কৃষি ও প্রকৃতি

মরুর গোলাপ চাষে সাফল্যের স্বপ্ন দুই ভাইয়ের

কুড়িগ্রামে মরুর গোলাপ চাষ করে সফল হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন বেবি প্ল্যান্টের প্রতিষ্ঠাতা মো. শাহিনুর রহমান ও মিজানুর রহমান। নার্সারির মালিক হওয়ার পাশাপাশি মিজানুর রহমান মার্কেটিং পেশায় জড়িত এবং বড় ভাই শাহিনুর রহমান কৃষিবিদ। তারা কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মধ্য কুমরপুর এলাকার মো. আব্দুর রহমানের ছেলে। চাকরির সুবাদে শাহিনুর ও মিজানুর জেলার বাইরে থাকেন। ছেলেদের অনুপস্থিতিতে আডেনিয়াম বাগান দেখাশোনা করেন আব্দুর রহমান।

Advertisement

জানা যায়, মধ্য কুমরপুর এলাকার বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান সৌদি আরবে ছিলেন। বিদেশে থাকাকালীন মরুর গোলাপ আডেনিয়াম জাতের মোহে পড়েন। সেখান থেকে শখের বসে একটি গাছের চারা বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ছাদে রাখা ওই আডেনিয়াম গাছে বছরখানেক পর অসংখ্য ফুল ধরে। পরে এই আডেনিয়াম ফুল নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এতে ব্যাপক সাড়া পান।

সেই থেকে আডেনিয়াম বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেন। তিনি সৌদি আরব, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে চারা ও বীজ সংগ্রহ করে বেবি প্ল্যান্ট নামে নার্সারি গড়ে তোলেন দুই ভাই। নার্সারিতে বর্তমানে প্রায় ৪০ জাতের আডেনিয়াম গাছের চারা আছে। প্রতিটি গাছের চারার দাম ১২০০ থেকে ৫০০০ টাকা।

আরও পড়ুন: মিরসরাইয়ে কাঁচা মরিচ চাষে সফলতার আশা

Advertisement

আডেনিয়াম জাতের মরুর গোলাপ চাষে পরিচর্যায় তেমন খরচ নেই। কীটনাশকের ব্যবহার নেই বললেই চলে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে এমন স্থানে আডেনিয়াম চাষ করতে হয়। ছায়াযুক্ত স্থানে মাচা করে আডেনিয়াম চাষ করতে হয়। এ জাতের গাছ ৫০ থেকে ১০০ বছর বাঁচে। এই গোলাপে সাদা, লাল, হলুদ, গোলাপিসহ বিভিন্ন বর্ণের ফুল হয়ে থাকে।

একটি গাছের চারার জন্য টবে বালু, হাড়ের গুঁড়া, কেঁচো সার ও পটাশের প্রয়োজন। এক ভাগ মাটির সঙ্গে দুই ভাগ বালু, এক ভাগের তিনের একাংশ হাড়ের গুঁড়া, বাকি দুই শতাংশ কেঁচো সার, অল্প একটু পটাশ ও সামান্য ছত্রাকনাশক মেশাতে হয়।

বেবি প্ল্যান্টের প্রতিষ্ঠাতা মো. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘আমার নার্সারিতে ৪০ হাজার আডেনিয়াম মরুর গোলাপ গাছের চারা রয়েছে। নার্সারি গড়তে প্রায় ২৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত ১২ লাখ টাকার গোলাপ গাছের চারা বিক্রি করেছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। চারাগুলো বিভিন্ন জেলায় অনলাইন ও অফলাইনে বিক্রি হচ্ছে। আঞ্চলিক বাজারজাত ব্যবস্থা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আডেনিয়াম জাতের গোলাপ সম্পর্কে মানুষ জানতে পারতো।’

আরও পড়ুন: সৌদি খেজুর চাষে সফল শিবগঞ্জের মোশাররফ

Advertisement

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘আডেনিয়াম মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার একটি গোলাপ। এটি আমাদের দেশে মরুর গোলাপ নামে পরিচিত। কুড়িগ্রামে বেবি প্ল্যান্ট নার্সারিতে আডেনিয়ামের বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে। এটি অত্যন্ত দারুণ খবর। আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।’

কুড়িগ্রাম জেলা বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘উদ্যোক্তা তৈরিতে জেলা বিসিক সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। বেবি প্ল্যান্ট নার্সারির কোনো প্রকার সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা পাশে থাকবো।’

ফজলুল করিম ফারাজী/এসইউ/এমএস