কখনো শুনেছেন বিয়ের জন্য পাত্রী পছন্দ করতে গিয়ে ‘মেয়েটি ভীষণ ঝাল বা টক’ বলতে? তা পাত্রপক্ষের ঝাল বা টক যতই প্রিয় হোক ৷ বাঙালি তুলনা করে মিষ্টির সঙ্গেই।
Advertisement
মিষ্টিপ্রিয় বাঙালির সাহিত্যেও মিষ্টি কথাটি এসেছে অনেকবার। তবে আমি সচরাচর কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া মিষ্টি তেমন খাই না।
আরও পড়ুন: একমাস চা পান না করলে শরীরে যা ঘটে
একবার গিয়েছিলাম ছোট মামার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখেতে। ঢাকায় থাকলেও মেয়ে পক্ষের বাড়ি ছিল নওগাঁ। সেদিনই প্রথম খেয়েছিলাম নওগাঁর প্যারা সন্দেশ।
Advertisement
জানিনা সেই সন্দেশে কি এমন ছিল তবে সেই মিষ্টি খেয়ে আমার মা পাত্রীকে (বর্তমান মামী) তুলনা করেছিলেন নওগাঁর মিষ্টির সঙ্গে।
গরুর দুধের তৈরি ক্ষীর দিয়ে বানানো নওগাঁর বিখ্যাত প্যারা সন্দেশ। শুধু নওগাঁ নয়, রাজধানী পেরিয়ে দেশের বাহিরেও আছে এর ব্যাপক খ্যাতি। সামান্য মুনাফায় পুরোনো ঐতিহ্যেকে ধরে রেখে প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহকের চাহিদা মেটাচ্ছে নওগাঁর প্যারা সন্দেশ।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু আক্রান্তরা কেন ডাবের পানি পান করবেন?
বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে পাঠানো বা কোথাও নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই সন্দেশ মর্যাদার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। স্বাদ আর পুষ্টিগুণেও অতুলনীয় এই মিষ্টান্ন।
Advertisement
প্যারা সন্দেশ তৈরি খুবই সহজ। এক কেজি প্যারা সন্দেশ তৈরি করতে ছয় লিটার গরুর দুধ প্রয়োজন হয়। সঙ্গে এক কেজি চিনি । প্রথমে তরল দুধের সঙ্গে চিনি জ্বাল দিয়ে ক্ষীর বানানো হয়।
এরপর দুধ ও চিনির মিশ্রণে তৈরি ক্ষীর দুই হাত দিয়ে রোল করে হালকা চাপ দিতেই প্যারা সন্দেশ প্রস্তুত। প্রতিটি প্যারা সন্দেশ প্রায় আধা ইঞ্চি চওড়া ও দুই ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। নওগাঁর প্যারা সন্দেশের কেজি ৪০০-৪৫০ টাকা।
আরও পড়ুন: ডিমের মালাইকারি রান্নার রেসিপি
জানা যায়, ভারতের বিহার এলাকায় এক নবাবের মিষ্টি তৈরির কারিগর বাস করতেন। নবাবের মৃত্যুর পর তিনি নওগাঁ শহরের কালীতলা এলাকায় চলে আসেন।
কালীতলা এলাকায় বুড়াকালীমাতা মন্দিরের পাশে মিষ্টির দোকান খুলে বসেন। তার নাম মহেন্দ্রী দাস। তিনিই প্রথম প্যারা সন্দেশের প্রচলন করেন।
সেই দোকানে ভোগের মিষ্টিও বিক্রি করা হতো। মহেন্দ্রীর পর তার ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দাস কালীতলা মন্দিরের পাশে আরেকটি মিষ্টির দোকান দেন।
আরও পড়ুন: মুড়ির মোয়া তৈরির রেসিপি
সেই দোকানের মিষ্টির কারিগর বিমল মোহন্তের স্পর্শে প্যারা সন্দেশে নব জীবন লাভ করে। কালেক্রমে পরিবর্তন হয়ে বর্তমান মালিক বৈদ্য রতন দাস ।
নওগাঁতে বেশ কয়েকটি প্যারা সন্দেশের দোকান থাকলেও পছন্দের শীর্ষে মন্দিরের পাশের দোকান ১মা নওগাঁ প্যারা সন্দেশ’। দামও তুলনামূলক কম।
নওগাঁতে যারা বেড়াতে আসেন লোভনীয় ও সুস্বাদু প্যারা সন্দেশ নিয়ে যেতে ভুলেন না। নওগাঁয় প্যারা সন্দেশের পাশাপাশি পাওয়া যায় কাটাভোগ, কদমসহ বিভিন্ন সুস্বাদু মিষ্টি।
জেএমএস/জিকেএস