চার বছর পর আন্তর্জাতিক হকি খেললো বাংলাদেশের মেয়েরা। স্টিক হাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ছিল একটা লম্বা বিরতির পর মাঠে ফেরা জাতীয় নারী হকি দলের খেলোয়াড়দের। তাও নতুন ফরম্যাটের খেলায়। ফাইভ-এ সাইড হকির কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না বাংলাদেশের মেয়েদের।
Advertisement
বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে না পারলেও ওমানের সালালায় অনুষ্ঠিত কোয়ালিফাই রাউন্ডে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো খেলা উপহার দিয়েছে ২০১৯ সালের পর প্রথম বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে খেলতে নামা মেয়েরা। ৬ ম্যাচের তিনটি জিতে ও তিনটি হেরে ১০ দেশের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ হয়েছে অষ্টম।
কয়েকজন খেলোয়াড় পারফরম্যান্সের আলো ছড়িয়েছেন এই টুর্নামেন্টে। তাদের মধ্যে অন্যতম অর্পিতা পাল। ৬ ম্যাচে ২০ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বাধিক গোলদাতার পুরস্কার জিতেছেন দিনাজপুরের এই কিশোরী। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অর্পিতা হ্যাটট্রিক করেছেন ৫টি। এর মধ্যে এক ম্যাচে আছে ৬ গোল। দারুণ এক টুর্নামেন্ট শেষ করে ওমান থেকে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন উদীয়মান এই ফরোয়ার্ড।
জাগো নিউজ: ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাই হকিতে আপনি ২০ গোল করে সর্বাধীক গোলদাতার পুরস্কার জিতেছেন। কেমন অনুভূতি আপনার?
Advertisement
অর্পিতা পাল: অনুভূতিতো অসাধারণ। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সর্বাধীক গোলদাতার পুরস্কার জেতা দারুণ এক অর্জন।
জাগো নিউজ: আপনি তো ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে খেলেছিলেন। তখন কোন কোনো গোল ছিল?
অর্পিতা পাল: সিঙ্গাপুরে আমার গোল ছিল না। এই টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম গোল করি।
জাগো নিউজ: নতুন ফরম্যাটের খেলা। আপনি কি আগে ভেবেছিলেন এত গোল করে পুরস্কার জিততে পারবেন?
Advertisement
অর্পিতা পাল: বিকেএসপিতে নিয়মিত অনুশীলন করেছি। প্রত্যাশা ছিল গোল পাবো। তবে কখনো ভাবিনি এতো (২০) গোল করতে পারবো।
জাগো নিউজ: আপনারা কয় ভাই-বোন? পরিবারের অন্য কেউ খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত?
অর্পিতা পাল: আমরা দুই ভাই-বোন। ভাই বড়। সে দিনাজপুরে পড়াশুনা করছে। আমাদের পরিবারে আমিই খেলাধুলা করি।
জাগো নিউজ: হকিতে কিভাবে আসলেন?
অর্পিতা পাল: দিনাজপুরে বিকেএসপির ট্রায়াল হয়েছিল। আমি অ্যাথলেটিকসে ট্রায়াল দিতে গিয়েছিলাম। বিকেএসপির আলমগীর স্যার আমাকে ছেলেদের সঙ্গে হকি ম্যাচ খেলিয়েছিলেন। খেলা দেখে তিনি আমাকে হকি ক্যাম্পে পাঠান। তার আগে আমি স্কুলে হকি খেলেছি। আন্তঃস্কুল টুর্নামেন্ট খেলেছি।
জাগো নিউজ: আপনার বাবা-মা কি করেন?
অর্পিতা পাল: আমার মা গৃহিণী। বাবা মিস্ত্রী। কখনো রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন, কখনো কাঠমিস্ত্রীর।
জাগো নিউজ: খেলাধুলার জন্য আপনাকে তো তাহলে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে তাই না?
অর্পিতা পাল: হ্যাঁ। জেলার হকি কোচ মতিউর রহমান মতি স্যার নানাভাবে আমাকে সাহায্য করেছেন। বিকেএসপিতে পড়াশুনার বিষয়েও তার সহযোগিতা আছে। খেলোয়াড় হওয়ার পেছনে এই স্যারের অবদান অনেক।
জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যত লক্ষ্য কী?
অর্পিতা পাল: জাতীয় দলে টিকে থাকতে চাই। আরো বেশি বেশি গোল করতে চাই। দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে চাই।
জাগো নিউজ: আপনি পুরষ্কার জিতেছেন। বাবা-মা কেমন খুশি হয়েছেন?
অর্পিতা পাল: আমি প্রথম ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার পর বাবা-মাকে জানিয়েছিলাম। তারা বেশি খুশি হয়েছিলেন। মা বলছিলেন এতো খেলোয়াড়ের মধ্যে তুমি সেরা হয়েছো। কবে দেশে ফিরবা, ফিরলে বাড়িতেও আসবা।
জাগো নিউজ: বাবা-মায়ের জন্য কি উপহার আনবেন?
অর্পিতা পাল: বাবা ও মায়ের পাশাপাশি মতিউর রহমান মতি স্যারের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী উপহার নিয়ে আসবো।
জাগো নিউজ: আগে কখনো ফাইভ-এ সাইড খেলেননি। নতুন এ ফরম্যাট খেললেন প্রথম। কেমন লাগলো?
অর্পিতা পাল: অনেক মজার। যে বুঝে উঠতে পারবে এবং গুছিয়ে খেলতে পারবে সে ভালো করবে।
জাগো নিউজ: ধন্যবাদ।
অর্পিতা পাল: আপনাকেও ধন্যবাদ।
আরআই/আইএইচএস/