চাঁদের বুকে সফলভাবে মহাকাশযান অবতরণ করিয়ে সম্প্রতি চন্দ্রজয়ীদের এলিট ক্লাবে ঢুকে পড়েছে ভারত। এই মিশনের মাধ্যমে চন্দ্রজয় করা দেশ হিসেবে চতুর্থ এবং চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করা পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে নাম লিখিয়েছে তারা। এই অভিযানে ভারতের খরচ হয়েছে প্রায় ৬১৫ কোটি রুপি। কিন্তু এত টাকা খরচ করে চাঁদে গিয়ে কী লাভ হচ্ছে দেশটির?
Advertisement
এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সাবেক চেয়ারম্যান কে কস্তুরিরঙ্গন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’কে তিনি বলেছেন, চন্দ্রযান-৩’র সাফল্য ভারতকে মহাকাশগামী দেশগুলোর মধ্যে সামনের সারিতে নিয়ে গেছে। এর অর্থ, এখন থেকে মহাকাশ অনুসন্ধান এবং গতিসম্পদ ব্যবহার সংক্রান্ত আলোচনায় কথা বলার সুযোগ পাবে ভারত।
আরও পড়ুন>> চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ, ইতিহাস গড়লো ভারতের চন্দ্রযান-৩
কস্তুরিরঙ্গন ইসরোর চেয়ারম্যান থাকাকালেই ভারতের চন্দ্রাভিযানগুলোর পরিকল্পনা হয়েছিল। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শাসকরা অতীতে অন্যদের মহাকাশ গবেষণা বন্ধ করে দিয়েছে, বিশেষ করে উদীয়মান প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে। সেই প্রেক্ষাপটেই ভারতকে মহাকাশ গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হতো।
Advertisement
.... and The moon as captured by theLander Imager Camera 4on August 20, 2023.#Chandrayaan_3 #Ch3 pic.twitter.com/yPejjLdOSS
— ISRO (@isro) August 22, 2023ভারতীয় এ বিশেষজ্ঞ বলেন, যদি কোনো দেশ এমন প্রযুক্তি গ্রহণের পথে থাকে, যা নতুন সীমানা উন্মোচন করছে, সমস্যা হলো- কিছু দেশ, যারা এরই মধ্যে এটি আয়ত্ত করেছে, তারা চায় না অন্যরা সেই ক্লাবে যোগ দিক। এটি পারমাণবিক শক্তি এবং অস্ত্র ক্লাবের ক্ষেত্রে ঘটেছে।
আরও পড়ুন>> ভারতের চন্দ্রজয়ের নেপথ্যে ৫৪ নারী বিজ্ঞানী-প্রকৌশলী
‘আপনি যদি এই জাতীয় কর্মসূচিগুলোকে পরে করবেন ভেবে দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থগিত করেন, তবে আন্তর্জাতিক শাসকরা ব্যবস্থাটিকে এতটাই ম্যানিপুলেট করবে যে, আপনার পক্ষে প্রবেশ করাই কঠিন হয়ে যাবে। কারণ এটিকে তাদের ডোমেইন হিসেবে দেখা হয়।’
Advertisement
তিনি বলেন, ভারতকে আর এই বাধাগুলোর সম্মুখীন হতে হবে না, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। যদি নতুন প্রযুক্তি ও অনুসন্ধানের নতুন ক্ষেত্র থাকে, তা সে মাটিতেই হোক বা মহাসাগরে বা মহাকাশে- আমরা যেন আমাদের দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারি এবং সামনের সারির দেশগুলোর মধ্যে থাকতে পারি, তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন>> চাঁদে সফল অবতরণে মোদীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
চন্দ্রজয়ে উল্লাসিত ভারতীয়রা। ছবি সংগৃহীত
কে কস্তুরিরঙ্গন বলেন, চন্দ্রযান-৩’র সাফল্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রথমবার ভারত দেখিয়ে দিয়েছে, এটি অন্য কোনো মহাকাশীয় বস্তুর অনুসন্ধান চালাতে পারে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা। এর একটি হলো বিজ্ঞানের অংশ, অন্যটি প্রযুক্তির এবং আরেকটি হলো মিশন পরিচালনা। এগুলো একটি গ্রহ অনুসন্ধানের সামগ্রিক সক্ষমতার প্রতিনিধিত্ব করে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের মতো সক্ষমতার প্রমাণ দিতে সামর্থ্য অনুযায়ী সব কিছু করছে ভারত।
আরও পড়ুন>> চন্দ্রযান-৩ নিয়ে যা বললো ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা
ইসরোর সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, ভবিষ্যতের চাবিকাঠি হয়ে উঠছে মহাকাশ। এক্ষেত্রে ভারতকে পিছিয়ে রাখা যাবে না। তার মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও মহাকাশ কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করা উচিত।
কস্তুরিরঙ্গন জানান, ইসরোর ‘উচ্চ বিজ্ঞান, নিম্ন খরচ’ পদ্ধতিই ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিগুলোকে সাশ্রয়ী, কিন্তু উদ্ভাবনী উপায়ে সাজাতে সাহায্য করেছে।
কেএএ/