ধর্ম

বর্ণ বৈষম্য রোধে ইসলাম

আজ আন্তর্জাতিক বর্ণ বৈষম্য বিলোপ দিবস। বিশ্বব্যাপী বর্ণ বৈষম্য মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে করে তুলছে বিভীষিকাময়। বাড়ছে সাদা-কালোয় মারামারি হানাহানি। ছড়িয়ে পড়ছে অশান্তি আর বিশৃংখলা। ইসলাম বর্ণ বৈষম্য রোধে দিয়েছে সঠিক দিক নির্দেশনা। যার সংক্ষিপ্ত নির্দেশনা তুলে ধরা হলো-মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তিনি মানুষের মাঝে রাখেননি কোনো বৈষম্য। ইসলাম মানব জীবনের এক অনুপম জীবনাদর্শ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনের সকল অধিকার সমানভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। যেখানে সাদা-কালো, উচু-নিচুর মতো কোনো বর্ণ বৈষম্যের স্থান নেই। সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে মানব জাতি অতি মর্যাদাবান।এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৭০)কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আমি তো সব মানুষকে সৃষ্টি করেছি সু-গঠন ও অতি সুন্দরতম আকৃতিতে (সুরা ত্বীন : আয়াত ৪) আল্লাহ তাআলার এ ঘোষণার কোথাও বর্ণ বৈষম্যের কথা নেই। বরং মানুষকে সমমর্যাদার অধিকারী করে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে প্রেরণ কথাই ওঠে এসেছে।অতীব দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বর্তমান বিশ্বে উন্নত জাতি গঠনের দাবিদার জ্ঞান পাপীরাই মানুষের মাঝে সাদা-কালোর বৈষম্য, ধনী-গরীব তথাকথিত শিক্ষিত ও অশিক্ষিতের পার্থক্য করে ব্যক্তি-সমাজ তথা বিশ্বব্যাপী এক ভয়াবহ অস্থিতিশীল পরিবেশ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। যা সমগ্র বিশ্বের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে।অথচ আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আরাফাতের ময়দানে অমর কালজয়ী ভাষণে বিশ্ববাসীকে এই জঘন্য ব্যাধি বর্ণ-বৈষম্যের ব্যাপারে সতর্ক করে সর্বজনীন মানবাধিকারের কথা ঘোষণা করে বলেন-‘হে মানবমণ্ডলি! মনে রেখো! প্রত্যেক মুসলমান একে অন্যের ভাই এবং সব মুসলমান ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। কেউ কারো চেয়ে ছোট নও, কারো চেয়ে বড়ও নও। আল্লাহর চোখে সবাই সমান।নারীজাতির কথা ভুলে যেয়ো না। নারীর ওপর পুরুষের যেরূপ অধিকার আছে, পুরুষের ওপর নারীরও সেরূপ অধিকার আছে। তাদের প্রতি অত্যাচার কোরো না। মনে রেখো, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা তাদেরকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছ।হে মুসলমানগণ! হুঁশিয়ার! নেতার আদেশ কখনো লঙ্ঘন করো না। যদি কোনো ক্রীতদাসকেও তোমাদের নেতা নির্বাচন করা হয় এবং সে যদি আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালনা করে, তবে তার আদেশ মেনে চলবে।দাস-দাসীদের প্রতি সদা সদ্ব্যবহার করবে। তাদের ওপর কোনো অত্যাচার করবে না। অতপর তিনি দাস-দাসী ও শ্রমিকের অধিকার ঘোষণা করে বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলি! তোমরা নিজেরা যা ভক্ষণ করবে, তোমাদের অধিনস্থ গোলাম বা দাস-দাসীদেরকেও তা খেতে দেবে। যা তোমরা পরিধান করবে, তা তাদেরও পরিধান করাবে। ভুলে যেয়ো না, তারাও তোমাদের মতো মানুষ।বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত ভয়াবহ বর্ণ বৈষম্যকে রোধ করতে হলে বিশ্বনবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অ সাল্লামের আদর্শের বাস্তবায়ন একন্তভাবে জরুরি। বর্ণ বৈষম্য রোধে বিশ্বনবীর আদর্শ বাস্তবায়ন মুসলিম উম্মাহ ঈমানের দাবি।সুতরাং উম্মাতে মুহাম্মাদিকে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।এমএমএস/এবিএস

Advertisement