আমের বাণিজ্যিক রাজধানী নওগাঁর সাপাহারে কয়েক সপ্তাহ আগেও দাম তুলনামূলক কম ছিল। তবে মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এখন বাজার ঊর্ধ্বমুখী।
Advertisement
যদিও চাষিদের দাবি, বর্তমানে বাজারে যে দামে আম বিক্রি হচ্ছে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় তা অনেক কম। এবার বৃষ্টি কম, অতিরিক্ত খরা ও কিটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই আম বিক্রি করে লাভ দেখছেন না তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমের মৌসুম শেষ হতে চলেছে। বর্তমানে গাছে যে আম আছে তা চাষিরা আস্তে আস্তে বিক্রি করছেন। এখন প্রতিদিনই আমের দাম বাড়বে। বেশি দাম না দিলে বাগানিরা আম দিতে চাচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবছর রেকর্ড পরিমাণ আম উৎপাদন হলেও শুরু থেকেই বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতায় চাষিরা তাদের কষ্টের দাম পাননি। অনাবৃষ্টি, অতিরিক্ত মাছি পোকার আক্রমণ, বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতাসহ নানা কারণে চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। অতিরিক্ত খরচ হয়েছে। পচে নষ্ট হয়েছে বিপুল পরিমাণ আম।
Advertisement
এদিকে গাছে আম ফুরিয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ বাগান এখন ফাঁকা। হিমসাগর, গোপালভোগ, ব্যানানা ম্যাংগোর মতো উন্নতজাতের আমগুলো বেশ কিছু দিন আগেই বাজার থেকে বিদায় নিয়েছে। এখন আছে অল্প পরিমাণে আম্রপালি। এছাড়াও রয়েছে- বারি-৪, গৌড়মতি, কাটিমন, আশ্বিনাসহ হাতেগোনা কয়েকটি জাত। মৌসুমের শেষে এসে এগুলোর স্বাদ যেমন বেড়েছে, তেমনি বাড়ছে দামও।
নওগাঁর সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে সাপাহারে। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি মণ আম্রপালি ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা, বারি-৪ জাতের আম ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার, গৌড়মতি ৬ থেকে ৮ হাজার, কাটিমন ৬ থেকে ৮ হাজার এবং আশ্বিনা ২২০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
‘সাপাহার আমের হাট’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় আম সরবরাহ করে থাকেন অনলাইন আম ব্যবসায়ী সোহেল চৌধুরী।
তিনি বলেন, শেষ সময়ে একদিকে আমের সরবরাহ কমছে, অন্যদিকে চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে আমের দাম বাড়তি। তবে বর্তমানের এই দামও গত বছরের চেয়ে প্রতি মণে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা কম।
Advertisement
হাটে আম বিক্রি করতে আসা আলামিন হোসেন বলেন, এ বছর শুরু থেকেই দাম কম ছিল। বর্তমানে বাজারে আমের পরিমাণ কমে আসায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ দাম আগে পাওয়া গেলে কৃষকরা আরও লাভবান হতেন।
আরেক কৃষক সোহেল রানা বলেন, গত বছরের এরকম সময় প্রতি মণ আম্রপালি ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য আমের দামও মণ প্রতি আরও ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি ছিল। এবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম গত বছরের তুলনায় কম।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানের এ দামেও খুব একটা লাভ হবে না। কারণ এবার কিটনাশকের দাম বেশি ছিল। এছাড়াও বৃষ্টি কম ছিল ও খরা হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে।
আড়তদার ইসমাইল হোসেন বলেন, দিন দিন আমের পরিমাণ কমে আসছে। এ কারণে দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমের পরিমাণ যত কমে আসবে দামও ততো বাড়বে।
সাপাহার আম আড়ৎদার সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, এবার ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা যা ছিল সেটা অর্জিত হয়নি। কারণ বাজারে এতোদিন আম্রপালি আম শেষ হওয়ায় কথা। কিন্তু অতি লাভের আশায় কৃষকরা আম ছাড়েনি। এখনো বাজারে আম্রপালি আসছে। অথচ এই আম আরও ১৫ দিন আগে শেষ হওয়ার কথা। এছাড়া বাজারে অন্যান্য আমও উঠেছে। শেষ সময়ে দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু সব মিলিয়ে কৃষক, আড়ৎদার, ব্যাপারি কেউ লাভবান হতে পারছে না।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, যাদের বাগানে লেট ভ্যারাইটি আম আছে, শেষ সময়ে এসে তারা খুবই লাভবান হচ্ছেন। কারণ ১৫-২০ দিনের ব্যবধানে মণ প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। মৌসুমের শেষের দিকে দাম তুলনামূলক ভালোই থাকে। এজন্য আমরা এখন কৃষকদের লেট ভ্যারাইটি আম উৎপাদনের পরার্মশ দিচ্ছি।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর নওগাঁয় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন হিসাবে জেলায় আম সংগ্রহের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন।
এফএ/এএইচ/জিকেএস