জাতীয়

গ্রেনেড হামলার ১৯ বছর, এখনো শুকায়নি ২১ আগস্টের ক্ষত

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৯ বছর আজ। ২০০৪ সালের এ দিনে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে নজিরবিহীন সন্ত্রাসের শিকার হন তিনশতাধিক নেতাকর্মী। প্রায় দুই দশক হতে চললেও বঙ্গবন্ধুর অ্যাভিনিউয়ের সেই ট্র্যাজেডির কথা এখনো ভুলতে পারছেন না আহতরা। স্প্লিন্টারের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত তাদের দেহ এখনো চরম কষ্টের সঙ্গী। দিন যত গড়াচ্ছে, কষ্ট তত বাড়ছে। দলীয় সভানেত্রীর সহায়তায় কোনো রকম বেঁচে থাকলেও দুঃখের শেষে নেই।

Advertisement

২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহতদের দুঃখগাথা নিয়ে জাগো নিউজের আজকের আয়োজন- এখনও শুকায়নি ২১ আগস্টের ক্ষত।

জানা গেছে, ২১ আগস্টে নিহতদের অধিকাংশ এবং আহতদের মধ্যে ৩৩ জনকে ঢাকায় ফ্ল্যাট দিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রায় সব আহতদের দেশ-বিদেশে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আহতদের অনেককে সঞ্চয়পত্র করে দেওয়া হয়েছে, যেখান থেকে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। যা দিয়ে তাদের ওষুধের খরচ হয়।

আহতদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগের শরীরে এখনো রয়ে গেছে স্প্লিন্টার। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা সংকটের দানা বাঁধছে দেহে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হলে তারা আরও সুস্থ হবে বলে আশা করছেন। এজন্য সবার নজর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দিকে। তিনি ছাড়া কেউ তাদের খবর নেন না। বরং নেত্রী নির্দেশ দিলেও ঠিকমত পালন করেন না আওয়ামী লীগ নেতারা।

Advertisement

২১ আগস্টে আহত রাশেদা আক্তার রুমা জাগো নিউজকে বলেন, শরীরে অনেক স্প্লিন্টার আছে। শারীরিক অবস্থা আগের চেয়েও আরও খারাপ। যতদিন যায় ব্যথা বাড়ে। এখন কিডনিতে সমস্যা হয়ে গেছে। চেহারায় পানি চলে আসছে। পা মাঝে মাঝে ফুলে যায়। আগের মতো হাঁটতেও পারি না। এ সপ্তাহেও ডাক্তারের কাছে গেছি।

সবার নজর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দিকে। তিনি ছাড়া কেউ তাদের খবর নেন না। বরং নেত্রী নির্দেশ দিলেও ঠিকমত পালন করেন না আওয়ামী লীগ নেতারা।

আহত নাজমুল হোসাইন নাজিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পায়ের যে অবস্থা হাঁটতে কষ্ট হয়। শত শত স্প্লিন্টার রয়ে গেছে পায়ে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার বলেছেন, বাইরে চিকিৎসা করতে হবে। এত স্প্লিন্টার জার্মান ছাড়া খোলা মুশকিল। তারপরও ভারতে গিয়ে করা যায় কি না দেখি। এ চিকিৎসা নিজের পক্ষে করা সম্ভব নয়। নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কাছে বলবো, দেখি কী হয়।’

আহত আরেকজন সম্রাট আকবর সবুজ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার শরীর খুব অসুস্থ। প্রস্রাবের রাস্তায়, অন্ডোকোষে ও বাম পায়ে স্প্লিন্টার। এগুলো নিয়ে খুব কষ্টে আছি। মেরুদণ্ডের হাড়ে সমস্যা। ভারি কাজ করতে পারি না। সহযোগিতা পাইলে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারতাম।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, মায়ের সঙ্গে আমি আহত হয়। মায়ের নামই (মাহমুদা মনোয়ারা বেগম) তালিকায় উঠে। তাকে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র করে দিছে। ওখান থেকে ১৫ হাজার করে মাসে পায়, ওটা দিয়ে ওনার ওধুষপত্র চলে। আমি কোনো সহযোগিতা পাই নাই। জায়গা জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করেছি। চিকিৎসাও পরিপূর্ণ হয় নাই। এখন আর কিছু নাই। এখানে মায়ের সঙ্গে ১৮ বছর বয়সে আহত হই। এখন বয়স ৩৮ বছর চলে, অসুস্থতার জন্য বিয়েও করতে পারছি না।

আমি কোনো সহযোগিতা পাই নাই। জায়গা জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করেছি। চিকিৎসাও পরিপূর্ণ হয় নাই। এখন আর কিছু নাই। মায়ের সঙ্গে ১৮ বছর বয়সে আহত হয়। এখন বয়স ৩৮ বছর চলে, অসুস্থতার জন্য বিয়েও করতে পারছি না।

দলীয় নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে সবুজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলার পরও আমার চাকরি হয় নাই। আব্দুস সোবহান গোলাপ ওরা দেয় নাই। আওয়ামী লীগের নেতারা সব মুখোশধারী শয়তান। শেখ হাসিনার বিপদে এদের কাউকে খুঁজে পাবেন না। আমরা জীবন দিয়ে নেত্রীর পাশে ছিলাম। তারা চায় না, আমাদের সুচিকিৎসা হোক, ভালো করে বেঁচে থাকি। আমরা তো কোটি কোটি টাকা চাই না।

রাশিদা, নাজিম ও সবুজদের মতো এমন শতাধিক আহত শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখনো অনেকে সেদিনের সেই গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেকে তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে রাষ্ট্রীয় মদদে গ্রেনেড হামলা করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১২ ও পরে হাসপাতালে আরও ১২ জন মারা যান। আহত হন সাংবাদিকসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মী।

এ ঘটনায় দুটো মামলা হয়- হত্যা, হত্যা চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, ঘটনায় সহায়তাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি এবং ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনে (সংশোধনী-২০০২) আরেকটি। সেই মামলায় গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার একটি বিশেষ দ্রুত আদালত। রায়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য মামলায় ফাঁসির কারণে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ (মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর) মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী (ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল কে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এসইউজে/জেএইচ/জেআইএম