খেলাধুলা

শোক কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সামনে বাংলাদেশ

বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের অভিষেক হওয়ার পর এমন দুর্দিন কখনো দেখেনি বাংলাদেশ। একের পর এক ম্যাচ বড় ব্যবধানে হেরেও ভেঙে পড়েনি টাইগারদের মনোবল। কিন্তু শনিবার বিকেলে দেশসেরা দুই বোলার তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানিকে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দায়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর পুরো ভেঙে পড়েন মাশরাফিরা।তাসকিন-সানির নিষেধাজ্ঞা যত না কষ্ট দিয়েছে দলকে, তারচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে আইসিসির অন্যায় আচরণের শিকার হওয়ার কারণে। এমন শোককে শক্তি বানিয়ে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।আরাফাত সানির নিষেধাজ্ঞা সহজেই মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড; কিন্তু পেসার তাসকিনের নিষেধাজ্ঞা মানতে পারছে না কেউই। এ সিদ্ধান্তে অধিনায়ক-কোচ-ম্যানেজমেন্ট হতে শুরু করে পুরো বাংলাদেশ শিবির হতাশ। ক্ষোভে জ্বলছে পুরো বাংলাদেশ। আবেগে বশবর্তী হয়ে ঝরিয়েছেন চোখের জলও। তারপরও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ই একমাত্র লক্ষ্য টাইগারদের।বাস্তবতা মেনে এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। অনুশীলন শেষেই দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজই হবে জয়ের জন্য মাঠে নামা। আমি সবার দিকেই তাকিয়ে আছি। দলের সবার ছোট ছোট ভূমিকায় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জেতা যায়। আমি প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। ঘরের দু’জন ছেলের যদি সমস্যা হয়, আপনি যেকোনো কাজই ভালোভাবে করতে পারবেন না। সেই উদ্যমটা আর পাবেন না। আমাদের কাছে জিনিসটা এখন ওই রকম। আমাদের মানসিক অবস্থা এখন ওইরকম নেই। সবাই দেখলেই বুঝতে পারবেন; কিন্তু আমরা অবশ্যই মাঠে নামবো, যতটুকু মনোবল নিয়ে এর আগের ম্যাচগুলোতে আমরা মাঠে নেমেছিলাম। তার কোনো কমতি হবে না।’অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এখনো কার্ডিফের জয়টিই একমাত্র সুখস্মৃতি। তদের বিপক্ষে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব শাসন করা অস্ট্রেলিয়া দলটি আগের সেই অবস্থানে না থাকলেও সব সময়ই ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামে তারা। এ ম্যাচেই তাদের এগিয়ে রাখলেন মাশরাফি।এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ হিসেবে আমাদের এই গ্রুপটা অনেক বেশি কঠিন। অস্ট্রেলিয়ার মতো দল, যাদের ব্যাটিং অর্ডারসহ সবকিছুই অনেক কঠিন। কাজটা এমনিতেই কঠিন ছিলো আরও কঠিন হয়ে গেছে। আমাদের অবশ্যই প্রথম চাওয়া থাকবে ম্যাচটা যেন আমরা জিততে পারি। ওভাবেই আমরা পরিকল্পনা করবো।’আগের ম্যাচ গুলোতে ব্যাটিং নিয়ে দুর্ভাবনায় থাকা মাশরাফিকে এখন ভাবতে হচ্ছে বোলিং নিয়েও। এশিয়া কাপ থেকে তাসকিন ওপেনিংয়ে বোলিং করে দারুণ সূচনা এনে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। তাকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। দেশ সেরা পেসার মুস্তাফিজও সম্পূর্ণ ফিট নন। হয়তো তাসকিনের জায়গা পূরণ করতে তাকেই ব্যাথা নাশক ইনজেকশন নিয়ে মাঠে নামানো হতে পারে। তাই বাড়তি চিন্তার পাশাপাশি বাড়তি দায়িত্বও কাঁধে পড়েছে অধিনায়কের। পেস বোলিং নিয়ে কী পরিকল্পনা করছেন জানতে চাইলে মাশলাফি বলেন, ‘পেস আক্রমণ নিয়ে চিন্তা পরের ব্যাপার। টিমের অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই ভালো নয়। অবশ্যই এখন আমাদের কিছু পরিকল্পনা থাকবে।। যে ছেলেটা শেষ আট ম্যাচে ভালো শুরু এনে দিয়েছে; তাকে ছাড়া খেলতে নামাটা আসলেই কঠিন। আমাদের জন্য এটা শুধু হতাশার নয়। তাসকিনের কারণে আমাদের পরিকল্পনায় পুরো পরিববর্তন আনতে হবে।’এই অস্ট্রেলিয়া কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সফরে আসেনি নিরাপত্তার অজুহাতে। এমনকি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও দল পাঠায়নি ক্রিকেটের তথাকথিত মোড়ল দেশটি। তাদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে দেশ সেরা দুই বোলার নিষিদ্ধ। তাই স্বাভাবিকভাবেই এক সাথে দুটি শোককে কাটিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার ম্যাচ এটি। মাঠের বাইরে এ নিয়ে উচ্চবাচ্য না করতে পারলেও খেলার মাঠে সঠিক জবাবটা দিতে পারে বাংলাদেশ।অধিনায়ক মাশরাফিও জানানলেন একই কথা। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো হয় মাঠে প্রতিবাদটা জানাতে পারলে। আমি কোনও সময় বাড়তি কথা বলতে পছন্দ করি না, সামনে কী হবে সেই সব বলি না। অবশ্যই চাই সামনের ম্যাচটায় আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলা হোক; কিন্তু তারপরও একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্টি নিয়ে মাঠে নামতে পারবো না। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।’সাধ্যমত চেষ্টা করার অপেক্ষায় মাশরাফিরা। সাধ্যমত চেষ্টা দেখার অপেক্ষায় পুরো বাংলাদেশ। পারবেন মাশরাফিরা, এ বিশ্বাস সমগ্র বাঙালি জাতির। কারণ বাঙালি জাতি বীরের জাতি। ইতিহাস তাই বলে। এবার মাঠে তা প্রমাণ করার পালা টাইগারদের। কোন ষড়যন্ত্রই তাদের রুখতে পারবেনা। এমন প্রত্যাশায় কাল তাকিয়ে থাকবে লাখো বাঙালি।আরটি/আইএইচএস/বিএ

Advertisement