ক্যাম্পাস

নামেই ‘ডিজিটাল ক্লাসরুম’

বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি)। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে চারটি অনুষদ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন কৃষি অনুষদে। অথচ এই অনুষদের শ্রেণিকক্ষের মান নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, কৃষি প্রযুক্তিগত এবং গবেষণালব্ধ বিষয় হলেও শ্রেণিকক্ষে প্রযুক্তির কোনো ছিটাফোঁটা নেই। নামেই শুধু ‘ডিজিটাল ক্লাসরুম’।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কৃষি অনুষদে প্রতি বছর ৩৫০ এর অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হন। বর্তমানে এ অনুষদে স্নাতক পর্যায়ে চার লেভেলের এক হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। তিনতলা বিশিষ্ট এ কৃষি অনুষদ ভবনে রয়েছে ২৩টির বেশি শ্রেণিকক্ষ। এরমধ্যে সাতটি তাত্ত্বিক এবং প্রতিটি বিভাগের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য ১৬ এর অধিক শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অধিকাংশ জায়গাজুড়ে শিক্ষককক্ষ।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কৃষি অনুষদে প্রতি বছর ছাত্রছাত্রী বাড়লেও শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা এবং মানে আসছে না কোনো পরিবর্তন। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ক্লাস না হওয়ার ঘটনাও দেখা যায় কৃষি অনুষদে। ফলে বেড়ে চলছে সেশনজটের শঙ্কা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে প্রাচীন কৃষি ভবনের মধ্যে তাত্ত্বিক ক্লাস নেওয়া শ্রেণিকক্ষগুলোর অবস্থা বেশ শোচনীয়। এসব শ্রেণিকক্ষে ১০০ জন ধারণক্ষমতা থাকলেও নেই কোনো সাউন্ড সিস্টেম। এরমধ্যে পুরোনো হওয়ায় প্রজেক্টরের পর্দা কালো রং ধারণ করেছে। প্রজেক্টরের সঙ্গে স্ক্রিনের আনুপাতিক দূরত্ব ঠিক না থাকায় লেখা ছোট দেখেন পেছনের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে সাউন্ড সিস্টেম না থাকায় শিক্ষকের লেকচারও বুঝতে পারেন না তারা। ফলে শিক্ষকদের উচ্চস্বরে কথা বলতে হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: শেকৃবি ক্যাম্পাস যেন মাদকের ‘হটস্পট’

এছাড়া শ্রেণিকক্ষে নেই পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি ও ফ্যানের ব্যবস্থা। কিছু কিছু বেঞ্চ অত্যধিক ফাঁকা। ফলে লিখতে অসুবিধা হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়া শিক্ষকদের লেখার সুবিধার্থে বোর্ডের নিচে যে মঞ্চ ব্যবহার করা হয়েছে তার বেশির ভাগই নড়াচড়া করে। এতে বিরক্তিকর শব্দের সৃষ্টি হয়। ফলে ব্যাঘাত ঘটে পড়াশোনায়। অন্যদিকে কৃষি ভবন পুরোনো হওয়ায় অনেক শ্রেণিকক্ষের সিলিং থেকে খসে পড়ছে সিমেন্ট-বালুর আস্তরণ। এরই মধ্যে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

শ্রেণিকক্ষেই যে শুধু সমস্যা তা কিন্তু নয়, রয়েছে পর্যাপ্ত খাবার পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের সমস্যা। অনুষদ ভবনে সাতটি শ্রেণিকক্ষের বিপরীতে রয়েছে মাত্র একটি বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। মাঝে মধ্যে তাও নষ্ট থাকে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ছোট্ট একটি কমন রুম ও একটি শৌচাগার। অন্যদিকে ছেলে শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি ওয়াশরুম। মোট চারটি বর্ষে প্রায় ১৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর ক্লাস-পরীক্ষা রোটেশন অনুসারে চলে কৃষি অনুষদ ভবনে। ফলে শৌচাগার ও খাবার পানির অপর্যাপ্ততা ভোগাচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

Advertisement

আরও পড়ুন: পড়ে আছে ৮০ কোটির হল, আবাসন সংকটে শিক্ষার্থীরা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টোমলজি বিভাগের এক অধ্যাপক জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এত বাজেট, কিন্তু শ্রেণিকক্ষের নাজুক অবস্থা। বাজেট আসছে আর যাচ্ছে। সবশেষ কবে শ্রেণিকক্ষ ঠিক করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। শ্রেণিকক্ষের পর্দা দেখলে মনে হয় ১০-১২ বছর ধরে ঝুলছে। সাউন্ড সিস্টেম নেই। সাউন্ড সিস্টেম ছাড়া ক্লাস নিতে বিরক্তি ধরে যায়। প্রচণ্ড গরমে শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে বসেই ক্লাস করে। ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না তারা। অথচ প্রশাসনিক ভবন ও বেশির ভাগ শিক্ষকদের রুমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা রয়েছে। এই তীব্র গরমে কৃষি অনুষদের সাতটি শ্রেণিকক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।

শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ক্লাস না হওয়ার ঘটনাও দেখা গেছে শেকৃবির কৃষি অনুষদে

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরা কতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল ফয়েজ মো. জামাল উদ্দিন বলেন, আমাদের ক্লাসরুমগুলো একটু বড় এবং বেশি শিক্ষার্থী থাকে। এজন্য ক্লাসরুমে সাউন্ড সিস্টেম থাকা প্রয়োজন। আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে পাঠদান দিয়ে থাকি, অনেক সময় পেছনে থাকা শিক্ষার্থীরা তাতে মনোযোগ দিতে পারেন না। এছাড়া আমাদের দীর্ঘসময় উচ্চস্বরে লেকচার দিতে হয়। এতে অসুবিধা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল আহমেদ বলেন, কৃষি অনুষদের কোনো তাত্ত্বিক শ্রেণিকক্ষেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা নেই। ফলে গরমের মধ্যেও অস্বস্তিকর পরিবেশে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস করতে হয়। পানির জন্য একটা ফিল্টার আছে, যা মাঝে মাঝে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া শৌচাগারের ব্যবস্থা খুবই শোচনীয়। প্রয়োজন হলে যেতে হয় তিন তলায়, আবার সেগুলোও বেশিরভাগ সময় ব্যবহার অনুপযুক্ত থাকে।

আরও পড়ুন: পড়াতে পারেন না শিক্ষক: প্রত্যাহার দাবি শিক্ষার্থীদের

এসব সমস্যার বিষয়ে শেকৃবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল বলেন, আমরা দ্রুতই ক্লাসরুমে সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নিয়েছি। প্রাথমিক পর্যায়ে তিন-চারটি ক্লাসরুমে সাউন্ড সিস্টেম করা হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কৃষি অনুষদে শৌচাগার বাড়ানোর জন্য কয়েকটি বিভাগের সঙ্গে দ্রুত বসবো আমরা।

তাসনিম আহমেদ তানিম/জেডএইচ/জেআইএম