তাসকিন-সানির ঘটনার কারণে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা একটু খারাপই থাকবে। তারপরও আমি মনে করি, যেহেতু আমাদের সবাই পেশাদার ক্রিকেটার, ম্যানেজমেন্টও পেশাদার। বিষয়টা তারা পেশাদারিত্বের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই দেখবে। মুস্তাফিজ যদি কামব্যাক করে, তাহলে আমরা যে তাসকিনকে হারিয়েছি, সেটা পূরণ হয়ে যাবে। আশা করি এতটা ক্ষতি হবে না।এছাড়া শুভাগত হোম যোগ দিয়েছে দলে। তাছাড়া আমার মনে হয় এ ধরনের পরিস্থিতি দলের জন্য অনেক সময় ভালোই হয়। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রার্থনা থাকবে, এমনিতেই সব সময় থাকে, এসব পরিস্থিতিতে আরো বেশি থাকে। তখন দেখা যায়, ফল নেতিবাচকের চেয়ে ইতিবাচকই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।নাসির কিংবা শুভাগতকে খেলানো হতে পারে এই ম্যাচে। কারণটা হলো, ভারতের উইকেট যেহেতু স্পিননির্ভর, সেহেতু একজন স্পিন অলরাউন্ডারই খেলানো উচিৎ। কারণ, অস্ট্রেলিয়া দলটিতে তো মারকুটে ব্যাটসম্যানের অভাব নেই উসমান খাজা, ওয়ার্নার, স্মিথ, ম্যাক্সওয়েল, মার্শ থেকে শুরু কয়েকজন।শুনেছি অ্যারোন ফিঞ্চকে ফেরানো হবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে। কাকে বাদ দিয়ে নেয়া হবে এটা এখনো নিশ্চিত না। তবে উসমান খাজাকে সম্ভবত বাদ দেয়া হবে না। কারণ, আমি গত বিগব্যাশ লিগের ম্যাচগুলো দেখেছি। সেখানে উসমান খাজা ছিল দুর্ধর্ষ এক ব্যাটসম্যান। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও বেশ ভালো ব্যাটিং করেছে সে।বেঙ্গালুরুর উইকেটে অনেক রান ওঠে। আমার একবার খেলার সুযোগ হয়েছিল ওই মাঠে খেলার। এশিয়া একাদশের হয়ে আফ্রিকান একাদশের বিপক্ষে। ওখানকার মাঠটা তুলনামূলক ছোট। বল অনেক বেশি ফ্লাই করে। সুতরাং, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমাদের বোলিং লাইনআপটা অনেক ভেবে-চিন্তে ঠিক করতে হবে। এই মাঠে অসিদের বিপক্ষে সূচনাটা যদি ভালো করা যায়, তাহলে ভালো কিছু করা সম্ভব বলে মনে করি আমি।অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ড মডেল অনুসরণ করা উচিৎ হবে বলে আমি মনে করি। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের সবারই হাই স্ট্রাইকরেট। ১৩৫-এরও বেশি। সুতরাং, তাদের বিপক্ষে যতবেশি ডট বল করা যায়, ততই ভালো হবে। তাহলে উইকেট পড়ারও সম্ভাবনা তৈরি হবে। আর ব্যাটিংয়ে আমার মনে হয়, আমাদের ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলা উচিৎ। ঠিক আফগানিস্তানের মতো। ফর্মে থাকুক আর না থাকুক- ব্যাট করতে নামলে যেন ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করে। প্রথম বল থেকেই হিট করে খেলা উচিৎ হবে; যদি আমাদের ভালো কিছু করতে হয়।আপনি যদি আফগানিস্তানের ক্রিকেট দেখেন, তাহলে দেখবেন, তারা ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলে। বল ওয়ান থেকে শুরু করে মারার। কারণ, তাদের চিন্তাই থাকে হারানোর কিছু নাই। এই কাজটা করতে হবে আমাদের টপ থ্রি ব্যাটসম্যানের। তাহলে বাকি ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যাবে। টপ থ্রির স্ট্রাইকরেট যদি অনেক বেশি থাকে তাহলে দলের জন্যই অনেক ভালো।আপনি যদি অন্য দলগুলোর ওপেনারদের দিকে তাকান তাহলে, যারা জিতছে তাদের ওপেনারদের স্ট্রাইক রেট দেখবেন ২০০ থেকে আড়াইশ পর্যন্ত। আফগানিস্তানের ওপেনারের স্ট্রাইক রেটও আমাদের জন্য উদাহরণ। ১৯ বলে করেছে ৪৪। আরেকজন ১৭-১৮ করেছে ৮-৯বলে। ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচটার দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন দুই ওপেনারই কিন্তু ম্যাচটা ঘুরাইছে। ২.৩ ওভারে যখন ৫০ হয়ে গিয়েছিল, তখনই কিন্তু ম্যাচ ঘুরে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের দিকে।এ কারণে, বিশ্বকাপে আমাদের বাকি তিনটা ম্যাচে দুই ওপেনার কিংবা টপ থ্রিকে ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে। কারণ, আমাদের তো হারানোর কিছু নাই। সুতরাং, বল ওয়ান থেকে দেখে আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করা উচিৎ। যেহেতু পাওয়ার প্লেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সুতরাং একে কাজে লাগাতে হবে।বাংলাদেশের জন্য অস্ট্রেলিয়ার উসমান খাজা অনেক বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ, বিগব্যাশে দেখেছি প্রতি ম্যাচেই স্কোর করেছে সে। চারদিকেই শট খেলতে পারে। ফর্মে রয়েছে এই ব্যাটসম্যান। বাকি যারা আছে তারা সবাই ভয়ঙ্কর। ম্যাক্সওয়েল তো খুবই ডেঞ্জারাস। বাকিরও কম নয়। আমরা যতবেশি ডট দিতে পারবো, তাহলে তত ভুল করতে পারে।বোলিংয়েই ওদের সঙ্গে আমাদের বড় পার্থক্য। ওদের তেমন ভালোমানের স্পিনার নেই। যদিও ম্যাক্সওয়েল ভালো বল করছে। জেনুইন না হলেও প্রতি ম্যাচে ভালো করে আসছে। তাকে দেখতে হবে। বাকি যারা আছে তাদের অধিকাংশই পেসার। এমন উইকেটে সাফল্য পেতে তারা বোলিংয়ে অনেক ভেরিয়েশন আনার চেষ্টা করবে। প্রথম ম্যাচ হারলেও, অভিজ্ঞতার কারণে তারা খুব তাড়াতাড়ি অ্যাডজাস্ট করে ফেলে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে ওদের চেঞ্জ অব পেস আর বৈচিত্র্যতা নিয়ে। ওই বৈচিত্র্যময় বল কোথায় কিভাবে খেলতে হবে, সে জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।লেখক: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক।আইএইচএস/বিএ
Advertisement