নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতি মামলার বিচার স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো খোলা চিঠি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী।
Advertisement
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনসহ ৯ জন নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তির উদ্দেশে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন আইনজীবীরা।
আরও পড়ুন: বিচারাধীন বিষয়ে বিবৃতি বিচার বিভাগকে অপমানের শামিল: আইনমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) ই-মেইল মাধ্যমে আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার এবং মোহাম্মদ ইমরুল কায়েস খান এ চিঠি পাঠান।
Advertisement
ওবামা ও হিলারি ছাড়াও অন্য সাতজন হলেন- জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোজে রামোস হোর্তা, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, ডেনমার্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও নোবেলজয়ী ডেনিশ ম্যাকওয়েজ, ইরাকের কুর্দি মানবাধিকারকর্মী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী নাদিয়া মুরাদ, কোস্টারিকার নোবেলজয়ী ওসাকা আরিশ সানচেজ ও ইটালির চেম্বার অফ ডেপুটিজের প্রেসিডেন্ট লরা বোল্ডরিনি।
এছাড়া চিঠির অনুলিপিটি জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং ড. ইউনূসকেও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত সোমবার (২৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতি মামলায় ড. ইউনূসকে দণ্ড দেওয়া হতে পারে- এমন উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে তার বিচার স্থগিতে বিশ্বের দেড় শতাধিক নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি পাঠান। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ীও ছিলেন।
এবার সেই চিঠি প্রত্যাহার চেয়ে ওবামা-হিলারিসহ ৯ জনকে পাল্টা চিঠি পাঠালেন সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী।
Advertisement
আরও পড়ুন: বিশ্বনেতাদের ড. ইউনূসের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান হিলারির
চিঠিতে বারাক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতে চলমান মামলা স্থগিত করার বিবৃতি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে জানানো হয়। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ আদালতে চলমান বিচার বাধাগ্রস্ত করা আন্তর্জাতিক আইন এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইন তথা সংবিধানের পরিপন্থি এবং আদালত অবমাননার শামিল বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, চলমান মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে এ ধরনের একপাক্ষিক বিবৃতি প্রদান, অন্য বিচারপ্রার্থীদের জন্য বৈষম্যমূলক হয়রানি।
আইনজীবীরা চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, তাদের (বিবৃতিদাতাদের) মত বিজ্ঞজনদের কাছ থেকে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ মামলা স্থগিতের জন্য এ ধরনের একপাক্ষিক অপ্রত্যাশিত বিবৃতি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং সারা বিশ্বের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এছাড়া শ্রমজীবী মানুষের আইন সংগত অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে তাদের বিবৃতি বাধা হয়ে দাঁড়াবে এবং তাদের এ বিবৃতিটি একটি নেতিবাচক উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চিঠিতে বিচার স্থগিত চেয়ে বিবৃতি বা প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো খোলা চিঠি অবিলম্বে প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আদালতে চলমান কার্যক্রম নিয়ে এ ধরনের বিবৃতি প্রদান না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: এতই আত্মবিশ্বাস থাকলে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়ান কেন
এদিকে গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) এক টুইটবার্তায় ড.ইউনূসের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন। সেখানে তিনি বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের সম্প্রতি দেওয়া বিবৃতিটি যুক্ত করে দেন।
টুইটবার্তায় হিলারি লিখেন, আমিসহ ১৬০ জনের বেশি বিশ্বনেতা মানবিক ও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাদের অবস্থানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ নিগ্রহ বন্ধের দাবি জানানোর আহ্বান জানান হিলারি।
তবে শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি মামলার বিচার স্থগিত নিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপকে ড. ইউনূসের ‘বিবৃতি ভিক্ষা’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে ড. ইউনূসের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজের প্রতি এত আত্মবিশ্বাস থাকলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়ান কেন?
আরও পড়ুন: ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি মামলার তদন্তে প্রভাব ফেলবে না
বিবৃতিদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা বিবৃতি দিয়েছেন তাদের আহ্বান জানাই, বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ পাঠান, আইনজীবী পাঠান। দলিল দস্তাবেজ, কাজগপত্র ঘেঁটে দেখুন অন্যায় আছে কি না।
এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম