দেশজুড়ে

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আবেদন হারিয়েছে ডাকের চিঠি

‘রানার ছুটেছে তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে। রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে, রানার রানার চলেছে, রানার’- হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গানের সেই রানার আজ নেই। ডাক বিভাগে লেগেছে অধুনিকতার ছোঁয়া। তবে এত কিছুর পরও দিন দিন কমেছে চিঠি।

Advertisement

গত ৫ বছরে ডাক বিভাগের চিঠি কমেছে অর্ধেক। শুধুমাত্র সরকারি কাজে ও অফিসিয়াল ছাড়া ডাক বিভাগে আর ব্যক্তিগত চিঠি আসে না। যদিও বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি আধুনিকায়নের ফলে এখন কমেছে চিঠি।

আরও পড়ুন: বৃদ্ধাশ্রমের মায়ের চিঠি

রাজশাহী ডাক বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে উত্তরাঞ্চলের চিঠি ও অন্যান্য পার্সেল হয়েছে চার লাখ ২৭ হাজার ৭৩৬টি। এসব থেকে ডাক বিভাগের আয় হয় ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ১২৬ টাকা। এর মধ্যে সাধারণ চিঠি দুই লাখ ৫৭ হাজার ২৩৬টি। বিদেশে থেকে সাধারণ চিঠি আসে ৬৯৫টি। রেজিস্ট্রি চিঠি হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯৪টি। বিদেশ থেকে এসেছে ২২৩টি। পার্সেল এসেছে আট হাজার ৪০৫টি। বিদেশ থেকে এসেছে দুটি। জিইপি হয়েছে চার লাখ ছয় হাজার ২১টি ও ইএমএস হয়েছে ১৬০টি।

Advertisement

আর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে উত্তরাঞ্চলের চিঠি ও অন্যান্য পার্সেল হয়েছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫টি। এসব থেকে আয় হয়েছে ২৫ লাখ ৪২ হাজার ১৪৬ টাকা। এর মধ্যে সাধারণ চিঠি এসেছে ৯৯ হাজার ২৪৯টি। বিদেশে থেকে সাধারণ চিঠি এসেছে ৪০টি। রেজিস্ট্রি চিঠি হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৬৫০টি। বিদেশ থেকে এসেছে ৩৯টি। পার্সেল এসেছে তিন হাজার ৮৯৩টি। বিদেশ থেকে এসেছে ছয়টি। জিইপি হয়েছে তিন লাখ ৬৮১টি ও ইএমএস হয়েছে ২৬২টি।

গত ৫ বছরে ডাক বিভাগের চিঠি কমেছে এক লাখ ৮২ হাজার ৯০১টি। আয় কমেছে ৯ লাখ ৯৮০ টাকা।

আরও পড়ুন: একটি চিঠি ও বাঙালির মুক্তির বার্তা

এদিকে রাজশাহীতে দিন দিন বাড়ছে বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের চাহিদা। রাজশাহীতে প্রতিটি কুরিয়ার সার্ভিসেই এখন বাড়তি চাপ। বিশেষ করে আমের মৌসুমে এসব কুরিয়ার সার্ভিসের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন।

Advertisement

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস লি. রাজশাহী অঞ্চলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আলতাফ হোসেন বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে প্রতি মাসে গড়ে ৪০ হাজারেরও বেশি চিঠি আদান প্রদান হয়। মানুষকে সুন্দরভাবে চিঠি পৌঁছে দেওয়ার কারণেই মানুষ আমাদের বেছে নেয়।

রাজশাহী সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে অফিসের চিঠি বুকিং করছিলেন বেসরকারি একটি অফিসের কর্মচারী মো. নাদিম। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই এখানে আসতে হয়। অফিস থেকেই বলে দেয় এখান থেকে চিঠি পাঠাতে।

ডাক বিভাগের কথা বললে তিনি বলেন, আমি ১০ বছর ধরে চাকরি করি। এর মধ্যে কোনোদিন অফিস থেকে ডাকে চিঠি পাঠাতে বলেনি। তাদের সেবার মান ভালো না। তাই এখানে দেয়। এছাড়া রাতেও বুকিং করা যায়। ডাকেতো আর বিকেল ৪টার পর বুকিং দেওয়া যায় না।

আরও পড়ুন: ভুল ঠিকানায় ১৩২ বছরের পুরোনো চিঠি

তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন। তিনি বন্ধুকে আম পাঠাতে এসেছেন। বলেন, আগে যোগাযোগ ছিল না। তখন বাবা-মা, স্ত্রী, বন্ধু সবাইকে চিঠি দিতাম। এখনতো আর সেইদিন নেই। এখন সবাই চায় দ্রুত উত্তর পেতে। একটু দেরি হলে কল দিয়ে তাড়াতাড়ি উত্তর দিতে বলে।

তিনি বলেন, আগের সেই দিনের মতো এখন আর চিঠি নেই। সেই চিঠিতে যে কত আবেগ ছিল সেটি বলে বোঝাতে পারবো না। সেই চিঠির জন্য মানুষ অধীর অপেক্ষাও করতো। সেটা একটা মধুর সময় ছিল।

রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পোস্টমাস্টার জেনারেল শেখ সাইফুল আলম বলেন, চিঠির সংখ্যা শুধু রাজশাহীতে বা বাংলাদেশে কমেনি, এটা সারাবিশ্বেই কমেছে। মূলত ডিজিটাল সুবিধার কারণেই চিঠি কমেছে। মানুষ এখন ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইমেইলে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করছে। ফলে ব্যক্তিগত চিঠি নেই বললেই চলে। অফিসিয়িাল চিঠি এখন আসছে। ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর চিঠি অনেক বাড়ছে।

তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে ২০১২-১৩ সালে ডাক বিভাগের অ্যাক্ট হয়। এর ফলে ডাক বিভাগের সঙ্গে কুরিয়ারের কম্পিটিশন বাড়ছে। আমাদের আনেক সেবা সম্পর্কে মানুষ জানেও না। ডোমেস্টিক মেইলে আমাদের একটি যুগান্তকারী কাজ হয়েছে। এখন চিঠি কতদূর গেলো সেটি গ্রাহক নিজে ট্র্যাকিং করে দেখতে পারবে। আশা করছি ভালো একটি সময় আসছে।

এফএ/এএইচ/এমএস