অনলাইন অ্যাপ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জের (এমটিএফই) মাধ্যমে বিনিয়োগের বিষয়ে সরকার কিছুই জানতো না বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সচিবালয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণা এবং অবৈধ ও যাচাইবিহীন আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান মন্ত্রী।
সাইবার জগৎ নিয়ে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন, নির্বাচন সামনে রেখে সেটা অনেক বেশি কি না— প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, চ্যালেঞ্জটা হঠাৎ করে আজকেই জেগে উঠেছে, এটি মনে করার কোনো কারণ নেই। আমরা যখন থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছি, যখন থেকে আমাদের জীবনধারা ডিজিটাল করার চেষ্টা করেছি, সেই সময় থেকেই আমাকে ডিজিটাল জগতে বসবাস করার জন্য যে সক্ষমতা অর্জন করা দরকার, যেই নিরাপত্তা দরকার ও যে ধরনের প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেগুলো আমাদের নিয়ে আসতে হয়েছে।
আরও পড়ুন>> ৮ লাখ মানুষকে ‘পথের ফকির’ বানালো এমটিএফই
Advertisement
সে কারণে আপনারা লক্ষ্য করেছেন, আমরা কোনোকালে খোঁজও রাখতাম না, কার ফেসবুকে, ইউটিউব কিংবা টিকটকে কী আছে। এখন আমরা সবস্তর থেকে প্রতিটি বিষয় মনিটরিং করে সে সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণে যা যা করা দরকার সবগুলোই করি। সেক্ষেত্রে লক্ষ্য করেছি, যখন শুরু করেছিলাম, তখন যে জ্ঞানের অবস্থা ছিল, এখন তার তুলনায় অনেকাংশে ভালো অবস্থায় আছি। প্রযুক্তিগত দিক থেকেও আমরা সক্ষম হয়েছি।
এমটিএফই’র মাধ্যমে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, একটি বিষয় স্পষ্ট যে ক্রিপটোকারেন্সি বাংলাদেশে বৈধ না। কেউ যদি এটিতে লেনদেন করে থাকেন, সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ।
তিনি বলেন, যখনই কারেন্সির (মুদ্রা) প্রশ্ন আসে, এটির সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কারেন্সির আসা-যাওয়া থেকে শুরু করে লেনদেনসহ যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে। তবে, আমরা যারা ডিজিটাল দুনিয়াতে কাজ করি, এটা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে।
আরও পড়ুন>> এমটিএফই প্রতারণার তথ্য দিতে আহ্বান সিআইডির
Advertisement
ক্রিপটোকারেন্সি আসার পর থেকে অনেকেই প্রশ্ন করেন, আপনারা কী করেছেন? এটির বিষয়ে একটু বোঝার চেষ্টা করেন, ডিজিটাল দুনিয়াতে একটা অ্যাপ চলা, এটা এমন কিছু ঘটনা না যে আমি চট করে অ্যাপ চলছে, আমি তাতে সব মনোযোগ দিয়ে বসে থাকবো। আপনারা জেনে অবাক হবেন, গতকাল বা আগের দিন পুলিশের কাছে কিছু অভিযোগ এসেছে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত তো কোনো অভিযোগ আসেনি। যে কোনো বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার পড়লে প্রথমে থাকতে হবে অভিযোগ, তারপর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্ন আসে।
একটা চ্যালেঞ্জ হলো— এটি আমাদের ফিজিক্যাল (বাস্তব) দুনিয়ার মতো না যে, অপরাধ হচ্ছে, সেই অপরাধ কেবল আমার সীমার মধ্যেই হচ্ছে এবং ভৌগোলিকভাবে আমরা চিহ্নিত করতে পারছি। আপনা যে অপরাধের কথা বলেন— তা বাংলাদেশের ভেতর থেকে হয়নি। আবার বাংলাদেশের লোকজন তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, অ্যাপটি যদি দুবাইতেও চলে থাকে, কিন্তু যারা টাকা দিয়েছে বা অংশগ্রহণ করেছে, তারা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য জায়গা থেকে করেছে। এটা তো ডিজিটাল দুনিয়ার স্বাভাবিক নিয়ম। কে কোথায় আছেন, এটা সম্পর্কিত বিষয় না। লেনদেন করা দরকার, তারা তা করতে পারছে।
আরও পড়ুন>> এমটিএফই অ্যাপে প্রতারণা, জয়পুরহাটে থানায় অভিযোগ
সেদিক থেকে আমরা যেটা বুঝি, এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ, তাদের কাছে অভিযোগ এসেছে বলে আমরা জানি। সে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করছে। কিছু গ্রেফতার হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। এ সম্পর্কে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার...আমরা জেনেছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ব্যবস্থা নিয়েছে।
বলেছেন অভিযোগ পাননি বলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। কেউ কী অনলাইন ব্যবস্থায় বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করলে সেটি কী সরকার দেখবে না- জানতে চাইলে বলেন, জানলে ব্যবস্থা নেবে।
আপনারা কী জানতেন না। তাহলে নজরদারি কোথায়? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে উল্টো প্রশ্ন করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আপনারা এত মিডিয়া কোন মিডিয়া জানতেন বলেন তো? আপনারা জেনেছেন যখন পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে।
আরও পড়ুন>> রাজশাহীতে এমটিএফই প্রতারণায় দুজন গ্রেফতার
তিনি বলেন, লেনেদেনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলতে পারবে। টাকা লেনদেন হচ্ছে আমার কাছে মনে হয়েছে এ বিষয়ে কিছু সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সেখানে যদি গ্যাপটা পূরণ করে দেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার আর যাতে না ঘটে তেমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যাবে।
পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী অনলাইনের মাধ্যমে অবৈধ আর্থিক লেনদেন ও প্রতারণা থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংককে লিড এজেন্সি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, ডিএসএ এবং বিটিআরসিকে নিয়ে উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
তিনি বলেন, অংশীজনের পরামর্শের ভিত্তিতে একটি কার্যকর নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করা সম্ভব। সভায় অংশীজনরা তাদের মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেন। এটিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ফলপ্রসূ অবদান রাখবে। আমরা সবার আলোচনা থেকে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি।
সভায় অবৈধ আর্থিক লেনদেন বন্ধে এমএফএস নিবন্ধন সঠিক পদ্ধতি মেনে করা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাধারণ মানুষকে সরকার অনুমোদিত ব্যাংকিং ( অনলাইনসহ) স্কিম ছাড়া লোভনীয় অফার থেকে বিরত থাকার জন্য জনসচেতনতা তৈরি, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরে স্থাপিত সিটিডিআর সিস্টেমের অ্যাপস বন্ধের লক্ষ্যে সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ, অবৈধ আর্থিক লেনদেন বন্ধে প্রয়োজনীয় আইন বা নীতিমালা প্রণয়ন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনলাইন মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং এবং অনলাইনে লেনদেন বন্ধের জন্য ব্যবহৃত অবৈধ দেশি-বিদেশি ওয়েব সাইট, অ্যাপস ও লিংক বন্ধের জন্য বিটিআরসিতে তালিকা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ।
আরএমএম/এমএএইচ/এএসএম