ফিচার

মৃৎশিল্প: বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম

‘মৃৎ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে মৃত্তিকা বা মাটি আর ‘শিল্প’ বলতে বোঝানো হয় সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে। তাই মাটি দিয়ে তৈরি সব শিল্পকর্ম মৃৎশিল্প হিসেবে পরিচিত। ইংরেজিতে মৃৎশিল্পকে সাধারণত ‘পটারি’ বা ‘সিরামিক আর্ট’ নামে অভিহিত করা হয়। এই শিল্পকর্মের কারিগর যারা, সেই শিল্পীদের বলা হয় কুমার।

Advertisement

সর্বপ্রথম চীনের থাংশান শহরে মৃৎশিল্পের জন্ম হয়। আর এ কারণে এ শহরটিকে মৃৎশিল্পের শহর বলা হয়। চীনের পেইচিং শহর থেকে ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এই শহরের অবস্থান। এখানকার পথে-প্রান্তরে, পর্যটনকেন্দ্র ও পার্কগুলোতে মৃৎশিল্পের নানা শিল্পকর্ম দেখতে পাওয়া যায়।

আমাদের দেশেও এই শিল্পের ব্যবহার সেই আদিকাল থেকে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো মৃৎশিল্পের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিল, কলসি, থালা, বাটি, ফুলের টব, ফুলদানি, ব্যাংক, খাবার টেবিল, খেলনা, সৌখিন সামগ্রীসহ নানা জিনিসপত্রের ব্যবহার হয়।

আরও পড়ুন: জৌলুস হারাচ্ছে নৌকা বাইচ

Advertisement

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা মাটির তৈরি জিনিসপত্র কম দামে কিনে হাটে বিক্রি করেন। মৃৎশিল্পে মিশে আছে গ্রামীণ বাংলার হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের ইতিহাস। মৃৎশিল্পীরা তাদের এই শৈল্পিক প্রতিভার উপর ভিত্তি করে একসময় শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত গড়ে তোলেন। দেশের অর্থনীতি চাঙা রাখতে মৃৎশিল্পের বিকল্প পথ সে সময় ছিল না।

কুমারপাড়ার মেয়েরা ব্যস্ততায় দম ফেলার সময় পেতো না। কাঁচামাটির গন্ধ ভেসে আসতো চারদিক থেকে। হাট-বাজারে মাটির তৈজসপত্রের পসরার চাহিদা ছিল অনেক। বর্তমানে মৃৎশিল্প কালের বিবর্তনে কমে যাচ্ছে। নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে টিকতে না পেরে অনেকেই এ পেশা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। বেছে নিচ্ছেন ভিন্ন পেশা।

প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক, স্টিল,মেলামাইন, চিনামাটি, সিলভারসহ বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থের তৈরি হাড়ি-পতিল, খেলনা, সৌখিন জিনিসপত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ধ্বংসের মুখে এই প্রাচীন মৃৎশিল্প। তবে কেউ কেউ বাপ-দাদার স্মৃতি হিসেবে এখনো ধরে রেখেছেন এই পেশা।

আজকাল বৈশাখী মেলা, গ্রামীণ কিছু মেলায় ঘুরতে গেলে দেখা মিলে পোড়ামাটির নানাবিধ কাজ, গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদি, পুতুল, খেলনা, প্রতিমা, শো-পিসসহ অসংখ্য তৈজসপত্র। এছাড়াও মৃৎশিল্প জাদুঘর, জাতীয় জাদুঘরে দেখা যায় সে সময়ের বাংলার কুমারপাড়ার চিত্র।

Advertisement

ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি হস্তক্ষেপ, নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। তা না হলে অচিরেই আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে এক সময়ের অর্থনীতির চালিকা শক্তি মৃৎশিল্প।

কেএসকে/এএসএম