দেশজুড়ে

দুচোখ হারিয়েও থেমে নেই রফিকুলের জীবন সংগ্রাম

দুচোখেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন শৈশবে। তারপরও ভিক্ষাবৃত্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘুরে ঘুরে বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন রফিকুল ইসলাম মুন্সি (৭১)।

Advertisement

রফিকুল ইসলামের বাড়ি শরীয়তপুরের পালং থানার ভুচূড়া গ্রামে। বিকেলে হলে কানার বাজার ও পালং বাজারের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বাঁশি ও পিপারমেন্ট লজেন্স বিক্রি করতে দেখা যায় তাকে। এ লজেন্স বিক্রির সামান্য আয় দিয়েই চলে তার সংসার।

রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৫২ সালের দিকে দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। তার বয়স যখন চার বছর তখন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। গরিব বাবার পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব না হওয়ায় হারাতে হয়েছে দুচোখ। তবে হেরে যাননি তিনি। ১০ বছর বয়স থেকে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। ভিক্ষাবৃত্তিকে ভীষণভাবে অপছন্দ করায় শুরু করেন কাজের সন্ধান। এরপর তিনি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বাসে আর ট্রেনে ঘুরে ঘুরে লজেন্স বিক্রি করতে থাকেন।

আরও পড়ুন: বেদেপল্লিতে বেড়ে ওঠা অদম্য আবু বকর

Advertisement

১৯৭৩ সালে লজেন্স বিক্রির কোনো একসময় পরিচয় হয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার কাছ থেকেই রপ্ত করেন বাঁশি বাজানো। এরপর বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করা শুরু করেন। যা এখন পর্যন্ত ধরে আছেন।

তার সংসার জীবনে স্ত্রী রোকেয়া বেগম, দুই ছেলে আব্দুর রহিম ও সোহাগ মুন্সি রয়েছেন। যদিও ছেলেরা বিয়ের পরে তাদের সংসার নিয়ে আলাদা থাকছেন।

রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘চার বছর বয়স থেকে টাইফয়েড জ্বরের কারণে আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সেই থেকেই আমার দুঃখের জীবন। আমি শুনেছি ভিক্ষা করা আল্লাহ পছন্দ করে না। তাই নিজে নিজেই কাজের সন্ধান করে ঢাকায় বাসে, ট্রেনে লজেন্স বিক্রি করা শুরু করি। আমি এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবেই সংগ্রাম করে যাবো।’

আরও পড়ুন: পানি বিক্রির টাকায় পাকা বাড়ি করলেন পারুল বেগম

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা বোরহান উদ্দীন মুন্সি বলেন, তিনি খুব ছোটবেলা থেকে বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করেন। তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও ভিক্ষা করেন না। এভাবেই তার সংসার চলছে।

বাবুল সরদার নামের আরেকজন বলেন, রফিকুল ইসলাম ভিক্ষা না করে নিজে নিজের কর্ম করে খান। এটা আমাদের এলাকাবাসীর কাছে একটি গর্বের বিষয়।

স্কুলশিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, তাকে আমরা খুব ছোটবেলা থেকেই চিনি। উনি চোখে দেখতে পান না। এ অবস্থায় তিনি বিভিন্ন গ্রামে, হাট-বাজারে বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করেন। উনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও কারও ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজেই সংসার চালাচ্ছেন। এটা আমাদের সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, রফিকুল ইসলামের কথা আমি অনেক শুনেছি। তিনি দারুণ বাঁশি বাজান। জানতে পেরেছি তিনি খুবই দরিদ্র। এ বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন করা হলে উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

এসআর/জিকেএস