রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার পদার্থ বিজ্ঞান প্রথমপত্রের প্রশ্নে ভুলের ছড়াছড়ি। প্রশ্নপ্রত্রে মোট আটটি প্রশ্ন ছিল। তার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে ভুল পাওয়া গেছে। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই প্রশ্নে ভুল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের অনুষ্ঠিত পদার্থ বিজ্ঞান প্রথমপত্রের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রশ্নপত্রের লিখিত অংশের ৫ নম্বর উদ্দীপকে সিগমার মান শূন্য দশমিক ৫৭ দেওয়া আছে। কিন্তু বাস্তবে সিগমার মান -১ থেকে শূন্য দশমিক ৫ এর মধ্যেই হয়। অর্থাৎ উদ্দীপকের তথ্য বাস্তবসম্মত নয়। এছাড়া ৩ এর গ নম্বর প্রশ্নে কাজের পরিমাণ বের করতে বলা হলেও উচ্চতা দেওয়া হয়নি।
আর ৭ এর গ নম্বর প্রশ্ন সমাধানের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই, কোনো মাধ্যমেই পানির বেগ নেই। ৮ এর ঘ নম্বর প্রশ্নে কেন্দ্রমুখী বল জানতে চাওয়া হয়, যা উদ্দীপকে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আর ৬ এর ঘ নম্বর প্রশ্নেও ভুল ছিল।
Advertisement
রাজশাহী থেকে পরিচালিত ‘আর এ ফিজিক্স’ নামে একটি কোচিং সেন্টার তাদের ফেসবুকে পেজে লিখেছে, ‘রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে আজকে বেশি না আটটার মধ্যে মাত্র ছয়টা প্রশ্ন ভুল ছিল। সলভ দিয়ে দিলাম, অত না মিলিয়ে দ্বিতীয়পত্রের জন্য প্রস্তুতি নাও।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের পদার্থ বিজ্ঞান প্রথমপত্রের প্রশ্নে বেশকিছু ভুল ছিল। এখন ওই ভুলগুলোর কীভাবে মার্কিং করা হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ভুল প্রশ্নের জন্য ফলাফল খারাপ হলে এর দায়ভার কে নেবে?
প্রশ্নপত্রে ভুল ছিল কি না সে বিষয়ে জানতে রাজশাহী কলেজের চারজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছেন জাগো নিউজের প্রতিবেদক। তারা সবাই প্রশ্নে ভুল থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও নাম প্রকাশ করে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রথমে বলি প্রশ্নটা আমাদের তৈরি না। কারা প্রশ্ন করেছে পরীক্ষার পরে এটি খুঁজে বের করে করার চেষ্টা করবো। আর পরীক্ষার্থীদের যে সুবিধা সেটা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করবো। ভুল হলে নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়, সেটাই হবে। তবে আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম এমন ভুল হয়েছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখবো।
Advertisement
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আমি তো ঢাকাতে আছি। যেখানে প্রশ্ন হয় সেখানে পরীক্ষা হয় না। এটি আমাদের বোর্ডের প্রশ্ন নয়। অন্য বোর্ডের প্রশ্ন। এটি খুঁজে বের করা হবে, কোন বোর্ড থেকে এই প্রশ্নটি এসেছে। তারপরে প্রশ্ন সেটারদের বের করা হবে এবং তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, আমরা এটি আন্তঃবোর্ডের সভায় তুলবো। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। বারবার বলার পরও তারা এটি করে থাকে। পরবর্তী সময়ে এগুলো নিয়ে আমরা দেখবো। শিক্ষার্থীদের বিষয়ে এটি নিয়ে আলোচনা করে ফলাফলের বিষয়ে দেখা হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সবসময় ভাবি। এটির সুন্দর ফলাফল আসবে সে আশা করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ তানবিরুল আলম বলেন, আমাদের দেশে প্রশ্নপত্রে ভুল ক্রমেই বাড়ছে। এটি একটি ধরন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছরই কোন না কোনো ভুল থাকছে। ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া নিঃসন্দেহে মারাত্মক ক্ষতি। প্রশ্ন প্রণয়নকারীদের আরও সচেতন হতে হবে। তা না হলে এমন ভুল চলতে থাকবে। আর ভুল থেকে শিক্ষার্থীদের ক্ষতিও হবে। অভিভাবকরাও হতাশায় ভুগবেন।
সাখাওয়াত হোসেন/এমআরআর/জিকেএস