বিএনপি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে যখন সক্রিয়। সরকারবিরোধী স্লোগানে যখন দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রাজপথে আন্দোলন করছে ঠিক সে সময় নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর দুর্বল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়ে লেজে গোবরে অবস্থা পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের।
Advertisement
২০১৮ সালে পাঁচ সদস্য দিয়ে কমিটি ঘোষণার পর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদল। এ কারণে বর্তমানে বিভিন্ন গ্রুপ আর বিভক্তি নিয়েই দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
আর জেলা কমিটিরই যখন এমন বেহাল অবস্থা তখন দলটির অন্য ইউনিটের অবস্থা আরও নাজুক হওয়াটাই স্বাভাবিক। ফলে জেলা পর্যায়ে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদল সাংগঠনিকভাবে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারছে না।
জেলা ছাত্রদলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি রাজিব আহসান এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আকরামুল হাসান পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেন। এতে সভাপতি হিসেবে শফিউল বাসার উজ্জ্বল এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আল হেলাল নয়নকে দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে জহিরুল ইসলাম শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আল আমিন হাওলাদার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে খালিদ ইবনে হাসান সানীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
Advertisement
তবে এর পর আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ দেখেনি। আর সেই থেকে এই পাঁচ সদস্য নিয়েই দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে এই পাঁচ সদস্যের কমিটিও দুই ভাগে বিভক্ত। ফলে জেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আগুনে পুড়ছে জেলা ছাত্রদল।
বর্তমানে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নু মিয়া ও সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার কুট্টি গ্রুপের লোক হিসেবে পরিচিতি হলেও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আল হেলাল নয়ন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পটুয়াখালী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলতাফ হোসেন চৌধুরী গ্রুপের লোক হিসেবে পরিচিতি। আলতাফ হোসেন চৌধুরী বিগত জোট সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। জেলা ছাত্রদলের প্রধান দুই নেতা দুই গ্রুপে বিভক্ত থাকায় বিভক্তি আরও বাড়ছে।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের কেন এমন বেহাল দশা তা নিয়ে কথা হয় দলটির একাধিক সাবেক নেতার সঙ্গে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৌফিক আলী খান কবির বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদল একটি বড় ভূমিকা রাখে। তবে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকাটা দুঃখজনক। দ্রুত জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন কিংবা পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটানো প্রয়োজন।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লব বলেন, আমরা চাচ্ছিলাম যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি হোক, কিন্তু বর্তমান কমিটি সেটি করতে পারেনি। দুই বছরের কমিটি পাঁচ বছর অতিক্রম করলো। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করলে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা পদ-পদবি পেত। কিন্তু এখন আর তার সুযোগ নেই। হয়তো দুই-এক মাসের মধ্যে নতুন কমিটি ঘোষণা হবে। আর এক্ষেত্রে যারা বর্তমানে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখছে তাদেরকেই অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
Advertisement
এদিকে, কেন পাঁচ বছরেও জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি এ বিষয়ে ভিন্ন মন্তব্য করেছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয় নিয়ে জটিলতা ছিল যে কারণে কমিটি করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে আমরা কমিটি করার প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছি। আগে যে কমিটির ফরম্যাট রেডি করা হয়েছিল সেখানে বিভিন্ন উপজেলাকেন্দ্রিক নেতাদের নাম বেশি এসেছিল, তবে এখন যে কমিটি রেডি করছি তাতে যারা জেলা শহর কেন্দ্রিক রাজনীতি করেন এবং আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অবস্থানে আছেন তাদেরকেই অগ্রাধিকার দিয়ে কমিটি করা হবে। এ ক্ষেত্রে কমিটির সদস্য সংখ্যা ২০১ কিংবা ২৫০ এর মধ্যে নিয়ে আসবো।
তবে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আল হেলাল নয়ন বলেন, জেলা ছাত্রদলের কমিটি করার জন্য আমি এবং সভাপতি বেশ কয়েকবার বসেছি। এরপর একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করে তা কেন্দ্রে জমা দেওয়ার জন্য আমরা দুইজন যখন ঢাকায় রওয়ানা করি ঠিক সে সময় জেলা সভাপতি পালিয়ে যায়। জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার বিষয়ে সভাপতির কোনো ইচ্ছা নেই। এরপরও আমি ওই কমিটি একাই কেন্দ্রে জমা দিয়ে এসেছি। অতি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা দরকার। এরপরও আমরা কেন্দ্রীয় বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছি।
এদিকে, বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে পাঁচ সদস্য কিংবা পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হতে পারে।
এএসএআর/এমআরআর/জেআইএম