পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। মাঝে তিন কর্যদিবস কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলার পর এখন আবার টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমার পাশাপাশি পতন হচ্ছে মূল্যসূচকের।
Advertisement
সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার (২৩ আগস্ট) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকয়টি মূল্যসূচক কমেছে। একই সঙ্গে ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের গতি। এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে টানা দুই কার্যদিবস দরপতন হলো।
এর আগে গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), হ্যাকাররা একাধিক ব্যাংক হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করছে, প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে, সামনে রিজার্ভ কমে যেতে পারে- এ ধরনের নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ায় গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়।
এতে টানা দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হলে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অংশীজনদের সঙ্গে দুটি বৈঠক করে। এতে পতন কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়। তবে লেনদেন কমে দুইশ কোটি টাকার ঘরে নেমে আসে।
Advertisement
আর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে পতন প্রবণতা দেখা গেলেও শেষ এক ঘণ্টার লেনদেনের ওপর ভর করে সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়ে। একই সঙ্গে বড় হয় দাম বাড়ার তালিকা এবং বাড়ে লেনদেনের গতি। পরের কার্যদিবস সোমবারও সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়ে। একই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি লেনদেন বেড়ে চারশ কোটি টাকার ঘরে চলে আসে।
তবে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে এসে আবার পতনের মধ্যে পড়ে শেয়ারবাজার। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমার পাশাপাশি সবকয়টি মূল্যসূচকের পতন হয়। তবে লেনদেন বেড়ে পাঁচশ কোটি টাকার ঘরে চলে আসে।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুতেই সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমার মাধ্যমে লেনদেন শুরু হওয়ায় প্রথম মিনিটেই ডিএসইর প্রধান সূচক ২ পয়েন্ট কম যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই পতন প্রবণতা পুরো সময়জুড়েই অব্যাহত থাকে। ফলে একদিকে দাম কমার তালিকা বড় হয়, অন্যদিকে সবকয়টি মূল্যসূচক কমে শেষ হয় দিনের লেনদেন।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলিয়ে মাত্র ৩২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৭টির। আর ১৭৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় রয়েছে চারগুণ বেশি প্রতিষ্ঠান।
Advertisement
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৭৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় এক পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৬৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৩০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকয়টি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের গতি কমেছে। সবশেষ কার্যদিবসে পাঁচশ কোটি টাকার ঘরে উঠে আসা লেনদেন আবার চারশ কোটি টাকার ঘরে নেমে গেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৫০৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৬৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
গত কয়েক কার্যদিবসের মতো লেনদেনের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৬ কোটি ৩২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালী পেপারের লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার। ১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, এমারেল্ড অয়েল, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, জেমিনি সি ফুড, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ এবং আরডি ফুড।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭১টির এবং ৮১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
এমএএস/কেএসআর/জিকেএস