আইন-আদালত

বিচারাধীন বিষয়ে বিবৃতি বিচার বিভাগকে অপমানের শামিল: আইনমন্ত্রী

বিচারাধীন মামলা নিয়ে কোনো স্টেটমেন্ট বা বিবৃতি দেওয়া বিচার বিভাগকে অপমান করার শামিল বলে উল্লেখ করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।

Advertisement

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এখানে দুঃখের বিষয় হলো- আজকে একটা সংস্কৃতি ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেটা হচ্ছে বিচারাধীন মামলার ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়া এবং মামলার মেরিট বিবেচনা ছাড়াই মন্তব্য করা। আমাদের মনে রাখতে হবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বিচার বিভাগ স্বাধীন। এই স্বাধীনতাকে কার্যকর করার জন্য আমরা সবাই কাজ ও চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন: মুনাফার টাকার দাবিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা, সমন জারি

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিশ্বের দেড় শতাধিক নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ীও রয়েছেন। গত সোমবার (২৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে এ বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

Advertisement

এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে আইনমন্ত্রী বলেন, কিন্তু কিছু কিছু ব্যক্তি আছেন, যারা তাদের সঙ্গীয় কাউকে বিচার করতে গেলেই স্টেটমেন্ট দেওয়া শুরু করেন। এটা বিচার বিভাগকে অপমান করার শামিল। সবার মনে রাখতে হবে আমরা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নই। সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার নিমিত্তে এ ধরনের স্টেটমেন্ট দেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য আমি অনুরোধ করছি।

আরও পড়ুন: এতই আত্মবিশ্বাস থাকলে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়ান কেন

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে মেডিয়েশন সেন্টার ও নব উদ্ভাবিত ৯টি কোর্ট প্রযুক্তি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সব সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সক্রিয় নির্দেশনায় বিচার বিভাগেও বিভিন্নমুখী ডিজিটালাইজেশন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়াকে আরও জনবান্ধব ও সহজীকরণ করতে তার আন্তরিক ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। আমরা প্রত্যাশা করি, স্মার্ট বাংলাদেশে বিচার বিভাগও একটি স্মার্ট বিচার বিভাগ হয়ে উঠবে।

Advertisement

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের বিচার ব্যবস্থায় গত কয়েক বছর ধরে ডিজিটালাইজেশনের সুবাতাস বইছে। বছর দুয়েক আগে উদ্বোধন করা হয়েছিলো ‘আমার ভাষা’ সফটওয়্যার। যার মাধ্যমে এরই মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সুপ্রিম কোর্টের রায় বাংলা ভাষায় অনুবাদ হচ্ছে। একই সময়ে চালু হয়েছিল ডিজিটাল আর্কাইভিং এবং ই-ফাইলিং; যাত্রা শুরু হয়েছিল জুডিসিয়াল ড্যাশবোর্ড, মাই কোর্ট অ্যাপ এবং অনলাইন কজলিস্টের মতো প্রযুক্তিরও। আজ সে ডিজিটালাইজেশনের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত হলো। উদ্বোধন হলো বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মেডিয়েশন সেন্টার ও সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক উদ্ভাবিত ৯টি কোর্ট প্রযুক্তি।

আরও পড়ুন: ইউনূসের পক্ষে বিশ্বনেতাদের বিবৃতি তদন্তে প্রভাব ফেলবে না

আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় করোনা মহামারিকালে মানুষের ন্যায়বিচার নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এবং কারাগারে বন্দির সংখ্যাধিক্য বিবেচনা করে আদালত কর্তৃক ‘তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ জারি করা হয়। যা পরবর্তীকালে সংসদে পাস হয়। এ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করা হয়, যা দেশের বিচারব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সরকার বিশ্বাস করে, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির অধিকার অব্যাহত রাখতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচার বিভাগের আধুনিকায়ন অপরিহার্য।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি নাইমা হায়দার, অ্যাটর্নি জেনারেল এম.এ আমিন উদ্দিন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সামছুল আরেফিন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির প্রমুখ।

আরও পড়ুন: ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দেশের বিচার ব্যবস্থায় অযাচিত হস্তক্ষেপ

এফএইচ/এমকেআর