সর্বস্তরের জনগণকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা— এই চার স্কিম নিয়ে চালু হয়েছে এটি।
Advertisement
সরকার চাচ্ছে, যারা এসব স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা দেওয়া শুরু করবেন, তারা যেন তা মেয়াদ পূর্ণ পর্যন্ত চালিয়ে যান। প্রত্যেকে যেন তার সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদার হার নির্ধারণ করেন। এরপরও যদি কেউ মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত চাঁদা দিতে না পারেন, তাহলেও মুনাফাসহ জমা দেওয়া অর্থ ফেরত পাবেন।
এমনকি চাঁদার এক কিস্তি দেওয়ার পর, যদি আর না দেন তাহলেও তিনি মুনাফাসহ জমা দেওয়া টাকা ফেরত পাবেন। তবে যখন খুশি তখন চাইলেই টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। যিনি পেনশন স্কিম গ্রহণ করবেন, তার বয়স কেবল মাত্র ৬০ বছর পূর্ণ হলেই চাঁদার অর্থ মুনাফাসহ ফেরত পাবেন।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি
Advertisement
এ বিষয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির তত্ত্বাবধানে থাকা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকার চাচ্ছে কেউ যেন পেনশন স্কিমের আওতায় এসে, আবার বের হয়ে না যান। এজন্য চাঁদার হার পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয়েছে। যেমন একজন প্রথমে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে পেনশন শুরু করলেন, পরবর্তীতে তিনি এক হাজার টাকা চাঁদার স্কিমেও যেতে পারবেন।
এছাড়া কেউ যদি দুই মাস চাঁদা দিতে না পারেন, তৃতীয় মাসে এসে তার পেনশন হিসাব স্থগিত হবে। এক্ষেত্রে বকেয়া কিস্তির টাকা পরিশোধ করে আবার হিসাব সচল করা যাবে। আবার পেনশনের আওতায় আসা কোনো কর্মজীবী মানুষ হঠাৎ দুর্ঘটনার কারণে অসমর্থ হয়ে গেলে, মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখে তার চাঁদা না দেওয়ার গ্যাপ এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ এক বছর চাঁদা না দিলেও তার হিসাব বন্ধ হবে না।
এসব সুবিধা গ্রহণ করার পরও যদি কেউ চাঁদা দেওয়া শুরুর পর পুরো মেয়াদ পর্যন্ত চাঁদা না দেন, তাহলেও তিনি মুনাফাসহ মেয়াদপূর্তিতে টাকা ফেরত পাবেন। অর্থাৎ পেনশনের আওতায় আসা ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হলে মুনাফাসহ জমা টাকা ফেরত পাবেন তিনি।
অন্যভাবে বলা যায়, একজন ৪০ বছর বয়সে পেনশন স্কিমের আওতায় এলেন, এবং ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর আর দিতে পারছেন না, বা ইচ্ছা করেই দিচ্ছেন না। তাহলে তিনি চাইলে তখনই চাঁদা বাবদ জমা করা টাকা উঠিয়ে নিতে পারবেন না। তাকে তার বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তার বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হলে তিনি চাঁদা বাবদ যে টাকা দিয়েছেন, সেই টাকা এবং তার ওপর অর্জিত মুনাফা সবই ফেরত পাবেন।
Advertisement
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশনের জন্য আবেদন করবেন যেভাবে
১৭ আগস্ট থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কর্মসূচির উদ্বোধন করার পরই এতে আবেদন শুরু করেন অনেকে। প্রথমদিনেই অনলাইনে নিবন্ধন করেন এক হাজার ৭০০ জন। তারা চাঁদা পরিশোধ করে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করেন।
এরপর ১৮ ও ১৯ এই দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। এই দুদিনেও আরও দুই হাজার ৫০০ জনের বেশি চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন স্কিমের আওতায় আসেন। সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রথম তিনদিনেই নিবন্ধন করে চার হাজার ৩৯০ জন চাঁদা পরিশোধ করেন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল দুই কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
আর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (২০ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করে মোট চাঁদা জমা দেন পাঁচ হাজার ৪৭৫ জন। ফলে এই সময় পর্যন্ত মোট চাঁদা জমা পড়ে দুই কোটি ৭৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা।
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে মোট ছয়টি স্কিম থাকবে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে চালু করা হয়েছে চার ধরনের স্কিম। এরমধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘প্রবাস’, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য ‘সুরক্ষা’, আর দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের (বাৎসরিক অনূর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা আয়সীমা) মানুষের জন্য থাকছে ‘সমতা’ স্কিম। এরমধ্যে সমতা স্কিমে ব্যক্তির দেওয়া চাঁদার সমপরিমাণ অর্থ দেবে সরকার।
আরও পড়ুন: যেসব কারণে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু
এছাড়া সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনার বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে সুবিধামতো সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
এই কর্মসূচির আওতায় ১৮-৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চাঁদা দিলে আজীবন পেনশন পাবেন। আর ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিকে আজীবন পেনশন পেতে ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দিতে হবে। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার বাকি সময় পর্যন্ত পেনশন পাবেন। এখানে পেনশনারের ৭৫ বছরের কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা প্রদান করার আগেই মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তা নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেবল তার জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, পেনশন স্কিম আমরা করেছি সবার কাভারেজের জন্য। বৃদ্ধ বয়সে কেউ যেন পরনির্ভরশীল না হয়ে যান। এজন্য সরকার এটি করেছে। কেউ এই সিস্টেমে ঢুকে আবার বের হয়ে যাক আমরা তা চাই না। কেউ পাঁচ হাজার টাকার স্কিম শুরু করলো, তিনি যদি মনে করেন তার আর সামর্থ্য নেই, পরিবর্তন করে এক হাজার টাকার স্কিমে নেমে যেতে পারেন।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদার হার কত?
তিনি আরও বলেন, এছাড়া কেউ যদি দুই মাসে চাঁদা দিতে না পারেন, তৃতীয় মাসে এসে তার পেনশন হিসাব স্থগিত হবে। আবার যদি এ রকম হয় কেউ কর্মজীবী মানুষ, তিনি দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে অসমর্থ হয়ে গেলেন। আমরা যদি মেডিকেল পয়েন্ট অব ভিউতে দেখি তিনি আসলেই অসমর্থ, তখন তার চাঁদা দেওয়ার গ্যাপ আমরা এক বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেবো। অর্থাৎ এক বছর চাঁদা না দিলেও তার হিসাব বন্ধ হবে না।
গোলাম মোস্তফা বলেন, কেউ চাঁদা দেওয়া শুরু করার পর বন্ধ করে দিলে, তার বয়স ৬০ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা টাকা ফেরত দেবো না। ৬০ বছর পূর্ণ হলে তখন তার জমা এবং লভ্যাংশসহ টাকা ফেরত পাবেন। তবে জমা করা টাকার ওপর থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন ফান্ডে জমা হওয়া টাকা কর্তৃপক্ষের জন্য ব্যয় হবে না। পেনশন কর্তৃপক্ষের যাবতীয় ব্যয় সরকার বহন করবে। এ বিষয়ে গোলাম মোস্তফা বলেন, এটাই হলো এই স্কিমের বিউটি। এমন স্কিম কোথাও পাওয়া যাবে না, যে আমার টাকা থেকে একটি টাকাও দৈনন্দিন কাজে ব্যয় করা হবে না। সম্পূর্ণ টাকার ওপরে মুনাফা পাওয়া যাবে। হার অনুযায়ী প্রত্যেকের হিসাবে মুনাফার টাকা চলে যাবে। প্রত্যেকে আইডি নম্বর দিয়ে হিসাবে ঢুকে যে কোনো সময় দেখতে পারবেন কতো টাকা জমা দিয়েছেন, লাভ কতো হয়েছে, এখন কতো টাকা জমা আছে।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন স্কিমে কারা অংশ নিতে পারবেন?
