কৃষি ও প্রকৃতি

শহরের বুকে দেশি কই মাছের স্বাদ

বর্তমানে দেশি কই মাছ তেমন চোখে পড়ে না। দেশি কই মাছ নিয়ে কেবল গল্প শোনা যায়। বাড়ির পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা খালে পাওয়া যেত নানা রকম দেশি মাছ। বর্ষার মৌসুমে সেসব খালে মাছ ধরার ধুম পড়ে যেত। লম্বায় ২৫ সেন্টিমিটার, মাঝারি আকারের আঁশ দ্বারা আবৃত দেহ আর পাখনার হালকা হলদেটে রঙের কই মাছ সবার জিভে জল এনে দিতো।

Advertisement

একসময় দেশের খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, ধান ক্ষেতে প্রচুর কই মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, কই মাছ এখন বিপন্ন প্রজাতির মাছ। তবে আশার কথা হলো, একদিন শুক্রবার ভোরবেলা বাজারে ভিড়ের মাঝে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, একজন বিক্রেতা ‘দেশি কই, দেশি কই’ বলে হাক দিচ্ছেন। সরু মুখ এবং মাথা ছোট। আকারেও অনেক ছোট। পাখনার নিচে হালকা হলুদ। একেকটি মাছ ১০০ থেকে ১২৫ গ্রামের বেশি হবে না। দেখেই দেশি কই চিনে ফেলা যায়।

আরও পড়ুন: আষাঢ়ের বৃষ্টিতে মাছ ধরার আনন্দ

কই মাছ নিয়ে মায়ের মুখে শোনা একটি গল্প মনে পড়ে গেলো। মা তখন ছোট। একবার বর্ষায় পুরো গ্রাম বন্যার পানিতে টইটুম্বুর। পানি নামতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে। পানি নামার পর ক্ষেতের ভেতর মামা ও তার বন্ধুরা মিলে মাছ ধরতে গেলেন। বন্যার পানিতে খালের অনেক মাছ ক্ষেতের ভেতর উঠে এসেছে। মামা অনেক জাতের মাছ ধরেছিলেন। বেশিরভাগই কই মাছ। শিং, পুঁটিও ছিল কিছু।

Advertisement

ঢাকা শহরে এখন দেশি কই মাছ সব সময় পাওয়া মুশকিল। তাই বাসায় ফিরে মাকে কই মাছগুলো দেখাতেই তিনি ছোট বাচ্চার মতো লাফিয়ে উঠলেন। মায়ের আব্দারে মাছ নিয়ে আমরা ফার্মগেট থেকে হাতিরঝিলের দিকে ছুটলাম মামার বাসার উদ্দেশে। সেখানে যাওয়ার পর সবাই দেশি কই মাছ দেখে খুশি হলেন। মামি এবং মামাতো বোনরা মিলে মাছ কাটতে বসে গেলেন।

আরও পড়ুন: ৬০ হাজার টাকার মাছ চাষে কোটিপতি ওসমান

জুমার নামাজ শেষে ফিরে আসার পর আমরা অবাক। রান্না প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সম্ভব হলো কীভাবে! মামতো বোন সব ভিডিও করে রেখেছে। ভিডিওতে দেখি, কেউ মাছ কাটছেন, কেউ মসলা বাটছেন, কেউ সব তদারকি করছেন।

একটু পর সবাই একসঙ্গে খেতে বসলাম। দেশি কই মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাচ্ছিলাম। খেতে খেতে মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই মাছ নিয়ে আপনার নাকি ছোটবেলায় অনেক গল্প আছে?’ মামা জবাব দিলেন, ‘গল্প তো অনেক আছে, কোনটা রেখে কোনটা বলব?’ মামা বললেন, ‘এই মাছ আমায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছে শৈশবের মধুময় সেই দিনগুলোতে।’

Advertisement

এসইউ/এমএস