এম মাঈন উদ্দিন, থাইল্যান্ড থেকে
Advertisement
থাইল্যান্ডের পর্যটন সিটি পাতায়ার মধ্যে আছে আরেকটি অপরূপ পর্যটন স্পট কোরাল দ্বীপ। সমুদ্রপথে এই দ্বীপে না গেলে মনে হবে পাতায়া ভ্রমণ বৃথা। পাহাড় ও সমুদ্রবেষ্টিতে এই দ্বীপে প্রতিদিন ভিড় করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার পর্যটক।
আমরাও এবার শামিল হলাম দ্বীপটি দেখার জন্য। সম্প্রতি কোরাল দ্বীপ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। একই সময় অনলাইনে তিনজনের জন্য বুকিং করা হয়। স্পিডবোট যোগে আসা-যাওয়া ও দুপুরের খাবারসহ একজন ৪০০ বাথ করে ১২০০ বাথ দিয়ে বুকিং দিই।
আরও পড়ুন: একদিনেই কীভাবে ঘুরে আসবেন মহামায়া লেক থেকে?
Advertisement
পরদিন সকালে হোটেলে নাস্তা করার আগেই বুকিং করা প্যাকেজের গাড়ি এসে হাজির। দ্রুত নাস্তা সেরে গাড়িতে উঠলাম। আমি, বন্ধু শরিফ ও আমাদের গাড়ি চালক ফয়সাল ভাই রওয়ানা হলাম। আমাদের সঙ্গে আরও অন্যান্য দেশের পর্যটকরাও বিভিন্ন হোটেল থেকে গাড়িতে উঠেছেন।
এই প্যাকেজ ট্যুরে বেশ কয়েকজন গাইড ছিলেন। প্রথমে মাইক্রোবাসে করে তারা আমাদের নিয়ে গেলেন একটি সমুদ্রসৈকতে। সেখানে একজন গাইড এসে আমাদের হাতে নম্বর (ট্যাগ) লিখে দিলেন। যেটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য ও তাদের পরিচালনার সুবিধার্থে ব্যবহার করা হয়।
এরপর একজন করে তারা আমাদের সবার ছবি তুললেন। পরবর্তী সময়ে তারা আমাদের একটি স্পিড বোটে উঠতে বললেন। এরপর লাইফ জ্যাকেট গায়ে দিয়ে স্পিড বোটে উঠে বসলাম।
আরও পড়ুন: হাউজবোটে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?
Advertisement
কিছু দূর যাওয়ার পর স্পিডবোটটি থেমে গেলো ও সমুদ্রের মাঝখানে একটি ভাসমান প্লাটফর্মে (ছোট জাহাজ) আমাদের যেতে বলা হলো। সেখানে একজন গাইড এসে জানালেন কোরাল দ্বীপে কী কী ইভেন্ট আছে।
সব নাম মনে নেই তবে প্যারাসুট স্কাই ডাইভিং, আন্ডার সি ওয়াক, ব্যানানা বোট ইত্যাদি ইভেন্ট সেখানে ছিল। প্লাটফর্ম থেকে অন্যান্য মানুষদের ‘প্যারাসাইলিং’ (প্যারাসুট রাইড) ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছিলো।
একটি স্পিডবোট প্যারাস্যুটের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে ওই প্ল্যাটফর্ম থেকে মানুষগুলোকে আকাশে ছেড়ে দিচ্ছে ও তারা গভীর সমুদ্রের উপর প্যারাস্যুটে করে আকাশে ভাসছেন।
প্রায় ২৫ মিনিট অপেক্ষার পর আমরা সেখান থেকে আরেকটি স্পিডবোট যোগে কাঙ্খিত কোরাল দ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ এর সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছে আমাদের বোট।
আরও পড়ুন: সহস্রধারা ঝরনায় একদিন
সমুদ্রের স্বচ্ছ পানির দৃশ্য দুচোখ জুড়িয়ে যায়। সৃষ্টিকর্তার অপরূপ নিদর্শন। সমুদ্রের পানিগুলো আমাদের দিকে আছড়ে পড়ছিল। ৩০ মিনিট সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে এসে পৌঁছালাম বহু আকাঙ্ক্ষিত কোরাল দ্বীপে।
অসাধারণ সৌন্দর্যমণ্ডিত দ্বীপটির প্রথম দর্শনেই মন স্নিগ্ধতায় ভরে যায়। পাহাড় ও সমুদ্রের একসঙ্গে বসবাস এই দ্বীপে। সেখানকার পর্যটকরা বিভিন্ন রকম ইভেন্টে অংশ নিচ্ছিলেন। আমি আর শরীফ ভাই সমুদ্রের পানিতে নিজেদের ভিজিয়ে নিলাম।
সমুদ্রের স্বচ্ছ পানি আকাশি নীলের সংমিশ্রণের মন মাতানো জলরং। কোরাল দ্বীপ সুন্দর হলেও তা পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন কৃত্রিমতায় পরিপূর্ণ।
আরও পড়ুন: নিকলী হাওর ভ্রমণে কীভাবে যাবেন ও কী কী দেখবেন?
কোরাল দ্বীপ পাহাড় ও সমুদ্রের মিলনমেলা, পাশাপাশি বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্রের সব ধরনের সুবিধা থাকায় তার সৌন্দর্যের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কোরাল দ্বীপ ভ্রমণ শেষে আবার স্পিডবোটে করে ফিরে আসলাম পাতায়া শহরে।
এরপর প্যাকেজ ট্যুরের আওতায় দুপুরে একটি মাদ্রাজি হোটেলে ফ্রি ব্যুফে খাবারের আয়োজন ছিলো। প্যাকেজ ট্যুরের গাড়ি আমাদের হোটেলের সামনে নামিয়ে দেয়।
কোরাল দ্বীপ ভ্রমণে বাংলাদেশি খুব বেশি চোখে পড়েনি। বেশিরভাগ ভারতীয়, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও থাইল্যান্ডের লোকজন বেশি ছিল।
আরও পড়ুন: ঢাকার কাছেই ঘুরে আসুন গোলাপের রাজ্যে
বাংলাদেশি পর্যটক, তরুণ উদ্যোক্তা মো. ওমর শরীফ বলেন, ‘প্রথম ২০১৬ সালে কোরাল দ্বীপে এসেছিলাম। ২০২৩ সালে আবার ঘুরতে এসেছি এই দ্বীপে।’
‘অসাধারণ একটি জায়গা, পাহাড় ও সমুদ্রের মেলবন্ধন দেখতে কার না ভালো লাগে। বিশেষ করে স্পিডবোটে সমুদ্রপথে ভ্রমণ মন ভরে যায়। এখানকার ট্যুর প্যাকেজের গাইডগুলো খুবই আন্তরিক।’
জেএমএস/জিকেএস