বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০-৩২ লাখ ডেলিভারি হয়। এরমধ্যে ছয় লাখ শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে। যা মোট জন্মের ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ। অপরিণত বা কম ওজনের জন্ম নেওয়া শিশু নানা জটিলতার শিকার হন। আর এই শিশুদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম থাকে।
Advertisement
এছাড়া বিশ্বে বছরে তিন কোটি ৫০ লাখ শিশু অপরিণত বা কম ওজনের হয়ে জন্ম নেয়। ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, ২০ লাখ ৪০ হাজার নতুন জন্ম নেওয়া শিশু মৃত্যুর অর্ধেকই (৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ) ছিল অপরিণত। এছাড়া অপরিণত জন্ম নেওয়া শিশুদের মাঝে যারা জীবিত থাকে তারাও নানা স্বাস্থ্য জটিলতা নিয়ে বেচে থাকে।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় উপস্থাপন করা হয়।
আরও পড়ুন: ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর পর চলে গেলেন আঁখিও
Advertisement
অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ফিনল্যান্ডের টাম্পেইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাম্পেইরে সেন্টার ফর চাইল্ড, অ্যাডোলোসেন্ট এবং দ্য ল্যানসেট এসভিএন সিরিজের প্রধান লেখক ড. পার অ্যাশন, অবস্টেট্রিকাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি প্রফেসর সামিনা চৌধুরী, বাংলাদেশ পেরিনেটাল সোসাইটির (বিপিএস) মহাসচিব এবং ন্যাশনাল টেকনিকাল ওয়ার্কিং কমিটি-নিউবর্ন হেলথের (এনটিডব্লিউসি-এনবিএইচ) সদস্য প্রফেসর মো. আব্দুল মান্নান, আইসিডিডিআরবির মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের বিজ্ঞানী এবং এনটিডব্লিউসি-এনবিএইচের সদস্য ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান।
অনুষ্ঠানে ল্যানসেটের প্রকাশিতব্য সিরিজের চারটি গবেষণাপত্রের সারমর্ম উপস্থাপন করেন ডা. এহসান।
তিনি জানান, এই সিরিজে মৃত জন্ম এবং অপরিণত বা কম ওজনের শিশুর ঘটনা রোধে গর্ভাবস্থায় আটটি সহজ এবং সাশ্রয়ী ইন্টারভেনশনের পরামর্শ দেয়। মায়েদের ওপর এই আটটি বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া গেলে বছরে আনুমানিক পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার মৃত জন্ম এবং ৫২ লাখ অপরিণত বা কম ওজনের শিশু জন্মের ঘটনা প্রতিরোধ করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্র লাভবান হতে পারে।
আরও পড়ুন: নরমাল ডেলিভারির নামে নার্সদের টানাটানিতে নবজাতকের মৃত্যু
Advertisement
আটটি হস্তক্ষেপের মধ্যে রয়েছে একাধিক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সম্পূরক, সুষম প্রোটিন সম্পূরক, অ্যাসপিরিন, সিফিলিস চিকিৎসা, ধূমপান ত্যাগের শিক্ষা, গর্ভাবস্থায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ, উপসর্গহীন ব্যাকটেরিয়ার চিকিৎসা এবং ভাজাইনাল প্রোজেস্টেরন সাপ্লিমেন্ট, অপরিণত জন্মের জটিলতা প্রশমিত করার জন্য দুটি প্রমাণিত কৌশল- প্রসবপূর্ব কর্টিকোস্টেরয়েড এবং বিলম্বিত কর্ড ক্ল্যাম্পিং।
তিনি বলেন, এই সম্মিলিত হস্তক্ষেপগুলোর মাধ্যমে চার লাখ ৭ হাজার ৬০০ নবজাতকের মৃত্যু প্রতিরোধ করার সম্ভাব্যতা তৈরি হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে এই ব্যবস্থা বাস্তবায়নে আনুমানিক খরচ হবে এক দশমিক এক বিলিয়ন ডলার।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ল্যানসেট সিরিজের মধ্যে একটি পৃথক বিশ্লেষণ স্মল ভালনারেবল নিউরনস (এসভিএন) সমস্যাকে বিশ্লেষণ করেছে। এই শব্দটির মাধ্যমে অপরিণত শিশু বা কম ওজনের শিশু, এবং কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২০ সালে জন্ম নেওয়া ১৩ কোটি ৫০ লাখ শিশুর মধ্যে, প্রায় তিন কোটি ৫৩ লাখ শিশু এসভিএন বিভাগে পড়ে।
আরও পড়ুন: দেশে প্রতিদিন ৪৭ নবজাতকের মৃত্যু
অপরিণত জন্ম এবং কম ওজনে জন্ম নেওয়া শিশুদের যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও এর অগ্রগতি অপর্যাপ্ত বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
ল্যানসেট সিরিজের প্রধান লেখক ডা. পার অ্যাশন বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে এসভিএন কমানোর লক্ষ্যে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি এবং লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও, বিশ্বের প্রতি চারজন শিশুর একজন খুব ছোট বা তাড়াতাড়ি জন্মগ্রহণ করে।
এএএম/জেডএইচ/এমএস