ফিচার

বন্ধুর বিয়েতে ৭ বোতল অ্যারোসল উপহার

উপহার পেতে কার না ভালো লাগে! বিয়ে কিংবা জন্মদিনে কাছের মানুষের থেকে প্রথম উপহারটা কী পেয়েছিলেন? ডাইনিং সেট, শোপিস, মানিব্যাগ,পছন্দের পোশাক কিংবা নগদ টাকা! হতে পারে এমন অনেক কিছুই। কিন্তু মশার স্প্রে কখনো উপহার পেয়েছেন? ঠিক তাই। কিছুদিন আগে এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিলাম দাওয়াত খেতে। ডেঙ্গুর প্রভাব তখনো চরমে। মজার ছলে বিয়েতে সাত বোতল অ্যারোসল স্প্রে উপহার দিয়েছিলাম। মজার ছলে হলেও সময়ের বিচারে এটি ছিল আমার মতে সেরা উপহার। অন্তত এ দেশের জন্য তো বটেই।

Advertisement

দেশে এখনো ডেঙ্গুর প্রভাব রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের ভিড়। বিকেল হলেই সিটি কর্পোরেশনের লোকজন শহর জুড়ে ধোঁয়া ছাড়তে বেড়িয়ে পড়েন। এতে মশাদের কিছু হয় কি না, জানা নেই। তবে আমার বাসার রাস্তা খুঁজতে নাস্তানাবুদ হতে হয়। কুয়াশার চাদরের মতো ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে পুরো এলাকা। এক হাত সামনের রাস্তাও তখন অচেনা লাগে।

গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশা শনাক্ত করা হয়েছে। তারমধ্যে ঢাকাতেই ১৪ প্রজাতি। উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া থাকার কারণে বাংলাদেশ মশা ও মশাবাহিত রোগ বিস্তারের জন্য উত্তম জায়গা। বাংলাদেশ মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস। শারীরিক আকৃতিতে ছোট হলেও এই ক্ষুদ্র পতঙ্গই জীবন বিষাদ করে তুলতে পারে মুহূর্তেই। এমনকি প্রাণনাশেরও কারণ এই ছোট্ট মশা। তাইতো অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেন, মশায়! দেশান্তরী করলে আমায়, কেশনগরের মশাই!

আরও পড়ুন: শিশুর নিরাপত্তা খুব জরুরি

Advertisement

তবে মশা নিয়ে রোমান্টিকতারও কমতি নেই। সদ্য প্রেমে পড়া তরুণেরতো ইচ্ছা হতে থাকে, ইশ যদি প্রেয়সীর গালে মশা হয়েও বসতে পারতাম! এদিকে প্রেমিকার গালে বসা মশা মারতে গিয়ে বিপদেও পড়েন অনেকে। অন্যদিকে মোশাররফ করিমের নাটকের দৃশ্যে মশা মারার ছলে গালে থাপ্পড় মারার পদ্ধতি অনেকেই আমরা প্রয়োগ করি। মশা সংগীতের কথাই বাদ যাবে কেন! কানের কাছে এসে বেসুরো গলায় ভ্যান ভ্যান করে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে।

এভাবেই যুগের পর যুগ আমাদের জীবনসঙ্গী হয়ে বহাল তবিয়তে টিকে আছে মশা। আমরা ছাড়তে চাইলেও ওরা প্রেমিকার মতো পেছনে লেগে থাকে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র ঘুরে বেড়ায় রাজার মতো। চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী, পকেটমার সবার কাছ থেকে রেহায় পেলেও মশা থেকে যেন আমাদের কিছুতেই নিস্তার নেই। মশার উৎপাতে ত্যক্তবিরক্ত হয়েছেন বহু কীর্তিমান মানুষ। মশার কাছে বিখ্যাত-কুখ্যাত সবাই সমান।

আরও পড়ুন: মাছের কামড় খেলেই সারবে কঠিন রোগ

আজ ২০ আগস্ট, বিশ্ব মশা দিবস। ১৮৯৭ সালের এই দিনে চিকিৎসক রোনাল্ড রস অ্যানোফিলিস মশাবাহিত ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি এই আবিষ্কারের জন্য ‘নোবেল’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। মশাবাহিত রোগের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হয়। দ্য লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের উদ্যোগে ১৯৩০ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হচ্ছে দিনটি।

Advertisement

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

কেএসকে/জেআইএম