দেশজুড়ে

শেরপুরের শত বছরের ঐতিহ্য ছানার পায়েস

রাজধানী বা দেশের অন্য কোথাও থেকে শেরপুরে ঘুরতে গিয়ে শেরপুরের ছানার পায়েস খাননি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। নিউমার্কেট মোড়ের অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডার বা চারু সুইটসের ছানার পায়েস না খেলে শেরপুর ভ্রমণ যেন পরিপূর্ণ হয় না। দিনদিন এ ছানার পায়েসের কদর বাড়ছে মিষ্টান্নপ্রেমীদের কাছে। শহরের গণ্ডি পেরিয়ে ছানার পায়েসের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে।

Advertisement

গুণে ও মানে অনন্য শেরপুরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন ছানার পায়েসকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে জেলা ব্র্যান্ডিং বাস্তবায়ন কমিটির সুপারিশ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জনশ্রুতি রয়েছে, শত বছর আগে জেলার ঘোষপট্টিতে প্রথম ছানার পায়েস তৈরি হয়। সে সময়কার জমিদাররা ঘোষপট্টিতে বানানো ছানার পায়েস বিশেষ পদ্ধতিতে নিয়ে যেতেন কলকাতায়। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন কিংবা অন্য জমিদারের কাছে উপঢৌকন হিসেবেও এ পায়েস পাঠাতেন তারা। বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, অতিথি আপ্যায়নসহ সবখানেই ছানার পায়েসের সুখ্যাতি রয়েছে।

আরও পড়ুন: অতিথি আপ্যায়ন-উপহার সবকিছুতেই ক্ষীরপুরি

Advertisement

শেরপুর শহরের একটি হোটেলের কারিগর নবী হোসেন জানালেন ছানার পায়েস তৈরির পদ্ধতি। তিনি বলেন, প্রথমে উচ্চ তাপমাত্রায় দুধ গরম করে ক্ষীর তৈরি করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি তৈরি করা হয়। গুটিগুলো পরে চিনির শিরায় ভিজিয়ে আগে প্রস্তুত করে রাখা ক্ষীরে ছেড়ে অল্প আঁচে কিছুক্ষণ তাপ দিলেই তৈরি হয়ে যায় মুখরোচক ছানার পায়েস।

পৌর শহরের নিউমার্কেটের অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারের কালিপদ ঘোষ দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে মিষ্টি তৈরির কাজ করেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরি করা হয় ছানার পায়েস। তাই স্বাদটা একটু ভিন্ন, চাহিদাও ব্যাপক। এককেজি ছানার পায়েস তৈরি করার জন্য দুই কেজি দুধ, আধাকেজি চিনি, সামান্য পরিমাণ ময়দা ও ১০-১৫ গ্রাম এলাচ লাগে।’

অনুরাধা মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বতাধিকারী বাপ্পি দে জানান, বর্তমানে প্রতিকেজি ছানার পায়েস ৩৮০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জন্মদিন, ঈদ, বিয়েসহ বিভিন্ন পার্টিতে ছানার পায়েসের প্রচুর অর্ডার আসে।

হোটেল হৃদয়ের মালিক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে ছানার পায়েস বিক্রি করছি। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষদের জন্য কিংবা রোগী দেখতে গেলে তালিকায় ছানার পায়েস থাকবেই। এর চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। তবে সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আর তেমন লাভ হয় না।’

Advertisement

আরও পড়ুন: ৮০ বছরেও কমেনি লক্ষ্মী নারায়ণের মিষ্টির খ্যাতি

শেরপুর শহরের চারু সুইটস, অনুরাধা, দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভন্ডার, নিউ প্রেমানন্দ, প্রেমানন্দ গ্র্যান্ড সন্স, অমৃত গোপাল মিষ্টান্ন ভান্ডার, নন্দ গোপাল, মা ভবতারা মিষ্টান্ন ভান্ডার, হোটেল আবির নিবির, হোটেল হৃদয়, হোটেল নূর রহমান ও বল্লব মিষ্টান্ন ভান্ডারে ছানার পায়েস পাওয়া যায়। জেলার পাঁচ উপজেলাতেও বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ছানার পায়েস বিক্রি হয়।

পর্যটনসমৃদ্ধ শেরপুর জেলায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে লোকজন ঘুরতে এলে অনেকেই ছানার পায়েস সঙ্গে নিয়ে ফেরেন। বিশেষ করে গারো পাহাড়ের গজনী অবকাশ কেন্দ্র, মধুটিলা ইকোপার্ক, রাজার পাহাড়, পানিহাতা, অর্কিডে বেড়াতে এসে ছানার পায়েসের স্বাদ নিতে ভোলেন না ভোজনরসিকরা।

শেরপুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার বলেন, আমাদের শেরপুরের ছানার পায়েসের খ্যাতি দেশজুড়ে।

শেরপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খায়রুম বলেন, শেরপুরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে ছানার পায়েসের বেশ সুনাম রয়েছে। দেশে-বিদেশে এ মিষ্টির বেশ কদর রয়েছে। এটিকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য সরকারের নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হবে।

এসআর/জিকেএস