আন্তর্জাতিক

ভারতের চাল-ডাল রপ্তানিতে আরও কড়াকড়ির শঙ্কা

বিগত আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত নিয়ে এবারের বর্ষা মৌসুম শেষ করতে চলেছে ভারত। এল নিনোর প্রভাবে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হতে পারে এবারের আগস্ট মাসে। একই কারণে সেপ্টেম্বরেও বৃষ্টিপাত হতে পারে সামান্য। গত সোমবার (২৮ আগস্ট) ভারতের আবহাওয়া বিভাগের দুই কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

Advertisement

ভারতের জন্য বর্ষাকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির চাষাবাদ এবং জলাধার ও জলাশয়গুলো ফের পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় ৭০ শতাংশ পানিই আসে বৃষ্টিপাত থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির প্রায় অর্ধেক কৃষিজমিতে সেচের অভাব রয়েছে।

এ বছর বৃষ্টিপাতের ঘাটতির কারণে বিভিন্ন অত্যাবশ্যক পণ্য, যেমন- চাল, ডাল, চিনি, শাকসবজির দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে সামগ্রিক খাদ্য মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে। এমনিতেই গত জুলাই মাসে ভারতে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে সর্বোচ্চ।

আরও পড়ুন>> গলে যাচ্ছে হিমালয়ের বরফ, ঝুঁকিতে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষ

Advertisement

ভারতে বৃষ্টিপাতের অভাব শুধু তাদের ওপরই নয়, নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে সারা বিশ্বেই। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল, গম ও চিনি উৎপাদক ভারত। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ফসল উৎপাদন কমে গেলে এসব পণ্য রপ্তানিতে আরও কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে দেশটির সরকার।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতের আবহাওয়া বিভাগের (আইএমডি) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, এল নিনোর কারণে আগস্টে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। এটি সেপ্টেম্বরের বৃষ্টিপাতের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারত এ বছর অন্তত আট শতাংশ কম বৃষ্টিপাত নিয়ে জুন-সেপ্টেম্বরের বর্ষা মৌসুম শেষ করতে চলেছে। ২০১৫ সালের পর থেকে বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাতের রেকর্ড এটি। আট বছর আগের সেই সময়েও বৃষ্টিপাত কম হওয়ার পেছনে ভূমিকা ছিল এল নিনোর।

আরও পড়ুন>> চীনের পর জাপানেও উষ্ণতার রেকর্ড, চোখ রাঙাচ্ছে এল নিনো

Advertisement

এ বিষয়ে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এল নিনো কী?পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের পেরু-ইকুয়েডর উপকূল বরাবর কোনো কোনো বছর এক প্রকার দক্ষিণমুখী উষ্ণ সামুদ্রিক স্রোতের প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। এটিকে এল নিনো বলা হয়ে থাকে। এর বিপরীত দশার নাম লা নিনা। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে শীতল সামুদ্রিক স্রোত তৈরি হয়।

সাধারত চার থেকে ১০ বছর পরপর এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এটি সৃষ্টি হলে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং কোনো কোনো এলাকায় খরাও দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন>> ২০২৪ হতে পারে সবচেয়ে উষ্ণ বছর

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো সৃষ্টি হতে শুরু করবে। সবশেষ ২০১৮-১৯ সালে দেখা দিয়েছিল এই পরিস্থিতি।

ভারতে এল নিনোর প্রভাবসেপ্টেম্বরের বৃষ্টিপাত বিভিন্ন শীতকালীন ফসল, যেমন গম, রেপসিড এবং ছোলা চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মুম্বাই-ভিত্তিক একটি গ্লোবাল ট্রেডিং হাউসের একজন ডিলার বলেন, আগস্টে স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে মাটির আর্দ্রতা কমে গেছে। এখন সেপ্টেম্বরে ভালো বৃষ্টিপাত দরকার। অন্যথায় শীতকালীন ফসল চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রয়টার্সের খবর অনুসারে, বৃষ্টিপাতের অভাবে ভারত এরই মধ্যে চাল রপ্তানি সীমিত করেছে, পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, ডাল রপ্তানিতে বিশেষ অনুমতি বাধ্যতামূলক করেছে। একই কারণে হয়তো ভবিষ্যতে চিনি রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে নয়াদিল্লি।

আরও পড়ুন>> শুকিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি জলাশয়

কেএএ/