এডিস মশা এবার শরমেই মরে যাচ্ছে। লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে গেছে। পেটে রক্ত নেই। তবুও রং বেজায় লাল! এতটাই শরম তাদের মরমে লেগেছে যে তারা এখন রক্ত খেতেই ভুলে গেছে। নালা, নর্দমায় ঢুকে চুপচাপ বসে আছে। তারা একইসাথে লজ্জিত, বিস্মিত এবং রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গেছে। উড়ার শক্তিটুকুও নাকি নেই। নেই রক্তচোষার ক্ষমতাও।
Advertisement
বহু অনুরোধ-আবদার শেষে তারা এর কারণ হিসেবে "বিটিআই" কেনা নিয়ে জালিয়াতি হওয়াকে দায়ী করেছে। তারা বলেছে, "এরকম জৈব প্রযুক্তি দিয়ে আমাদের বাচ্চা মানে লার্ভাকে তোমরা হত্যা করার যে আয়োজন করেছ সেখানে দেখলাম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছ! সেটা তোমরা নিজেরাও ধরতে পারনি! ধরিয়ে দিয়েছে অন্য আর এক দেশ! তারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছে এরকম কোনো জৈব প্রযুক্তির ওষুধ তারা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানির কাছে বিক্রিই করেনি!
ফলে জালিয়াতি মার্কা ওষুধ দিয়ে আমাদের বাচ্চাদের হত্যা করে আমাদের নির্বংশ করার যে হীন প্রচেষ্টা তোমরা দেখিয়েছ তাতে আমরাই লজ্জিত হয়েছি! কিন্তু তোমাদের হাবেভাবে লজ্জা নামক কোনো বস্তুর উপস্থিতি আমরা দেখতে পেলাম না! বিদেশী কোম্পানি স্পষ্ট করে বলার পরেও তোমরা দেখলাম ওই জালিয়াতি করে আনা কোম্পানির কাছে আবার ব্যাখ্যা চেয়েছো!
পরে মুখ বাঁচাতে আপাতত এই কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছো! এই কোম্পানিই হয়ত নাম বদলে অন্য নামে তোমাদের ওই সিটি কর্পোরেশনে ঠিকই আবার নানা ধরনের টেন্ডারে অংশ নিবে! আচ্ছা! তোমরা কি বলো তো? তোমাদের কাজটাও ঠিকমতো তোমরা করতে পারো না? নাকি নয়-ছয়, জালিয়াতি এসবেই তোমরা আনন্দ পাও?"
Advertisement
মশার বয়ানে সবেমাত্র একটু লজ্জা পেতে শুরু করেছি ঠিক তখনই চূড়ান্ত অপমান করলো। বললো, " তোমরা যখন তোমাদের জিন স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করে খারাপ কাজের জন্য তৈরি করছো আমরা তখন আমাদের জিন পরিবর্তন করছি আরো বলিষ্ঠভাবে বেঁচে থাকার জন্য! আমাদের মারতে তোমাদের আয়োজন তো পুরোটাই চতুরতায় ভরা!
উত্তরে এডিস মশার সর্দার শুধু বললো, "যারা আন্তরিকভাবে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে তারা সমন্বিতভাবে নিজেদের মাথা খাটায়। যেসব দেশ একাজে সফল হয়েছে তাদের থেকেও তো তোমরা শিক্ষা নিতে পারো। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলো তো সত্যিকার অর্থেই কি তোমরা এই সিকি শতাব্দীতে আমাদেরকে নির্বংশ করা দূরে থাক; অন্তত বিস্তার ঠেকাতেও কি টেকসই ও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিয়েছো?"
সব লোক দেখানো! এভাবে তোমরা কি করতে পারবে আমাদের? আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে তোমাদের ঢাকা শহরে আমরা ডেঙ্গু ছড়াতে শুরু করেছিলাম। যদি সত্যিই তোমরা মশা নিধনে কাজ করতে তাহলে এত বছর পরে এসেও হাজারে হাজারে লোক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার কথা ছিলো না। এমন কি ঢাকা শহর ছাড়িয়ে পুরো দেশেও আমরা ছড়িয়ে পড়তে পারতাম না।
এখন তো পুরো দেশটাই তোমরা আমাদের কাছে লিজ দিয়ে দিয়েছ। এ বছর আমরা ডেঙ্গুকে প্রায় মহামারি পর্যায়ে নিয়ে গেছি। আর সে সময়েও তোমরা আমাদের সাথে মস্করা করেই যাচ্ছ! বিটিআই আমদানিতে জালিয়াতি করলে! সেটা আবার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ক্যামেরা, এ্যাকশন বলে তোমাদের নর্দমায় কিছু ছিটিয়েও দিলে! এভাবে চলতে থাকলে, সামনের দিনগুলোতে আমরা আরো ভয়াবহ ভাবে হাজির হওয়ার আশা করছি। তাই তোমাদের জন্য শুধুই আমাদের পক্ষ থেকে একরাশ সমবেদনা রইলো।"
Advertisement
মনে পড়ে গেলো কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের কবিতা "চিরসুখী জন ভ্রমে কি কখন/ ব্যথিত বেদন বুঝিতে পারে?" এ দুই লাইন মশাকে শুনিয়ে বললাম, " তোমরা তো তাহলে সুখেই আছো। এখন আমাদের একটু বুদ্ধিসুদ্ধি কি দিতে পারো ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে?"
উত্তরে এডিস মশার সর্দার শুধু বললো, "যারা আন্তরিকভাবে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে তারা সমন্বিতভাবে নিজেদের মাথা খাটায়। যেসব দেশ একাজে সফল হয়েছে তাদের থেকেও তো তোমরা শিক্ষা নিতে পারো। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলো তো সত্যিকার অর্থেই কি তোমরা এই সিকি শতাব্দীতে আমাদেরকে নির্বংশ করা দূরে থাক; অন্তত বিস্তার ঠেকাতেও কি টেকসই ও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিয়েছো?"
সর্বশেষ এ প্রশ্ন শুনে আমার দাঁত কপাটি লেগে গেলো! শুধু মাথাটা সামনে-পেছনে আর ডানে-বায়ে করলাম! যা বোঝার মশা বুঝে গেলো। সরাসরি উত্তর না দিয়ে মাথা এরকম করাতে মশার মুখে আস্তে কিন্তু স্পষ্ট শুনতে পেলাম "তোমরা আসলেই ধুরন্ধর! জাল জালিয়াতিই তোমাদের নেশা হয়ে গেছে।"
এইচআর/জিকেএস