পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন ঢাকা থেকে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ নৌপথে লঞ্চে বরিশালসহ দেশের উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় যেত। পদ্মা সেতু চালুর পর গত এক বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা ১৭ হাজার কমে ৩৩ হাজারে নেমেছে। এ হিসাবে গত এক বছরে ঢাকার লঞ্চযাত্রী কমেছে ৩৪ শতাংশ।
Advertisement
এছাড়া আগে ঢাকা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৮০টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত। ২০টি কমে এ সংখ্যা এখন হয়েছে ৬০। অর্থাৎ এক বছরে লঞ্চ চলাচল কমেছে ২৫ শতাংশ।
শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। জরিপকালে নৌপরিবহন বিশেষজ্ঞসহ নৌযানের মালিক ও শ্রমিকনেতা, লঞ্চের কর্মচারী, যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
Advertisement
এসসিআরএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবসায় মন্দার কারণে মালিকেরা এক বছরে অন্তত ২০টি লঞ্চ স্ক্র্যাপ (ভেঙে যন্ত্রাংশসহ লোহালক্কড় বিক্রি) করে ফেলেছেন। এছাড়া আরও অন্তত ৬টি লঞ্চ স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকার সঙ্গে উপকূলীয় জনপদসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ আধুনিক ও আরামদায়ক হয়েছে। মানুষ সড়কপথে স্বল্পসময়ে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করতে পারছে। এ কারণে ঢাকা ও বৃহত্তর বরিশালের মধ্যে নৌ যোগাযোগব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এবং লঞ্চের যাত্রীসংখ্যা কমে গেছে।
তবে প্রতিবেদনে যাত্রী ও লঞ্চ চলাচল কমে যাওয়ার পেছনে সড়কপথে পদ্মা সেতুর ইতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি নাব্য সংকট ও ঢাকার যানজটকেও দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়, যথাযথভাবে নদীখনন ও পলি অপসারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণে অনেক নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া যানজট বিড়ম্বনায় সদরঘাট টার্মিনালে যেতে বহু মানুষের অনীহার কারণেও লঞ্চের যাত্রী কমে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
এসসিআরএফ জানায়, আগে ঢাকা থেকে নৌপথে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া ৫০ হাজার মানুষের মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিল বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিগামী লঞ্চের যাত্রী। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এসব জেলার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ সড়কপথে যাতায়াত করেন। ফলে নৌপথে যাত্রী ও লঞ্চ- দুটোই কমেছে।
Advertisement
তবে লঞ্চ মালিকরা দাবি করেন, ৬০ শতাংশ যাত্রী কমে যাওয়ায় তাদের ব্যবসা চরম সংকটে পড়েছে। তবে এ দাবির পক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিতে পারেননি তারা। বরং সরকারি তথ্য অনুযায়ী, লঞ্চ ব্যবসা এখনো লাভজনক। তবে আগের তুলনায় মুনাফার হার কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
তাদের দাবি, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি লঞ্চে মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার যাত্রী ঢাকা ছেড়ে যায়। অন্যদিকে সরকারি তথ্য মতে, প্রতিদিন অন্তত ৬০টি লঞ্চ ঢাকা ছেড়ে যায় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের বরাত দিয়ে এসসিআরএফ জানায়, ১৯ আগস্ট ঢাকা নদীবন্দর থেকে সদরঘাট টার্মিনাল ও পার্শ্ববর্তী ঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ৬২টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। এরমধ্যে চাঁদপুর অঞ্চলের ২২, বরিশাল অঞ্চলের ১০, ভোলা অঞ্চলের ১৪, পটুয়াখালী অঞ্চলের ৬ এবং অন্যান্য অঞ্চলের ১০টি লঞ্চ ছিল।
এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম