথম বার ‘আদিত্য’ (সংস্কৃতে যার অর্থ সূর্য) নামে একটি মহাকাশযান তৈরির কথা ভেবেছিল ইসরোর পরামর্শদাতা কমিটি।
শুরুতে ওই কমিটি মনে করেছিল, সূর্যের বাইরের স্তরের পর্যবেক্ষণে একটি ছোটখাটো উপগ্রহ কাজে লাগানো হবে। যার ওজন হবে ৪০০ কেজি।
পরীক্ষানিরীক্ষার স্তরে এই পরিকল্পনার রূপায়ণে ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। যদিও সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আদিত্য থেকে মহাকাশযানের নামকরণ হয় আদিত্য-এল১। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শুধুমাত্র এর উৎক্ষেপণের ব্যয়ভার দাঁড়ায় ৩৭৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
ইসরো জানিয়েছে, আদিত্য-এল১-কে পৃথিবী থেকে সাড়ে ১০ লাখ কিলোমিটার দূরে পাঠানো হবে। এই অংশকে বলা হয় ‘ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট’। যেখানে সূর্য এবং পৃথিবীর আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ বল একই সঙ্গে ক্রিয়াশীল থাকে। ফলে ওই অঞ্চলে স্থির থাকতে পারে কৃত্রিম উপগ্রহ।
Advertisement
ইসরো আরও জানিয়েছে, মহাকাশের পরিবেশ, আবহাওয়া এবং তার ওপর সূর্যের কী প্রভাব পড়ে সেসব পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করবে আদিত্য-এল১। এর ফলে সূর্য সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আদিত্য-এল১ উৎক্ষেপণের জন্য পিএসএলভি-সি৫৭ রকেট ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে ইসরো। এই অভিযানের সাতটি বিশেষ পেলোড থাকবে। সূর্যের ফোটোস্পিয়ার, ক্রোমোস্পিফয়ার, করোনার পর্যবেক্ষণে যাকে বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে।
উৎক্ষেপণের পর সূর্যের অভিমুখে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার এগিয়ে গিয়ে ছোট একটি কক্ষপথে পাক খেতে শুরু করবে আদিত্য-এল১। সেখান থেকে সৌরমণ্ডল সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করবে। এর যাত্রাপথ নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর রাখা হবে বিশ্বের পাঁচ প্রান্ত থেকে।
শ্রীহরিকোটা এবং আন্দামান ছাড়া ব্রুনেই, ফিজি এবং আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলসের মাটিতে বসে সে কাজ করবেন বিশেষজ্ঞরা। এই অভিযানের সঙ্গে এক বঙ্গসন্তানও শিরোনামে চলে এসেছেন। ইসরোর হয়ে ওই পাঁচটি দলে রয়েছেন নদিয়ার বরুণ বিশ্বাস।
তিনি জানিয়েছেন, উৎক্ষেপণের সময় থেকে রকেট তথা মহাকাশযান অভিপ্রেত কক্ষপথে যাচ্ছে, না কি সামান্য হলেও বিচ্যুতি হচ্ছে সে দিকে সারাক্ষণ নজর রাখা হয়। তেমন কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে বিশেষ নির্দেশ পাঠিয়ে তাকে কক্ষপথে ফিরিয়ে আনা হয়।
আরও পড়ুন: হলুদ সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ উত্তর কোরিয়ার
স্বভাবতই চাঁদে পৌঁছাতে যত সময় লেগেছিল, তার থেকে বেশি সময় লাগবে এই অভিযানে। কারণ এই অভিযানে চন্দ্রাভিযানের তুলনায় চারগুণ বেশি পথ অতিক্রম করতে হবে।
জানা গেছে, বেঙ্গালুরুর ইউআর রাও স্য়াটেলাইট সেন্টারে তৈরি হয়েছে এই আদিত্য এল১ স্যাটেলাইট। মহাকাশে ঘুরে ঘুরে সূর্য সম্পর্ক নানা তথ্য ইসরোর বিজ্ঞানীদের পাঠাবে আদিত্য এল১।
সূর্যের তথ্য পেতে এই প্রথম কোনও কৃত্তিম উপগ্রহ মহাকাশে পাঠাতে চলেছে ইসরো। এই মিশন সফল হসে ইসরোর মুকুটে জুড়বে আরও একটি পালক। উৎক্ষেপণের পর এই উপগ্রহটি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে বেশ কয়েকবার। তারপর এই বিশ্বের মায়া কাটিয়ে এটি সূর্যের দিকে পাড়ি দেবে।
টিটিএন