জাতীয়

গৃহকর্ত্রীকে খুঁজতে কয়েকশ নম্বরে যোগাযোগ

রাজধানীর কলাবাগানের সেন্ট্রাল রোডে একটি বাসায় হেনা নামের ১০ বছর বয়সী এক শিশু গৃহকর্মী নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তিনদিন পার হয়ে গেলেও ওই বাসার গৃহকর্ত্রী সাথী আক্তার পারভীনকে (ডলি) খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ বলছে, গৃহকর্ত্রী সাথী আক্তার পারভীন পালানোর সময় কোনো মোবাইল ফোন সঙ্গে নেননি। তার গ্রামের বাড়ি পাবনাসহ প্রায় সব আত্মীয় স্বজনের বাসায় অভিযান চালিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তিনি যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন সেটি এখন পুলিশের কাছে রয়েছে। সেই মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে পুলিশ সম্ভাব্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নিহত গৃহকর্মী হেনার মরদেহ তার আত্মীয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বাবা ও মা দুজনই মৃত। এতিম হেনাকে তিন বছর আগে ঢাকায় নিয়ে আসেন গৃহকর্ত্রী সাথী।

গৃহকর্ত্রী সাথীকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাথী যে মোবাইল ব্যবহার করতেন সেটি আমাদের কাছে আছে। তার মোবাইলের সূত্র ধরে কয়েকশ নম্বরে যোগাযোগ করা হয়েছে। কেউ তার সন্ধান দিতে পারেননি। সাথীকে আইনের আওতায় আনতে তার ভাই-বোনদের মোবাইলও নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সাথী তার কোনো আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেননি। এছাড়া তার গ্রামের বাড়ি পাবনাসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় পুলিশ অভিযান চালিয়েও তাকে খুঁজে পায়নি।

Advertisement

তবে যেকোনোভাবে অভিযুক্ত গৃহকর্ত্রী সাথীকে খুঁজে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান ওসি সাইফুল ইসলাম।

আরও পড়ুন: কলাবাগানে নিহত গৃহকর্মীর পরিচয় মিলেছে, লাপাত্তা গৃহকত্রী

জানা যায়, কলাবাগানের সেন্ট্রাল রোডের ৭৭ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় ফ্ল্যাট ই-১ এর বাসিন্দা সাথী আক্তার পারভীন তার শিশু সন্তান আর ওই গৃহকর্মী হেনাকে নিয়ে বসবাস করতেন। গত তিন বছর ধরে নিহত গৃহকর্মী হেনা ওই বাসায় কাজ করছিল।

কলাবাগানের সেন্ট্রাল রোডের ওই বাসায় প্রায়ই হেনাকে নির্যাতন করা হতো বলে ধারণা পুলিশের। গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সকালেও হেনাকে নির্যাতন করা হয়। শিশুটি মারা যাওয়ার পর থেকে লাপাত্তা গৃহকর্ত্রী সাথী।

Advertisement

কলাবাগান থানার পুলিশ বলছে, শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রাতে ফোনে গৃহকর্মী হেনার মৃত্যুর প্রাথমিক তথ্য পায় তারা। এরপর রাত দেড়টার দিকে কলাবাগান সেন্ট্রাল রোডের ৭৭ নম্বর ভবনে গিয়ে বেশ কয়েকটি বাসায় খোঁজও নেয় পুলিশ। ওই ভবনটিতে ৪৪টি ফ্ল্যাট। মধ্যরাতে সব ফ্ল্যাটে খোঁজ নেওয়া বেগতিক বুঝে ফিরে আসে পুলিশ। পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি মালিক সোসাইটির লোকজন নিয়ে ভবনটির দ্বিতীয় তলা ই-১ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতর থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে গৃহকর্মী হেনার মরদেহ উদ্ধার করে তারা।

প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর শনিবার (২৬ আগস্ট) সকালে মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহালে পুলিশ দেখতে পায়, শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মুখে ফেনা ও শরীর ফুলে যায় হেনার। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় মরদেহ উদ্ধারের ৩৬ ঘণ্টা পর নির্যাতনে শিশু গৃহকর্মী হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মামলাটির বাদী এসআই বাবুল হোসেন। মামলার আসামি সাথী আক্তার পারভীন (ডলি) ঘটনার পর থেকে পলাতক।

টিটি/এমএইচআর/জেআইএম