কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হক (২৬)। পরিবারের অভাব ঘোচাতে আট বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ নিয়ে পাড়ি জমান। সেখানে পৌঁছার পর ২২ দিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। এরপর থেকে আর খোঁজ মিলছে না আজিজুলের।
Advertisement
নিখোঁজ আজিজুলের সন্ধানের দাবিতে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জ শহরের এক হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করেন তার বাবা-মা।
নিখোঁজ আজিজুলের বাবা দুলাল মিয়া জানান, পাকুন্দিয়া উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের আদম ব্যবসায়ী সোহরাব উদ্দিন ও কামাল উদ্দিনের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই সাড়ে চার লাখ টাকায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে বৈধ ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে পাড়ি জমান আজিজুল হক। সেখানে পৌঁছার পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ২২ দিন যোগাযোগ হয়। এরপর থেকে কোনোভাবেই খোঁজ মিলছে না আজিজুলের।
নিখোঁজের ২-৩ দিন পর আদম ব্যবসায়ী সোহরাব উদ্দিন ও কামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে চুরির দায়ে কারাগারে আছেন বলে জানান। আগামী এক বছর পর জেল থেকে ছাড়া পাবেন বলে আশ্বস্ত করেন আদম ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
এরই মধ্যে আট বছর চলে গেলেও নিজ সন্তানের খোঁজ না পাওয়ায় বিভিন্ন সময় সন্তানের বিষয়ে জানতে গিয়ে আদম ব্যবসায়ীদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলে জানান দুলাল মিয়া।
এক বছর আগে মারা গেছেন আদম ব্যবসায়ী সোহরাব উদ্দিন। এ অবস্থায় সন্তানের খোঁজ পেতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে জরুরি পদক্ষেপ দাবি করেছেন দরিদ্র এ বাবা-মা।
আজিজুল হকের প্রতিবেশী রিপন মিয়া বলেন, আজিজুল নিখোঁজের পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আদম ব্যবসায়ীদের ঢাকার বনানী অফিসে গিয়ে জানতে চাওয়া হয়। এসময় চুরির দায়ে আজিজুল জেলে আছেন বলে জানান আদম ব্যবসায়ীরা। পরবর্তী সময়ে তাদের দেওয়া তারিখ অনুযায়ী এক বছর পর আবারও যোগাযোগ করা হলে কোনো তথ্য না দিয়ে উল্টো আজিজুলের পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন সময় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের আচরণে পরিবারের সদস্যরা আজিজুলের সন্ধান পাওয়ার বিষয়ে হাল ছেড়ে দেন।
সন্তানকে ফিরে পেতে সংশ্লিষ্টদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন মা পারভীন আক্তার।
Advertisement
এ বিষয়ে আদম ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন বলেন, যেকোনো ব্যক্তিকে বিদেশে পাঠানোর পর কর্মসংস্থান স্থায়ী হওয়া পর্যন্ত তিন মাস তাদের দায়িত্বে থাকেন। পরবর্তী সময়ে ওই ব্যক্তির বিষয়ে কোনো কিছু তাদের জানা থাকে না। আজিজুল হক বাহরাইনে যাওয়ার পর কর্মসংস্থানে প্রবেশ করেছেন। পরে সেখান থেকে হারিয়ে যাওয়ায় তার আর খোঁজ মিলছে না।
কিশোরগঞ্জ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আলী আকবর বলেন, আজিজুল হক নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের জানানো হয়নি। তারা আবেদন করলে এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।
এসকে রাসেল/এসআর/এএসএম