স্বাস্থ্য

মুগদা হাসপাতালে টিকিট কাটার যুদ্ধ, ভোগান্তি

সকাল ৮টা। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় অনেক রোগীর ভিড়। বহির্বিভাগে চিকিৎসক দেখাতে টিকিটের জন্য লাইন ধরেছেন তারা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ হতে থাকে লাইন। শেষপর্যন্ত ৮টা ১০ মিনিটে শুরু হয় টিকিট দেওয়া। সেই সঙ্গে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি আর বাগবিতণ্ডা। কারণ রোগী নিয়ে লাইনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা কারওই পছন্দ নয়। তাই অনেকে লাইন ভেঙে টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন। ফলে এ নিয়ে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে অন্যদের বাগবিতণ্ডা। এ যেন এক যুদ্ধ।

Advertisement

অপেক্ষারতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিরক্ত হলেও তারা মেনে নিয়েছেন সরকারি হাসপাতালের এই ভোগান্তির কথা। কম খরচে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য এ যুদ্ধে জিততে চান তারা। এদিকে টিকিট দেওয়া শুরু হলেও চিকিৎসকরা রোগী দেখা শুরু করেন সকাল ৮টার পর।

আরও পড়ুন: প্রতিবছর ভারতে চিকিৎসা নেন প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সকালে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। মূলত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এ হাসপাতালে রোগীর চাপ একটু বেশি। শুরু থেকেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুরোগী ভর্তি ছিল এখানে। প্রতিদিন পাঁচ-ছয় শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে বর্তমানে কিছুটা চাপ কমেছে ডেঙ্গুরোগীর। কিন্তু অন্য রোগীর চাপ রয়েছে ঠিকই।

Advertisement

৫০০ বেডের মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে রোগী ভর্তি ১১শ’র বেশি। বেড খালি না থাকায় অনেক রোগীকে হাসপাতালের ওয়ার্ড ও রুমের বাইরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। এরমধ্যে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে ওয়ার্ডগুলোতে নাশতা দিতে দেখা যায়। সকালের নাশতা হিসেবে চার পিস পাউরুটি, এক চামচ জেলি সঙ্গে কলা আর একটা সিদ্ধ ডিম রয়েছে।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গুরোগীর চাপে বেসামাল মুগদা হাসপাতাল

১০ তলার পুরুষদের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গেলে কথা হয় ৭০ বছর বয়সী বাচ্চু মোল্লার সঙ্গে। তিনি এসেছেন দক্ষিণ বনশ্রী থেকে। আগের যক্ষ্মা থাকা আর সঙ্গে নতুন করে ডেঙ্গু। চারদিন ধরে জ্বর। ফলে তার অবস্থা জটিল। প্রথম দিকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে বিছানায় পড়ে যাওয়ায় তাকে নিয়ে আসা হয় মুগদা হাসপাতালে। তার শরীর শক্ত হয়ে গেছে, পেটও গেছে ফুলে।

বাচ্চু মোল্লা জানান, রাতে চিকিৎসক এসে দেখে গেছেন। শ্বাসের সমস্যার কারণে তাকে নেবুলাইজার দিয়েছেন।

Advertisement

বাচ্চু মোল্লার সঙ্গে হাসপাতালে তার মেয়ে রোজিনা। তিনি বলেন, নার্সরা যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। তবে ওয়ার্ডবয়রা যেন টাকা ছাড়া কোনো কিছু ছুঁতে নারাজ। নার্সরা সহযোগিতা করতে বললেও তাদের মাঝে হাত বাড়ানোর আগ্রহ নেই।

আরও পড়ুন: শুধু হাসপাতাল আর মেশিন কিনলেই চিকিৎসা হবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

তিনি বলেন, আমাদের রোগীর পুরো শরীর শক্ত হয়ে এসেছে। তাকে বসানো যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে কেউ সহযোগিতা করতে আসেনি।

এদিকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) সামনে দেখা গেছে রোগীর স্বজনদের ভিড়। তাদের সবার মুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কেউ সন্তান, কেউ বা তার স্ত্রী অথবা বাবা-মায়ের অপেক্ষায়। যখনই কোনো প্রয়োজন হচ্ছে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজনদের একটা ভিজিটর পাস দেওয়া হয়। এই পাস ছাড়া বিকেল ৫টার পর তাদের হাসপাতালে অবস্থান করতে দেওয়া হয় না। তবে পাস পেতে গুনতে হয় ৫০ টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা জানান, এটি হাসপাতালের ফান্ডে যায়।

আরও পড়ুন: মুগদা মেডিকেলে গিয়ে হামলার শিকার দুই সাংবাদিক

ভর্তি থাকা রোগীরা জানান, এখানে চিকিৎসা ভালো। তবে ইমার্জেন্সি বা ক্রিটিকাল রোগীর জন্য আলাদা দেখভালের বিষয় নেই। অন্য রোগীদের মতোই নিয়ম করে সকালে একবার চিকিৎসকরা দেখে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত এক চিকিৎসক বলেন, রাতে দিনের মতো চিকিৎসক থাকেন না। এখানে অনেক রোগী। সবাইকে সেবা দিতে গিয়ে একেবারে সুন্দরভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবুও আমরা চেষ্টা করি সবাই যাতে সুচিকিৎসা পান।

এএএম/জেডএইচ/এএসএম