দেশজুড়ে

আমচাষিদের আশার আলো দেখাচ্ছে জার্মানি পদ্ধতির হিমাগার

জার্মানির অত্যাধুনিক পদ্ধতির হিমাগার স্থাপন করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। এতে কাঁচা আম সংরক্ষণ করা যাবে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত। এরইমধ্যে এখানে আম রেখে লাভবান হয়েছেন হিমাগার কর্তৃপক্ষ। সাধারণ আম চাষিদের জন্যও এই সুবিধা রাখা হয়েছে।

Advertisement

হিমাগারটি স্থাপন করা হয়েছে উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ি এলাকায়। এতে উচ্ছ্বসিত আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় আম সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ‘আজান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠিত হিমাগারটির আয়তন ২৮৮ শতাংশ। এখানে হট ওয়াশ চেম্বারও রয়েছে যার আয়তন ২০ শতাংশ। আর কোল্ড স্টোরেজ প্লান্টের আয়তন ১৩০ শতাংশ। চেম্বার সংখ্যা ছয়টি এবং পুকুরের আয়তন ৬৪ শতাংশ।

মো. হাফিজুল নামে স্থানীয় এক আমচাষি বলেন, কয়েক বছর থেকে আমরা আমের দাম না পেয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছি। তবে এই হিমাগার আশার আলো দেখিয়েছে। কারণ যে সময় বাজারে আম বেশি থাকে সেসময় আমের দাম কম হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হই আমরা। কিন্তু এই হিমাগারে ২০ থেকে ২৫ দিন আম সংরক্ষণ করা যাচ্ছে। এতে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবো আমরা। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী বছর অল্প করে হলেও এই হিমাগারে আম রাখবো। এরইমধ্যে হিমাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।

Advertisement

শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, কয়েক বছর থেকে আমের দাম কম। দিন দিন সিজনাল আমের দাম আরও কমছে। আমার এবার ৩০০ মণের বেশি আশ্বিনা জাতের আম ছিল। কিন্তু আমগুলো বিক্রি করে উৎপাদন খরচ ওঠাতে পারিনি। এতে প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আগে জানতাম না এই হিমাগারে ২০ থেকে ২৫ দিন আম সংরক্ষণ করা যায়। আগে জানলে এখানে আম সংরক্ষণ করতাম। তবে এখন জেনেছি, আগামী বছর থেকে এই হিমাগারে আম রাখবো। কিছুদিন পরে বিক্রি করবো। এতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান বলেন, কয়েক বছর আগে আগস্ট মাসে আশ্বিনা ছাড়া অন্য কোনো আম থাকতো না। এজন্য আশ্বিনা আমের দাম পেতেন চাষিরা। তবে এবার তা হয়নি। ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন আমচাষিরা। এর মধ্যেই সুখবর আমরা পেয়েছি। জার্মানি পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণ করা যাবে ২৫ দিন পর্যন্ত। এই ২৫ দিনে আমের দাম অনেক বেড়ে যাবে। এতে এই আম বিক্রি করে আমরা লাভবান হবো।

তিনি আরও বলেন, হিমাগারটিতে ২০২১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এক মেট্রিক টন ফজলি, ক্ষীরসাপাত ও লক্ষণভোগ আম রেখে ২৮ দিন পর বের করা হয়েছিল। তাতে সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল আমগুলো।

Advertisement

আজান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের সিও ইয়াকুব আলী বলেন, জার্মানি প্রযুক্তিতে ফল সংরক্ষণের অত্যাধুনিক এই হিমাগারটিতে ৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন আম রাখা যাবে।

২০২২ সালে ৫০০ কেজি গাজর, ২০০ কেজি কাঁচামরিচ ও ২০০ কেজি টমেটো রাখা হয়েছিল। যার মধ্যে গাজর ২৮ দিন পর এবং কাঁচামরিচ ও টমেটো ১৫ দিন পর বের করা হয়েছিল। সেগুলো অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি সব ধরনের কৃষি পণ্য এখানে রাখা যাবে।

তিনি বলেন, এবারও চলতি বছরের ১১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৩২ মেট্রিক টন ক্ষীরসাপাত ও ২ মেট্রিক টন ল্যাংড়া আম সংরক্ষণ করা হয়েছিল। আজ (রোববার) ১ টন আশ্বিনা আম সংরক্ষণ করা হলো। এর আগে ফজলি, ল্যাংড়া, আশ্বিনা, রুপালী ক্ষীরসাপাত, লখনাসহ বিভিন্ন জাতের ৪০ মেট্রিক টন আম রাখা হয়েছে। এতে বেশ লাভবান হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এখানে পোলিশ ও ছত্রাকনাশক ওয়াশ করা হয়। ওয়াশ ছাড়াও সংরক্ষণ করা যায়। তবে ছত্রাকনাশক ওয়াশে আমের রঙ ভালো থাকে। আমরা ব্যক্তি উদ্যোগে হিমাগারটি নির্মাণ করলেও সাধারণ চাষিরাও আমাদের এই হিমাগারে আম রাখতে পারবেন। এতে একমাসে এককেজি আমে খরচ হবে ৪-৫ টাকা।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, জেলার সব থেকে বেশি আম উৎপাদন হয় এই উপজেলায়। আর এই আমগুলো বিক্রি হয় কানসাট আম বাজারে। তবে কয়েক বছর থেকে আমের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কানসাট আম বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। এই হিমাগার নির্মাণে চাষিরা ২০-২৫ দিন রেখে বিক্রি করতে পারবেন।

তিনি আরও জানান, এই হিমাগারে সাধারণ চাষিরাও আম রাখতে পারবেন। আর খরচও কম। কিছুদিন পরে আমগুলো বিক্রি করলেই লাভবান হবেন তারা।

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, হিমাগারটিতে হট ওয়াশ চেম্বারের মাধ্যমে আম ওয়াশ করা হচ্ছে। এমন আরও কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা গেলে এ জেলার আম আরও বেশি বিদেশে রপ্তানি হবে।

এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, শনিবার (২৬ আগস্ট) নেদারল্যান্ডের ওয়াগেনিংযেন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিসার্চের দুইজন সাইন্টিস্ট হিমাগারটি পরিদর্শন করেছেন। ইউরোপের মার্কেটে কীভাবে আমগুলো রপ্তানি করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা সেভাবেই কাজ করছি। আশা করছি দিনে দিনে বিদেশে দ্বার খুলবে।

এফএ/জিকেএস