আইন-আদালত

আইডিয়ালের সীমানায় ঢুকতে পারবেন না ছাত্রীকে বিয়ে করা মুশতাক

ছাত্রীর বাবার দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদের জামিন বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালত। ছাত্রীকে বিয়ে করা খন্দকার মুশতাক আহমেদ যেন স্কুলের সীমানায় যেতে না পারেন সেজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

Advertisement

আদালত বলেছেন, মুশতাক গভর্নিং বডির কোনো কার্যক্রম ও মিটিংয়ে অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি স্কুলের সীমানায়ও ঢুকতে পারবেন না। আশঙ্কা করা হচ্ছে ভবিষ্যতে আরও কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি করতে পারেন। তাই, এমন আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

ধর্ষণ মামলায় খন্দকার মুশতাক আহমেদকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানিতে জামিন বহাল রেখে রোববার (২০ আগস্ট) আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এর চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন। সোমবার (২১ আগস্ট) বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম।

তিনি বলেন, ধর্ষণ মামলার আসামি খন্দকার মুশতাক আহমেদকে মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন চেম্বার আদালত। আদালত বলেছেন, তিনি মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যেতে পারবেন না।

Advertisement

গত ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর বিচারক মাফরোজা পারভীনের আদালতে কলেজছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতাসদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে প্রধান আসামি করা হয়। যিনি ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন।

আবেদনের পক্ষে শুনানিতে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, স্কুল গভর্নিং বডির সদস্য মুশতাক এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন। এ সদস্য যদি স্কুলে যাতায়াত করেন তাহলে তিনি ভবিষ্যতে আরও ছাত্রীদের ক্ষতি করতে পারেন। এজন্য তিনি যাতে স্কুলে প্রবেশ করতে না পারেন এ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ দরকার। এরপরই আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি স্কুলের সীমানায় যাতে যেতে না পারেন সেজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। তিনি যাতে পরিচালনা পর্ষদের কোনো ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকেন সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

এর আগে ১৭ আগস্ট ধর্ষণ মামলায় রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাককে ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মুশতাকের বিয়ে করা ছাত্রীকে বয়স নির্ধারণের জন্য নিরাপদ হেফাজতে (সেফ কাস্টডি) পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

Advertisement

গত ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮- এর বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীনের আদালতে ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এ মামলায় মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতাসদস্য খন্দকার মুশতাককে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গত ১০ আগস্ট বাদীপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী জানান, আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নিয়ে নিয়মিত মামলা হিসেবে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেছেন, তার মেয়ে (ভিকটিম) মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। অভিযুক্ত মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ভিকটিমকে ক্লাস থেকে প্রিন্সিপালের কক্ষে ডেকে নিতেন। খোঁজ-খবর নেওয়ার নামে তিনি ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। কয়েকদিন পর অভিযুক্ত মুশতাক ভিকটিমকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভিকটিমকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে এবং তাকে ও তার পরিবারকে ঢাকা ছাড়া করবে বলে হুমকি দেন। ভিকটিম এ ধরনের আচরণের বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। এসময় অধ্যক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে মুশতাককে তার রুমে নিয়ে আসেন এবং ভিকটিমকেও ক্লাস থেকে নিয়ে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে অভিযুক্তকে সময় ও সঙ্গ দিতে বলেন।

এ বিষয়ে বাদী প্রতিকার চাইতে গেলেও কোনো সহযোগিতা করেননি অধ্যক্ষ বরং অভিযুক্ত মুশতাককে অনৈতিক কাজে সাহায্য করেন তিনি। বাদী উপায় না পেয়ে ১২ জুন ভিকটিমকে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে নিয়ে গেলে অভিযুক্ত মুশতাক তার লোকজন দিয়ে ভিকটিমকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এরপর বাদী জানতে পারেন তিনি ভিকটিমকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেছেন এবং যৌন নিপীড়ন করছেন।

অন্যদিকে, রোববার (২০ আগস্ট) খন্দকার মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলার ভুক্তভোগীকে বাবার জিম্মায় দেওয়ার আদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায়, এ রিট আবেদন করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা। ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দাতাসদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এ নালিশি মামলা করেন শিক্ষার্থীর বাবা।

এফএইচ/এমআইএইচএস/এমএএইচ/জেআইএম