পেনশনের আওতায় একজন ব্যক্তি মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর কত বছর পেনশন পাবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজীবন পেনশন পাবেন। অর্থাৎ পেনশন গ্রহণকারী ব্যক্তি যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন পেনশন পাবেন। তবে পেনশন পাওয়া শুরু হওয়ার পর যদি কেউ মারা যান, তার নমিনি পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত পেনশন পাবেন। অর্থাৎ ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার পর একজন পাঁচ বছর পেনশন গ্রহণ করে মারা গেলেন, তার নমিনি আরও ১০ বছর পর্যন্ত পেনশন পাবেন। এভাবে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত যত সময় বাকি থাকবে তত সময়ের জন্য তার নমিনি পেনশন পাবেন।
চাঁদা দেওয়ার পদ্ধতি
>> যে কোনো স্কিমে নিবন্ধিত হলে ওই স্কিমের জন্য ধার্য করা হারে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে।
>> নিবন্ধনের পর আবেদনকারী মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বা তফসিলি ব্যাংকের কোনো শাখায় ওটিসি পদ্ধতিতে পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা দেওয়া যাবে।
>> প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কর্ডের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদার টাকা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা করবেন।
>> নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা দেওয়া যাবে। এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতি দিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা দিয়ে হিসাবটি সচল রাখা যাবে।
আরও পড়ুন: সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমে সোনালী ব্যাংকে বিশেষ সেবা কাউন্টার
>> কোনো চাঁদাদাতা ধারাবাহিকভাবে তিন কিস্তি চাঁদা জমাদানে ব্যর্থ হলে তার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে এবং প্রতিদিনের জন্য উপ-বিধি অনুযায়ী সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না।
>> চাঁদাদাতা মাসের নাম উল্লেখ করে যে কোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম হিসাবে জমা দিতে পারবেন।
>> কোনো প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশগ্রহণ করলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্য করা মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একত্রে তহবিলে জমা করতে হবে।
>> সব স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ থাকবে।
>> চাঁদার টাকা জমা হলে চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে অবহিত করা হবে এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা প্রদান করা না হলে বিলম্ব ফিসহ চাঁদা জমাদানের জন্য চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে মেসেজ দেওয়া হবে।
শারীরিক ও মানসিকভাবে অসমর্থ চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে বিধান
>> কেউ চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অসমর্থ হন, তাহলে তাকে অসচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষণার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে আবেদন করতে পারিবেন।
>> কোনো চাঁদাদাতার অসচ্ছলতা নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপন দ্বারা, কেন্দ্রীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক পৃথক মেডিকেল বোর্ড গঠন করবে।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার উন্নয়নের দর্শন, সর্বজনীন পেনশন
>> মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ ছাড়া কোনো চাঁদাদাতাকে অসচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষণা করা যাবে না।
>> চাঁদাদাতার মানসিক বা শারীরিক অসামর্থ্যের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সচিব, অর্থ বিভাগ বরাবর আপিল করতে পারবেন।
>> আপিল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
>> অসচ্ছল চাঁদাদাতা হিসাবে ঘোষিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা পরিশোধ না করলেও চাঁদাদাতার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে না।
মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির চাঁদা দেওয়ার বিধান
>> কোনো চাঁদাদাতা চাঁদা প্রদানকালে মানসিক অসামর্থ্যের কারণে অসচ্ছল হিসাবে ঘোষিত হলে কর্তৃপক্ষ উক্ত স্কিমের স্বত্ব উক্ত মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির নমিনি অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীর ওপর ন্যস্ত করতে পারবেন।
>> কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন চাঁদাদাতার নমিনি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী তার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাবে চাঁদার কিস্তি নিয়মিত জমা করে স্কিম চালু রাখতে পারবেন। স্কিমের মেয়াদ শেষে ওই স্কিমের বিপরীতে পেনশনের অর্থ নমিনি বা নমিনিরা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা উত্তোলন করতে পারবেন।
চাঁদাদাতা বা পেনশনার নিখোঁজ হলে
>> চাঁদাদাতা নিখোঁজ হলে নিখোঁজ ব্যক্তির নমিনি বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়রি করে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পেনশনের সম্মুখ অফিসে বা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে চাঁদাদাতার পেনশন হিসাব বা কর্পাস হিসাবে নির্দিষ্ট চাঁদার অর্থ জমা করতে পারবেন।
>> চাঁদাদাতা নিখোঁজ হওয়ার সাত বছর অতিক্রান্ত হলে এবং নিখোঁজ ব্যক্তি ফিরে না এলে, ওই চাঁদাদাতার স্কিম স্থগিত রাখতে হবে এবং পেনশনের প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়া সাপেক্ষে তাকে নিখোঁজ পেনশনার গণ্য করে উপ-বিধি (৩) এর বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
>> পেনশনার তার বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়র আগে নিখোঁজ হলে, তার নিখোঁজ হওয়ার সাত বছর পর পেনশনারের মাসিক পেনশন বাবদ পাওনা তার নমিনি বা নমিনিরা অথবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীদের প্রদান করা যাবে। তবে নিখোঁজ পেনশনারের নমিনি বা নমিনিরা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীরা পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পূর্ণ হতে যতদিন লাগে ততদিন পর্যন্ত মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন।
চাঁদাদাতা কর্তৃক নমিনি মনোনয়ন
>> স্কিমের চাঁদাদাতা, স্কিমে জমা করা অর্থ বা জমার বিপরীতে প্রাপ্য পেনশন বাবদ অর্থ তার মৃত্যুর পর গ্রহণ বা উত্তোলনের জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে এক বা একাধিক নমিনি মনোনয়ন করতে পারবেন। যে কোনো সময় নমিনি বাতিল করে এক বা একাধিক নতুন নমিনি নির্বাচন করা যাবে।
>> চাঁদাদাতা কর্তৃক প্রদত্ত একক নমিনি বা একাধিক নমিনির ক্ষেত্রে সব নমিনি মৃত্যুবরণ করলে চাঁদাদাতাকে পুনরায় নমিনি মনোনয়ন করতে হবে।
>> নমিনি নাবালক হলে চাঁদাদাতার মৃত্যুর পর নমিনি সাবালক না হওয়া পর্যন্ত নমিনির পক্ষে স্কিমের প্রাপ্য অর্থ গ্রহণ বা উত্তোলনের জন্য চাঁদাদাতা নমিনি প্রদানকালে যে কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারবেন। এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে চাঁদাদাতার মৃত্যুর পর নমিনি সাবালক না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি নাবালকের প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য হবে।
স্কিমের রূপান্তর
>> চাঁদাদাতা যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে তার অনুকূলে চালু করা স্কিমের পরিবর্তে অন্য স্কিম বা স্কিমের চাঁদা প্রদানের হার পরিবর্তন করতে পারবেন।
>> স্কিম রূপান্তরের ক্ষেত্রে রূপান্তরিত স্কিমে নতুন চাঁদার হিসাব পৃথক রেখে লভ্যাংশ ও পুঞ্জীভূত জমার অর্থের হিসাব করতে হবে, যা পূর্বতন স্কিমের পুঞ্জীভূত জমার সঙ্গে যুক্ত হবে।
>> স্কিম রূপান্তরের কারণে মেয়াদ পূর্তিতে মাসিক পেনশনের পরিমাণ পুনঃনির্ধারিত হবে।
স্কিমের স্বত্ব
>> এই বিধিমালার অধীন কোনো চাঁদাদাতার অনুকূলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু করা কোনো স্কিমের সম্পূর্ণ স্বত্ব উক্ত স্কিমের চাঁদাদাতার থাকবে।
>> পেনশন স্কিমে চাঁদাদাতা ওই স্কিমের স্বত্ব জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সত্ত্বার নিকট হস্তান্তর করতে পারবেন না। তবে স্কিম বা পেনশন চলাকালে যে কোনো সময়ে চাঁদাদাতার মৃত্যু হলে ওই স্কিমের অর্থ চাঁদাদাতা কর্তৃক মনোনীত নমিনি বা নমিনির অবর্তমানে চাঁদাদাতার উপযুক্ত উত্তরাধিকারী বরাবর হস্তান্তরে কোনো বাধা থাকবে না।
জমা দেওয়া চাঁদা থেকে ঋণ গ্রহণ
চাঁদাদাতা নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা, গৃহ নির্মাণ, গৃহ মেরামত এবং সন্তানের বিয়ের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনে কেবল তার জমা করা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করতে পারবেন। যা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ধার্য করা ফিসহ সর্বোচ্চ ২৪ কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে এবং সমুদয় অর্থ চাঁদাদাতার হিসাবে জমা হবে। গৃহীত ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত নতুনভাবে কোনো ঋণ গ্রহণ করা যাবে না।
এমএএস/জেডএইচ/জেআইএম