জাতীয়

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বিশ্ব সম্প্রদায়কে রাজনৈতিক সহায়তার আহ্বান

বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মানবিক সেবায় আর্থিক সহায়তা এবং তাদের সংকট সমাধানে রাজনৈতিক সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)।

Advertisement

সংস্থাটি বলছে, বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের মানবিক পরিস্থিতি যখন খারাপ হচ্ছে, তখন এই দীর্ঘায়িত সংকট ঘিরে চ্যালেঞ্জগুলো ক্রমাগত বাড়ছে। তহবিলের তীব্র স্বল্পতার কারণে মানবিক সংস্থাগুলো শুধু অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জীবনরক্ষাকারী চাহিদা মেটানোর ওপর নজর দিতে বাধ্য হচ্ছে। প্রথমবারের মত শরণার্থীদের খাদ্য সহায়তার ওপর এটি প্রভাব ফেলেছে। যার ফলস্বরূপ ক্রমবর্ধমান অপুষ্টি, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার মত করুণ পরিণতির উদ্ভব ঘটছে।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গারা মানবপাচারে জড়িয়ে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) ইউএনএইচসিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয।

Advertisement

ছয় বছর আগে নতুন করে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। এর সঙ্গে ছিল আগে থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।

ইউএনএইচসিআর মনে করে, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের সামর্থ্য ও প্রত্যয় দিয়ে পুরো মানবিক কর্মকাণ্ডে অপরিহার্য অবদান রাখছে। রোহিঙ্গাদের জন্য চলমান মানবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় জনগণের কল্যাণেও কাজ করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, কারিগরী প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরিতে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে ইউএনএইচসিআর বলেছে, এটি শুধু রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্যই নয়। বরং বাংলাদেশে তাদের শরণার্থী জীবনে নিশ্চিত করবে মর্যাদা, নিরাপত্তা ও উৎপাদনশীলতা। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের কিছু চাহিদা নিজেরাই মেটাতে সক্ষম হবে। কারণ, শরণার্থীরা ক্রমঃহ্রাসমান মানবিক সহায়তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারে না। আর তারা সেটা চায়ও না।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গারা কঠিন সময় পার করছেন: কংগ্রেস প্রতিনিধিদল

Advertisement

সংস্থাটি জানায়, এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান মিয়ানমারে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের সব সময়ই বলে যে নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি হলেই তারা মিয়ানমারে যেতে প্রস্তুত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটি সম্ভব করার জন্য নতুন করে প্রচেষ্টা নিতে হবে। যেহেতু জাতিসংঘ টেকসই প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে প্রস্তুত; তাই ইউএনএইচসিআর ও এর অংশীদারদের প্রয়োজন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরবচ্ছিন্ন, অর্থবহ ও অনুমানযোগ্য প্রবেশাধিকার, যেন সেখানে প্রত্যাবাসনে সহায়তা ও পর্যবেক্ষণ করা যায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সবার সম্মিলিত লক্ষ্য হওয়া উচিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিজ গ্রামে অথবা পছন্দের জায়গায় স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন এবং সেখানে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা, নিবন্ধন, নাগরিকত্বের সুষ্ঠু পরিকল্পনা, পরিষেবা এবং আয়মূলক কাজের সুযোগ নিশ্চিত করা। যেন তারা নতুন করে জীবন গড়তে পারে।

পাশাপাশি বাংলাদেশে শরণার্থীরা যেন চাপে না পড়ে বা ভুল তথ্যের শিকার না হয়ে প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেজন্য তাদের সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে যাচাই করার সুযোগ ইউএনএইচসিআরের থাকা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকা জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, আগুন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে খুবই নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে। এটি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ঘন ঘন দুর্যোগের কারণে রোহিঙ্গারা তাদের বাঁশ ও তেরপলের শেল্টার নতুন করে বানানোরও সুযোগ পায় না। ইউএনএইচসিআর-এর ক্লাইমেট অ্যাকশন স্ট্র্যাটেজির লক্ষ্য হচ্ছে, বিরূপ আবহাওয়া ও আগুন প্রতিরোধী উপাদান দিয়ে শরণার্থীদের শেল্টার, যেন রক্ষণাবেক্ষণ ও পুননির্মাণে বারবার প্রচুর ব্যয় করতে না হয়।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো অপরাধী তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে

ইউএনএইচসিআর বলছে, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ দৃঢ় মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। তাই এর বিনিময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের কল্যাণে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে এবং এই দায়িত্বের ভাগ নিতে হবে। এ বছরের ডিসেম্বরে জেনেভায় আসন্ন গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য সব অংশীদারের ইউএনএইচসিআর আহ্বান জানায়।

রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় বাংলাদেশিসহ প্রায় ১ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন মানুষকে সহায়তা করতে মানবিক সংস্থাগুলো এ বছর ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আবেদন করেছে। ২০২৩ সালের আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত, যৌথ কর্মপরিকল্পনার (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান) জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ পাওয়া গেছে; যা একটি বৃহত্তর মানবিক সংকট রোধে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পূর্বাভাসযোগ্য আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে হতাশাজনকভাবে তুলে ধরে।

আইএইচআর/এমকেআর/এমএস