অর্থনীতি

জাপানের তুলনায় বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন খরচ প্রায় অর্ধেক

বাংলাদেশে ব্যবসারত জাপানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে। তারপরও তারা বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী। জাপানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রায় ৭২ শতাংশই মনে করে, বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ কিছুটা অস্বস্তিদায়ক। তবে এখানে ব্যবসার খরচ অনেক কম। জাপানের ২৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে পুরোপুরি অসন্তুষ্ট। প্রায় ৪৫ শতাংশ কোম্পানি কিছুটা অসন্তুষ্ট।

Advertisement

জাপানি কোম্পানিগুলোর ৫১ দশমিক ৭ শতাংশই ‘সস্তা শ্রমের’ জন্য বাংলাদেশকে ব্যবসার পরিবেশের ক্ষেত্রে শীর্ষে রেখেছে। তারা মনে করে, জাপানে যে পণ্য উৎপাদনে খরচ ১০০ শতাংশ, বাংলাদেশে একই পণ্য উৎপাদনে খরচ ৬০ শতাংশেরও কম। অর্থাৎ, জাপানের তুলনায় বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন খরচ প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে সস্তা শ্রমের দিক থেকে বাংলাদেশের পর জাপানিদের আগ্রহের তালিকায় দ্বিতীয় মিয়ানমার এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ফিলিপাইন।

বুধবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে জরিপের এ ফলাফল তুলে ধরে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো)। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী জাপানি কোম্পানিগুলোর মতামতের ভিত্তিতে এ জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। গত বছরের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পরিচালিত এ জরিপে বাংলাদেশে ব্যবসারত ২১৪টি জাপানি কোম্পানি মতামত দেয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিঞা, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুস সামাদ আল আজাদ, মেট্রো চেম্বারের সভাপতি সায়ফুল ইসলাম, মেট্রো পলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সহ-সভাপতি মানাবু সুগাওয়ারা, জেট্রোর এদেশীয় প্রতিনিধি উজি আন্দো, ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের বাণিজ্য ও শিল্প সমিতির সভাপতি টেটসুরো কানো।

Advertisement

জরিপে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চার হাজার ৩৯২টি জাপানি কোম্পানি অংশ নেয়। ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কোন দেশ তাদের প্রথম পছন্দ এমনটি জানতে চাওয়া হয়। মোট অংশ নেওয়ার সাড়ে ৭২ শতাংশ কোম্পানি প্রথম পছন্দ হিসেবে ভারতের নাম জানায়। পরের অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ব্যবসা সম্প্রসারণে জাপানিদের আগ্রহের তালিকায় রয়েছে ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার নাম। বাংলাদেশের বাজার বড় হওয়ার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা জাপানিদের বিনিয়োগ আগ্রহ তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

গত বছরের চালানো জরিপে জাপানি ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ব্যবসার পরিবেশের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কেন এগিয়ে রয়েছে। জাপানি কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, চারটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পছন্দের তালিকায় তারা রেখেছে। এরমধ্যে রয়েছে- কম খরচে শ্রমিক পাওয়া, শ্রমিক-কর্মচারীর সহজ প্রাপ্তি, জনশক্তি-প্রকৌশলীর সহজপ্রাপ্তি এবং বিদ্যমান বাজার।

জাপানি কোম্পানির ৫১ দশমিক ৭ শতাংশই ‘সস্তা শ্রমের’ জন্য বাংলাদেশকে ব্যবসার পরিবেশের ক্ষেত্রে শীর্ষে রেখেছে। সস্তা শ্রমে বাংলাদেশের পর জাপানিদের আগ্রহে দ্বিতীয় মিয়ানমার এবং তৃতীয় ফিলিপাইন। দেশটির ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ কোম্পানি ‘শ্রমিক ও কর্মচারী প্রাপ্তিতে’ বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় রেখেছে। এ তালিকায় পছন্দের শীর্ষ ফিলিপাইন। অভ্যন্তরীণ বাজারের আকারের দিক থেকে জাপানিদের কাছে বাংলাদেশ তৃতীয় পছন্দের দেশ। এ তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থান যথাক্রমে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। বিশেষায়িত শ্রমশক্তি ও প্রকৌশলী প্রাপ্তির দিক থেকে তৃতীয় পছন্দ বাংলাদেশ, প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দ যথাক্রমে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।

ব্যবসার পরিবেশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অপছন্দের শীর্ষে রেখেছে দুটি ক্ষেত্রে। এর একটি ব্যবসার অনুমোদন ও সনদ প্রদানে দক্ষতার ঘাটতি, অন্যটি কর ব্যবস্থার অদক্ষতা। প্রায় ৮০ শতাংশ জাপানি কোম্পানির মতে, ব্যবসার ক্ষেত্রে এদেশে বড় প্রতিবন্ধকতা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আর ৭৩ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করে, কর ব্যবস্থার অদক্ষতা ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় বাধা। বিদেশি মূলধনের আইনি কাঠামো তৈরি, বিদেশিদের ভিসা ও কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) প্রাপ্তির জটিলতাও বড় প্রতিবন্ধকতা। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার অবস্থান।

Advertisement

গত বছর বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে জাপানি কোম্পানিগুলোর প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল শুল্ক ছাড়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জটিলতা ও বৈদেশিক মুদ্রার দাম। আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি ও মজুরি বৃদ্ধি।

জরিপে অংশ নেওয়া ৬৭ দশমিক ৪ শতাংশ জাপানি কোম্পানি ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল কেনার জটিলতা। এছাড়া ৬৫ শতাংশের মতে বিদ্যুৎ সমস্যা ও ৬৩ শতাংশের মতে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিই বড় চ্যালেঞ্জ।

পণ্য উৎপাদন খরচ কোন দেশে কেমন, এমনটি জানতে চাওয়া হলে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, জাপানে যে পণ্য উৎপাদনে খরচ ১০০ শতাংশ, বাংলাদেশে একই পণ্য উৎপাদনে খরচ ৬০ শতাংশেরও কম। বাংলাদেশের চেয়ে পণ্য উৎপাদনে খরচ কম পড়ে শুধু কম্বোডিয়ায় ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং লাওসে ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ।

ইএআর/এমকেআর/জেআইএম