দেশজুড়ে

নিহতরা ছিলেন সহকর্মী, যাচ্ছিলেন আনন্দ ভ্রমণে

আনন্দ ভ্রমণে বের হয়ে গাড়িতে হই-হুল্লোড়ে মেতেছিলেন তারা। তবে মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যায় সব। আনন্দে মেতে থাকা লোকগুলো রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে থাকেন। আবার কারও কারও নিথর দেহ পড়ে ছিল গাড়ির ভেতরে। রক্তে লাল যায় পুরো মহাসড়ক।

Advertisement

সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার সময় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর শিবপুরের ঘাসিরদিয়া এলাকায় পাথরবোঝাই ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেছে একটি পোশাক কারখানার সাত কর্মকর্তার। আহত হয়েছেন আরও চারজন। তারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নিহতদের স্বজনরা হাসপাতালে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে হাসপাতাল এলাকা ভারী হয়ে ওঠে। এদের মধ্যে অনেকের পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।

Advertisement

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার মীর কুমুল্লী এলাকার মোতাহের হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক সবুজ, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল-আমিন খান, ঝালকাঠির পারগোপারপুর গ্রামের আবদুল গণি হাওলাদারের ছেলে আল-আমিন, জামালপুর সরিষাবাড়ির ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহমেদ, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আবদুল আওয়াল, বরিশালের মুলাদী গ্রামের মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান শিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪) ও মাইক্রোবাসের চালক নাসির।

আরও পড়ুন: নরসিংদীতে ট্রাক-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে নিহত ৭

আহতরা হলেন সাকিব আহমেদ (২৮), পারভেজ (২৯), দোয়েল (২২) ও মিথুন (৩৫)। হতাহতরা সাভারের ইপিজেড এলাকার এস বি নিটিং লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা ভাড়া করা একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসে করে সিলেটে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন।

পুলিশ জানায়, সাভার ইপিজেড এলাকা থেকে রাত ৯টার দিকে এস বি নিটিং লিমিটেডের নামের একটি পোশাক কারখানার ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ভ্রমণের জন্য সিলেট যাচ্ছিলেন। তাদের বহনকারী হাইয়েস মাইক্রোবাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর শিবপুররের ঘাসিরদিয়া এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকাগামী একটি পাথরবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় মাইক্রোবাসটি। পরে স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গাড়ির দরজা কেটে আহতদের উদ্ধার করেন।

Advertisement

ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসে থাকা পাঁচ যাত্রী মারা যান। আহতদের নরসিংদী সদর হাসপাতাল নেওয়ার পথে একজন ও হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান। গুরুতর আহত হন চারজন। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভোর রাত ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দা খালেক মিয়া বলেন, ‘রাতে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে মহাসড়কে এসে দেখি ট্রাকটা একপাশে পড়ে আছে। আর মাইক্রোবাসটি সড়কের ওপর উল্টে আছে। রক্তাক্ত মানুষের কান্নাকাটি ভেসে আসছিল। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

নিহত আলামিনের ছোট ভাই আসিফ বলেন, ‘সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার পরও ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। সিলেট ঘুরে শ্রীমঙ্গলে আমার বাসার আসার কথা ছিল। সকালে খবর পাই ভাই আর নেই। এখন মরদেহ নিতে নরসিংদী এসেছি।’

সাভার ইপিজেড এলাকার এস বি নিটিং লিমিটেডের ব্যাবস্থাপক (প্রশাসন) মীর শিহাব উদ্দিন জাকির বলেন, কারখানার ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সিলেটে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। তারা নরসিংদীর ইটাখোলায় পৌঁছালে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন। গুরুতর আহত চারজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমরা মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি।’

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তৌহিদুল আলম বলেন, রাত ৩টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ছয়জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যে একজন মৃত ছিলেন। হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণের মধ্যে আরও একজন মারা যান। বাকি চারজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিকভাবে দেখতে পেয়েছি, ট্রাকটি নিজের লেনেই ছিল আর মাইক্রোবাসটি অন্য একটি লেনে। ধারণা করা হচ্ছে, মাইক্রোবাসটি অন্য কোনো যানবাহনকে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। তবে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে আমরা কাজ করছি।

এর আগে ২০১১ সালে মহাসড়কের ঘাসিরদিয়ায় একই স্থানে মাছবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে পুলিশের গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে নরসিংদীর বেলাবো থানার দুই ওসিসহ পুলিশের ১০ কর্মকতা নিহত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে একই স্থানে সড়াইল থানার ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়।

এসআর/এমএস