ফিচার

বিতর্কচর্চা কর্মজীবনে এগিয়ে রাখবে

মো. আশিকুর রহমান

Advertisement

বিতর্ক এমন একটি শিল্প, যা একজন শিক্ষার্থীর মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধি, মননশীলতা, মানবিকতা, ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে বহু যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং পারদর্শিতা তৈরিতে ভীষণভাবে সাহায্য করবে। বিতর্কচর্চা শেখায় কীভাবে নিজেকে, নিজের অঙ্গভঙ্গিকে সাবলীল ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায়। শেখায় জড়তা দূর করতে।

ঠিক এমন প্রয়াসেই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তিচর্চায় সক্রিয়ভাবে অবদান রাখতে ২০১৭ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করে ‘নৃ-তার্কিক সংঘ’। ‘দ্বন্দ্ব সূত্রে সত্য ভেদ’ স্লোগানকে মননে ধারণ করা প্ল্যাটফর্মটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগভিত্তিক প্রথম বিতর্ক সংগঠন। নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কে এম মাহমুদ হকের পরিকল্পনা এবং বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ৭ বছর আগে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি।

এরই মধ্যে বিতর্কচর্চায় ভিন্নতা ও স্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখে সফলভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে নৃ-তার্কিক সংঘ। নিয়মিত বিতর্ক কর্মশালা, পাঠচক্র, বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, বুক রিভিউ, উচ্চারণ প্রতিযোগিতা বা বারোয়ারি বিতর্কসভা আয়োজনের পাশাপাশি আন্তঃবিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে নিয়মিত বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও উৎসবের আয়োজন করে চলেছে। শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে দক্ষ করে তুলতে ইংরেজিতে বিতর্ক আয়োজনের পাশাপাশি স্পিকিং টেস্ট, রিডিং টেস্ট, প্রোনান্সিয়েশন টেস্টের আয়োজন করে। তারাই নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজন করে অ্যাংকর হান্টিং প্রতিযোগিতা।

Advertisement

আরও পড়ুন: ইগোর কারণে ধ্বংস হয় বন্ধুত্ব

বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পরিসরে আয়োজিত বিতর্ক উৎসব ও প্রতিযোগিতায় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে সংগঠনটি। ২০২০ সালে বিজয় দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ও উইম্যান পিস ক্যাফে আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রানারআপ উল্লেখযোগ্য সফলতা। করোনাকালীন প্রতিকূল সময়েও সচেতনতামূলক নৃ-ঘরে আলাপন বা পুস্তক সমালোচনা প্রতিযোগিতার মতো কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন তারা।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কে এম মাহমুদুল হক বলেন, ‘নৃবিজ্ঞান ও জ্ঞানকাণ্ডের যে চর্চা তার মধ্যে মূলত আমরা যুক্তির চর্চা করি। যৌক্তিকভাবে প্রতিটি বিষয়ের এপিঠ-ওপিঠ বা সামগ্রিকতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চিন্তাকে আরও বেশি শাণিত করে। পাশাপাশি অন্যের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া, অন্যকে সম্মান প্রদান, বিনয় এবং অন্যের কথা শুনতে পারার সৌন্দর্য অর্জিত হয় বিতর্কচর্চার মাধ্যমে। এমন ভাবনা থেকেই আমাদের নৃ-তার্কিক সংঘের আত্মপ্রকাশ।’

সংগঠনের সভাপতি ফৌজিয়া জান্নাত তুলি বলেন, ‘ব্যক্তির সুষ্ঠু এবং সাবলীল বাচনশৈলী, শব্দশৈলী, বাক্যশৈলী, আচরণের পরিচ্ছন্নতা ও যুক্তির প্রখরতা অন্যায়কে শুধু উদঘাটনই করে না, তার বিনাশও করে। এটিই একজন তার্কিকের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য ও শক্তি। যেখানেই সত্য ভেদের উদ্দেশ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, সেখানেই তর্ক শুরু হয়ে যায়। তর্ক তৈরি হয় সঠিক পথ জানার তাগিদে। সর্বোপরি শেখায় যুক্তি, ভিত্তি ও তথ্যনির্ভর আলোচনা বা চিন্তা করতে। আমাদের সংগঠনে এ কর্মপ্রয়াসগুলোই সম্পাদনা করার চেষ্টা করে থাকি।’

Advertisement

আরও পড়ুন: আচরণই পরিচয় বহন করে

নৃবিজ্ঞানের জানালা থেকে যুক্তির জগৎ কেমন হয়, তা দেখারই প্রচেষ্টা এ সংগঠনের জন্ম দিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যও তা-ই। ভবিষ্যতেও তারা সংগঠনের এমন বৈচিত্র্যময় ও সুদূরপ্রসারী কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চান।

লেখক: শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।

এসইউ/এএসএম