শিক্ষা

‘সহকারী মৌলভী’ পদে জটিলতায় আটকা ৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক সুপারিশ পেয়েছেন ৩২ হাজার শিক্ষকপ্রার্থী। তাদের মধ্যে ২৮ হাজারের বেশি প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশন (ভি-রোল) ফরমও পূরণ করেছেন। চূড়ান্ত সুপারিশ নিয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা।

Advertisement

চূড়ান্ত সুপারিশে বিলম্ব হওয়ায় এরই মধ্যে প্রার্থীরা আন্দোলনের ডাকও দিয়েছেন। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) মানববন্ধন করবেন তারা। তারপরও সুপারিশ না পেলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কার্যালয় ঘেরাও হুমকি দিয়েছেন প্রার্থীরা।

এদিকে, প্রার্থীরা আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় হবু শিক্ষকদের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে তোড়জোড় শুরু করেছে এনটিআরসিএও। তারা দ্রুত চূড়ান্ত সুপারিশ করতে চান। এ লক্ষ্যে সংস্থাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই চূড়ান্ত সুপারিশ প্রক্রিয়া শুরু করবে এনটিআরসিএ। তবে চূড়ান্ত সুপারিশের অনুমতি দেওয়া নিয়ে জটিলতায় পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন: চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত সুপারিশের দাবিতে আন্দোলনের ডাক

Advertisement

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত সুপারিশে যে জটিলতা, তা প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত ‘সহকারী মৌলভী’ পদে নিয়োগ নিয়ে। ফাজিলে তৃতীয় বিভাগ পাওয়া প্রার্থীদের ‘সহকারী মৌলভী’ পদে চূড়ান্ত সুপারিশ করবে না এনটিআরসিএ।

অথচ সহকারী মৌলভী পদে প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্তদের তৃতীয় বিভাগ থাকলেও চূড়ান্ত সুপারিশ করতে অনুরোধ করেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগে চিঠিও পাঠিয়েছে মাদরাসা অধিদপ্তর। এ নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা, যাতে আটকে গেছে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত সুপারিশ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে জানান, এনটিআরসিএ পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখে চূড়ান্ত সুপারিশ শুরু করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুমতি চেয়েছে। মন্ত্রণালয়ও অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে ফাজিলে তৃতীয় বিভাগ পাওয়া সহকারী মৌলভীদের নিয়োগ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা-গবেষণায় সহযোগিতা দিতে চায় জার্মানি

Advertisement

তারা আরও জানান, রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) এ জটিলতা নিরসনে সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে বিষয়টির সুরাহা করা হবে। সোমবারের (৪ সেপ্টেম্বর) মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এনটিআরসিএকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে অনুমতির বিষয়টি জানানো হবে। আশা করছি- এরপর হয়তো চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত সুপারিশের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা থাকবে না।

জানতে চাইলে এনটিআরসিএ উপ-পরিচালক (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন) অধ্যাপক দীনা পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জটিলতা কী তা বলতে পারবো না। নিয়ম অনুযায়ী আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়েছি। মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলে আমরা প্রার্থীদের আর দেরি করাবো না। পুলিশ ভেরিফিকেশন চালু রেখে সুপারিশ শুরু করবো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের আনুষ্ঠানিক অনুমতি দিলেই সাতদিনের মধ্যে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে।’

দ্রুত সুপারিশের দাবিতে আন্দোলনে প্রার্থীরা

দ্রুত চূড়ান্ত সুপারিশের দাবিতে ৪ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্তরা। এরপরও চূড়ান্ত সুপারিশ না করলে প্রার্থীরা এনটিআরসিএ ঘেরাওয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভা সেপ্টেম্বরে, ডিসেম্বরে চূড়ান্ত ফল

চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মতো চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতেও তারা পুলিশ ভেরিফিকেশন চালু থাকা অবস্থায় শিক্ষকপ্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত সুপারিশের বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

তারা আরও বলছেন, প্রাথমিক সুপারিশ পাওয়ার কয়েকমাস পার হলেও চূড়ান্ত সুপারিশ করা হচ্ছে না। এনটিআরসিএ কালক্ষেপণ করছে। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুঃসময় পার করছেন। তাদের দাবি- দ্রুত চূড়ান্ত সুপারিশ দেওয়া হোক।

২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। গত ১২ মার্চ প্রাথমিক সুপারিশের ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেশের স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য ৩২ হাজারের বেশি প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়। এর প্রায় দেড় মাস পর তাদের চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য প্রথমবারের মতো অনলাইনে ভি-রোল ফরম পূরণের নির্দেশ দেয় এনটিআরসিএ। এরপর আরও দুই দফায় ফরম পূরণের সময় বাড়ানো হয়।

এএএইচ/জেডএইচ/