বর্ষার মৌসুমেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি মেহেরপুরে। খরায় শুকিয়ে গেছে ছোট-বড় অনেক জলাশয়। এতে করে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে জমিতেই পাট শুকিয়ে নষ্ট হয়ে বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষীরা।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা গেছে , জেলার বেশ কিছু এলাকায় কৃষকরা জমি থেকে পাট কাটছেন। অনেকেই কাটা পাট জমিতে ফেলে রেখেছেন। কেউ কেউ পাট জাগ দিতে না পেরে স্তূপ করে রেখেছেন। জমিতে কেটে রাখা পাট শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। অনেকেই জমি থেকে পাট কেটে ভ্যানে করে দূরে কোনো জলাশয়ে নিয়ে যাচ্ছেন জাগ দেওয়ার আশায়।
মেহেরপুর কাথুলী গ্রামের নিজাম আলী বলেন, দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। আশানুরূপ বৃষ্টির না হওয়ায় রোপণের পরপরই পাটের জমিতে সেচ দিতে হয়েছে। ফলনও ভালো হয়নি। তারপরও এক বিঘা জমিতে পাট কেটে মজুরি বাবদ সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরপর গাড়ি ভাড়া করে একটি পুকুরের পাশে পাট স্তূপ করে রাখা হয়েছে। ওই পুকুরে পাট জাগ দেওয়ার মতন সামান্য জায়গা নেই।
আরও পড়ুন: সোনালী আঁশের রাজত্ব ফিরছে টাঙ্গাইলে
Advertisement
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার তিনটি উপজেলায় ২১ হাজার ৭৩৪ সেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬৬ হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। অর্থাৎ মেহেরপুর জেলার পাট চাষ হয়েছে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা নিজাম উদ্দীন বলেন, এবছর তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত এক বিঘা জমির পাটও কাটা সম্ভব হয়নি। এমনিতে শ্রমিক মজুরি জনপ্রতি ৬০০ টাকা হয়ে গেছে। বাজারে এক মন শুকনো পাটের দাম এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। কৃত্রিম উপায়ে পাট জাগ দিতে হলে জমিতে পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি তুলে জমাতে হবে। এভাবে করে এক মন পাট বিক্রি করে খরচ উঠবে না।
মেহেরপুর তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল হক বলেন, ৪ বিঘা পাট, ২ বিঘা কাঁচা মরিচ, এক বিঘা বাঁধাকপির চাষ করা হয়েছে। ৫ কাটা জমিতে আমন ধানের চারা রয়েছে। পাট কেটে আমন ধান রোপণ করার আশা ছিল। সময় মত যদি পাট কেটে জাগে দেওয়া সম্ভব না হয় তবে আমন ধান রোপণ করতে সমস্যা হবে। আশপাশের কোনো পুকুরে পর্যাপ্ত পানি নেই। ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হল না। জমিতেই পাট শুকিয়ে লাল হয়ে পড়ছে। এভাবে আর কয়দিন থাকলে পাট জাগে দেওয়া সম্ভব হবে না। পাট কেটে খড়ি করতে হবে।
আরও পড়ুন: পানির অভাবে কমছে পাটচাষ
Advertisement
কৃষক আউয়াল হোসেন বলেন, কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর পাটের দাম অর্ধেকেরও কম। পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া অনেক কষ্টের ব্যাপার। এসব কষ্ট সুখে পরিণত হতো, যদি পাটের ভালো দাম পাওয়া যেত। এখন তো পাট গলার ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। পাটের দাম না বাড়লে অনেক কৃষককে পথে বসতে হবে।
কৃষক রমজান আলী জানান, এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে পাটের আবাদ করেছিলাম। এ আবাদে আমাকে ১০ হাজার টাকা এনজিও ঋণ নিতে হয়েছে। পাট বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করার আশা ছিল। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করাতো দূরের কথা পকেট থেকে শ্রমিকদের খরচ দিতে হয়েছে।
মেহেরপুরের পাট ব্যবসায়ী কাউছার আলী বলেন, গত বছরের পাট বিক্রি করতে না পেরে গোডাউনে ভর্তি করা আছে। যে দামে পাট কিনেছি বিক্রি করতে গেলে তার অর্ধেক দাম পাচ্ছি তাই পাট বেচাকেনা বন্ধ।
আরেক ব্যবসায়ী ইউসুব আলী জানান,পাট কিনে দাম পাচ্ছি না। কৃষকরা যে দামেই হোক বিক্রি করতে পারছে কিন্তু আমাদের কিনে লোকসান হচ্ছে। যে কারণে এবছর পাট কিনতে হচ্ছে গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে।
আরও পড়ুন: এবার ৩৯০ বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছেন এনামুল
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, কৃষকদের বাড়তি ফসল হিসেবে জেলাতে পাটের চাষ হয়ে থাকে। কৃষকেরা পাট কেটে ওই জমিতেই আমন ধানের চারা রোপণ করেন। অনেকে বাধা কপির চাষ করেন। চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষকেরা। তবে কৃষি বিভাগ থেকে পাটের জমিতেই পাট জাগ দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এতে খরচ একটু বাড়বে। কিন্তু পাট জাগ দেওয়া সম্ভব হবে।
আসিফ ইকবাল/জেএস/এএসএম