দেশজুড়ে

নারায়ণগঞ্জ শহরের মাঝে একখণ্ড ভোগান্তির নাম মীর জুমলা সড়ক

নারায়ণগঞ্জ শহরবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মীর জুমলা সড়ক। শহরের প্রধান বাজার দিগুবাবুর বাজারের ভেতর দিয়ে যাওয়া পুরো রাস্তাজুড়েই অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বাজার। একসময় এই রাস্তা দিয়ে বাস চলাচল করলেও বর্তমানে সেখানে সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন। সেইসঙ্গে রাস্তাজুড়েই রয়েছে ময়লা-আবর্জনা। মাঝরাস্তায় রয়েছে ময়লার স্তূপ।

Advertisement

কখনো কখনো এই স্তূপটি বিশাল ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়ে থাকে, যা শহরবাসীর জন্য অসহনীয় ভোগান্তির সৃষ্টি করে। সেইসঙ্গে বৃষ্টি হলে ভোগান্তি বাড়ে কয়েকগুণ। সামান্য বৃষ্টিতেই এই মীর জুমলা সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার উপায় থাকে না। দুর্গন্ধের কারণে নাক চেপে ময়লা-আবর্জনা পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয়। মাঝেমধ্যে অভিযান চালালে কিছুসময় ফাঁকা থাকার পরক্ষণেই আবার আগের অবস্থায় চলে আসে।

আরও পড়ুন: সরু হচ্ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক, দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অর্ধশত বছরের পুরোনো এই দিগুবাবুর বাজার। ব্যবসায়ীদের মালামাল লোড-আনলোড করার সুবিধার্থে বাজারের ভেতর দিয়েই একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়। যার নাম দেওয়া হয়েছে মীর জুমলা সড়ক। একসময় মুড়ির টিন খ্যাত পুরাতন বাসগুলো এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতো। কিন্তু বর্তমানে এই সড়কটিকে ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল লোড-আনলোডে ব্যবহার করতে পারছেন না। সেইসঙ্গে শহরবাসীরও সুবিধার পরিবর্তে দুর্ভোগের কারণ হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে সড়কটি।

Advertisement

শহরের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত বাজারটির ভেতর দিয়ে যাওয়া সড়কজুড়েই সারিবদ্ধভাবে ছোট ছোট চৌকিতে কাঁচা সবজি, মাছ, মুরগি, আলু, পেঁয়াজ ও ফলসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন বিক্রেতারা। তারা তাদের ময়লা-আবর্জনা রাস্তাতেই ফেলেন। বৃষ্টির সময়ে সৃষ্ট কাদা, মাছের পানি, ফেলে দেওয়া পচা সবজি ও বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে জমে থাকা আবর্জনার দুর্গন্ধে যেন বাজারের ভেতরে প্রবেশ করাই অসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

শহরের গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, এই রাস্তাটির কারণে বাজারে আসাটাই কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজার নিয়ে রিকশা দিয়ে যাতায়াত করা তো দূরের হেঁটে যাওয়াটাই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। শহরের একটি প্রধান বাজার এরকম অপরিষ্কার থাকে, সিটি করপোরেশনের কী কাজ করে জানি না।

আরও পড়ুন: সীমাহীন ভোগান্তি নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ফিরেছেন লক্ষাধিক শ্রমিক

জামতলা এলাকার ব্যবসায়ী মিলন বিশ্বাস বলেন, দিগুবাবুর বাজারের মুরগিপট্টির সামনে আসলে সারাদিন ময়লার পাহাড় দেখা যায়। এখানে আসলে ময়লার দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যায় না। অনেক কষ্ট করে বাজার করতে হবে। যেদিন বৃষ্টি থাকে সেদিন তো জামা-কাপড় সব নষ্ট হয়ে যায়।

Advertisement

বাজারে আসা আসমা নামে এক নারী বলেন, এখানে বাজার করতে আসলে মানুষের ধাক্কা খেতে হয়। সড়কের মধ্যে বাজার থাকার কারণে হাঁটা-চলা করা যায় না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাজারের খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি বাজার নিয়ে প্রশিক্ষণসভা ও ভেতরের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সময় ইজারাদারদের নিয়ে নগর ভবনে সভা করে থাকে। তবে সেসব সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত সেখানেই সমাপ্ত হয়ে যায়। শহরের কোনো বাজারেই নাসিকের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়ে না।

দিগুবাবুর বাজারের মোশতাক আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের কাছ থেকে সিটি করপোরেশন লাখ লাখ টাকা নিয়ে যায়। কিন্তু সেই টাকা আমাদের কোনো উপকারে আসে না। সারাদিন ময়লার দুর্গন্ধ নিয়েই ব্যবসা করতে হয়। অনেক সময় ময়লার গন্ধের কারণে শ্বাস নিতে পারি না।

এ বিষয়ে অরাজনৈতিক সংগঠন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, একসময় এই রাস্তা দিয়ে বাস চলাচল করতো। বর্তমানে এই রাস্তা দিয়ে হেঁটেই যাওয়া যায় না। পুরো রাস্তাজুড়েই ব্যবসায়ীরা দখল করে তাদের পণ্য সাজিয়ে বসে থাকেন। এটা শহরবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দাবি, শহরবাসীর সুবিধার্থে এই রাস্তাটি যেন মুক্ত করা হয়। তাহলে শহরের যানজটও কমে আসবে।

আরও পড়ুন: সিদ্ধিরগঞ্জে সড়কের মাঝে বিদ্যুতের খুঁটি, ভোগান্তি

সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, মীর জুমলা সড়কে দোকানপাট বসানোর কোনো অনুমতি নেই। এখানে বসার জন্য কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। এ সড়কে যারা বসেন সবাই অবৈধভাবে বসে থাকেন। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। সেইসঙ্গে বাজারে ময়লা জমে থাকার কথা না। নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হয়ে থাকে।

এমআরআর/এএসএম