ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আনাচে-কানাচে হাসপাতাল-ক্লিনিকের ছড়াছড়ি। শুধু জেলা শহরেই আছে নিবন্ধিত ৬৩টি হাসপাতাল। আর জেলাজুড়ে নিবন্ধিত হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের সংখ্যা ৯৭টি। কিন্তু এরমধ্যে মাত্র ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে।
Advertisement
তবে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ব্যবহৃত কিছু ব্যথানাশক ও চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা অনুমতি নেওয়া অপরিহার্য। বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার চালুর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে নিবন্ধন দেয় তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া পাওয়ার কথা না। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাত্র ৩০টি হাসপাতালের সেই ছাড়পত্র রয়েছে। তাহলে বাকি ৬৭টি বেসরকারি হাসপাতাল কিভাবে অপারেশন থিয়েটার চালুর নিবন্ধন পেয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ভুল চিকিৎসায় মেয়ের মৃত্যু, মায়ের বুকফাটা কান্না
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার পৃথক দুটি ভাগে নিবন্ধন দিয়ে থাকে। হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা ও অপারেশন করা হয়ে থাকে। আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
Advertisement
হাসপাতালগুলোর অপারেশনের সময় রোগীদের ব্যথানিবারণ করতে কিছু ওষুধ ব্যবহৃত হয়। এরমধ্যে পেথিডিন, মরফিন, ও-মরফিনসহ আরও বেশকিছু ওষুধ রয়েছে। এগুলো ব্যবহার করতে হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৯৭টি নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল থাকলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে মাত্র ৩০টির।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯টি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় ২৮টি, আশুগঞ্জে একটি ও বাঞ্ছারামপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। বাকি ছয়টি উপজেলার কোনো বেসরকারি হাসপাতালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। অথচ বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার চালুর নিবন্ধন পেতে মাদকদ্রব্যের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুন: বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নে আশাব্যঞ্জক সাড়া
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান লিটন জাগো নিউজকে বলেন, আগামী ডিসেম্বরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলে কোনো হাসপাতাল তাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে পারবে না বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানিয়েছে। আমরাও হাসপাতাল মালিকদের বিষয়টি জানিয়েছি। তাদের মধ্যে প্রায় সবাই আবেদন করেছে। কিন্তু হাসপাতাল মালিকরা জানিয়েছেন, এই ছাড়পত্র যারা টাকা খরচ করেছে, তারা পেয়েছেন। ছাড়পত্র পেতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে বিভিন্নভাবে হয়রানির অভিযোগ করেন তিনি।
Advertisement
তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কেল অফিসের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, হয়রানির বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের কাছে মাত্র ১০টি বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়পত্র পেতে নতুন আবেদন করেছে। তাদের কাগজের ঘাটতি ছিল, আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি। তারা সঠিক কাগজপত্র না দিলে কিভাবে ছাড়পত্র দেওয়া হবে, তা কি আমাদের দোষ?
তিনি বলেন, আমাদের কাছে আবেদন করার পর আমরা সরেজমিনে তদন্ত করি। এরপর যদি কারও কাগজের ঘাটতি হয়, আমরা চিঠি দিই। তারা কাগজপত্র সঠিকভাবে দেওয়ার পর আমরা তা চট্টগ্রাম পাঠাই। সেখান থেকে ঢাকায় পাঠালে ছাড়পত্র অনুমোদন করে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: রোগীর রক্তনালী কেটে ফেলার অভিযোগ, যা বললো হাসপাতাল
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এতগুলো বেসরকারি হাসপাতাল কিভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন পেল, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালগুলো অনেক ক্ষেত্রে অনলাইনে নিবন্ধন পেতে আবেদন করে। তারা সেই আবেদনে ভুল তথ্য দিয়ে থাকতে পারে। সেই বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। ভুল প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে হাসপাতালগুলোতে পরিদর্শন করা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এমআরআর/জিকেএস