সর্বজনীন পেনশন স্কিমে মুনাফা উত্তোলনে ঘুস-বাণিজ্যের কোনো স্থান থাকবে না। এর সব কার্যক্রম হবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অনলাইনে। মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিলের এমসিসিআই কার্যালয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে এক আলোচনায় এ কথা জানান বক্তারা। আলোচনার আয়োজন করে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। এসময় সরকারি কর্মকর্তা, শিল্প উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
Advertisement
আলোচনায় এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম জনমানুষকে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বলয়ে অন্তর্ভুক্তি করার কার্যকরী উদ্যোগ। এতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সব মানুষের জন্য ‘প্রগতি’, ‘সুরক্ষা’, ‘সমতা’ এবং ‘প্রবাসী’ নামে ৪টি প্যাকেজের মাধ্যমে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে এ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হবে। ‘সমতা’ স্কিমের আওতায় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ শতাংশ চাঁদা সহায়তা ইতিবাচক দিক।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদার হার কত?
মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, সর্বজনীন পেনশনের আওতায় চারটি স্কিম রয়েছে। দেশের ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিক এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকরাও এ স্কিমে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। আপনি এখানে যা জমা দেবেন তা লাভসহ আপনাকে ফিরিয়ে দেবে সরকার। এখানে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেই, অনলাইনে সব হবে।
Advertisement
আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন কোম্পানির এইচ আর বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলেন, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দেখা যায় পেনশন উঠাতে যেয়ে জুতার তলা ক্ষয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গাতে ঘুস না দিলে টাকা পাওয়া যায় না।
আরও পড়ুন: যেসব কারণে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু
এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান বলেন, অন্যান্য পেনশনের মতো এটা না। এর সঙ্গে অন্যান্য পেনশনকে মেলানো যাবে না। এখানে ব্যাংকের মতো গ্রাহক টাকা রাখবেন, তার হিসাবে জমা হবে। এখানে কোনো মানুষের হাত থাকবে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেনদেন চলবে। ব্যক্তি তার হিসাব এক বছর পর পর দেখতে পারবেন, যে কতো টাকা লাভসহ জমা হলো। ৬০ বছর মেয়াদ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আসলসহ মুনাফা পেতে থাকবেন। তিনি না বেচে না থাকলে তার নমিনি পাবেন।
তিনি বলেন, আমরা কোনো টাকা অপচয় করবো না। সব টাকা বিনিয়োগ করা হবে, কেনা হবে ট্রেজারি বিল ও টেজারি বন্ড। এখানে লাভ থেকেই লাভ দেওয়া হবে। মেয়াদ শেষে যে টাকা ব্যক্তি পাবেন সেখানে কোনো কর আরোপ করা হবে না। ভারত-শ্রীলঙ্কায় কর থাকলেও আমাদের এখানে হবে কর মুক্ত।
Advertisement
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় যে চার স্কিম রয়েছে
প্রবাস স্কিম
বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক তফসিলে বর্ণিত চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় দিয়ে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। তিনি দেশে প্রত্যাবর্তনের পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করতে পারবেন। প্রয়োজনে, স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে মেয়াদপূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় পেনশন পাবেন।
প্রগতি স্কিম
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মচারীদের জন্য এ স্কিমে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মচারী এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দেবে। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ স্কিমে অংশ না নিলে, ওই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
সুরক্ষা স্কিম
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যেমন- কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, ইত্যাদি তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
সমতা স্কিম
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময় সময়, প্রকাশিত আয়সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী ব্যক্তিরা (যার বর্তমান আয় সীমা বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা) তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
ইএআর/জেডএইচ/এএসএম