নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খগাখড়িবাড়ি দহলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাসানুর রহমান। ধান, ভুট্টা, আদা, হলুদসহ সবজি চাষ করেন তিনি। আর নিজের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেই চলে তার সংসার।
Advertisement
কয়েক বছর ধরে নানা প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় তেমন ভালো ফলন পাননি হাসানুর। গত বছর লাভের আশায় আদা চাষ করেও হয়েছেন লসের শিকার। তবে এবার কৃষি অফিসের সহযোগিতায় বস্তায় আদা চাষ করেছেন তিনি। আট শতক জমিতে ১ হাজার ২০০ বস্তা আদা চাষ করেছেন। আর এই আদা ছয় লাখ টাকায় বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন হাসানুর।
হাসানুরের মতো বস্তায় আদা চাষ করেছেন উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আশরাফ হোসেনসহ আরও অনেকেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিমলা উপজেলার প্রায় সাড়ে চার হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে। প্রতিটি বস্তায় দুই থেকে পাঁচ কেজি পরিমাণ আদা উৎপাদন হয়। এতে অল্প জমিতে অধিক লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
কৃষিবিদরা বলছেন, বস্তায় আদা চাষ একটি নতুন প্রযুক্তি। পতিত জমি বা যে কোনো স্থানে এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করা যায়। সমতল ভূমিতে আদা চাষে নানাবিধ সমস্যায় পড়েন কৃষকরা। বিশেষ করে রাইজম রড নামে একটি রোগ আদায় আক্রমণ করে। এতে আদা পচে যায়। ফলে প্রতিবছর লোকসান গোনেন চাষিরা। তবে বস্তায় আদা চাষে পচন ও নানাবিধ রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
Advertisement
কৃষি অধিদপ্তর বলছে, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে যে আদা হয়, বস্তা পদ্ধতিতে ছয়-আট শতাংশ জমিতে সেই পরিমাণ আদা চাষ করা সম্ভব। আট শতক জমিতে ১ হাজার ৫০০ বস্তা আদা চাষ করা যায়। প্রতিবস্তায় গড়ে তিন কেজি পরিমাণ আদা উৎপাদিত হলে ১ হাজার ৫০০ বস্তায় মোট আদার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে চার টন, যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
কৃষক হাসানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আগে মাটিতে আদা চাষ করতাম। নানা সমস্যায় পচন ধরে। রোগ বালাইয়ে আদা নষ্ট হয়ে যায়, লোকসান হয়। এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে সুপারি বাগানে বস্তায় আদা চাষ করেছি। এখানে তো আমার অন্য কোনো আবাদ হয় না। সেই জায়গায় ১ হাজার ২০০ বস্তা আদা লাগিয়েছি। প্রতি বস্তায় দুই কেজি করে হলেও ৫-৬ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো। ফলন ভালো হলে আগামী বছর আরও বেশি করে আদা লাগাবো।
দহলপাড়া গ্রামের কৃষক আফতার আলী জাগো নিউজকে বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসলাম মাটিতে আদা চাষ হয়। এখন নাকি বস্তায় চাষ হয়। ফলন ভালো, লাভ বেশি শুনতেছি। হাসানুরের রেজাল্ট দেখে আমরাও আগামীতে এইভাবে আদা চাষ করবো।
একই এলাকার আব্দুল জব্বার বলেন, এখানে আদার চেহারা দেখে তো ভালোই লাগছে। ফলন ভালো হইছে। এবার আমার বাড়ির পেছনে আদা লাগানোর জন্য যোগাযোগ করতেছি। আমিও এভাবে চাষ করবো।
Advertisement
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মানিক বলেন বলেন, এই পদ্ধতিতে চাষে কৃষক অধিক ফলন পাবেন। আগের পদ্ধতির এক বিঘার চাষ বস্তায় করলে আট শতক জমিতে করা সম্ভব। এছাড়া বস্তায় আদা চাষে কোনো প্রকার রোগ বালাই আক্রমণ করে না। আর আক্রমণ করলেও তা সহজে সমাধান করা যায়। হাসানুর ভাইয়ের সুপারি বাগানে পতিত একটি জমিতে যে হারে ফলন হয়েছে তাতে বর্তমান বাজারে তিনি ছয়-সাত লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সেকেন্দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, মূলত আদা, হলুদ বা মসলা জাতীয় ফসলগুলো কৃষক মাটিতে আবাদ করে আসছেন। তবে ভারী বৃষ্টির কারণে আদায় রাইজম রড নামে রোগটি মারাত্মক ক্ষতি করে। এজন্য চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২০ জন কৃষক এবার বস্তায় আদা চাষ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এই পদ্ধতিতে অল্প জমিতে অধিক ফলন পাওয়া যায়। এক বস্তায় দুই থেকে পাঁচ কেজি আদা উৎপাদন হয়। ফলে কৃষক অল্প সময়েই লাভবান হন।
রাজু আহম্মেদ/এমআরআর/এএসএম