দেশজুড়ে

নেই কোনো কার্যক্রম, তবুও নির্বাচন পর্যবেক্ষকের তালিকায় নাম

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য ৬৮টি দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুল হকের সই করা গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

Advertisement

ওই ৬৮ দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকায় রয়েছে লক্ষ্মীপুরের দুটি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে একটির মালিক স্থানীয় বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ ছাড়া। এলাকায় নেই সংস্থাটির কোনো কার্যালয় বা কর্মকর্তা-কর্মচারী। আর অন্যটির নামমাত্র একটি কার্যালয় থাকলেও কোনো কার্যক্রম নেই।

সচেতন মহলের ভাষ্যমতে, লক্ষ্মীপুরের ওই দুই প্রতিষ্ঠানের একটিরও পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা নেই।

দেখা গেছে, গণবিজ্ঞপ্তির দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে সেবা সোশ্যাল ফাউন্ডেশন। এটি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা থেকে প্রাথমিকভাবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। এ সংস্থার প্রধান জসিম উদ্দিন রিপন পাঁচ-ছয় বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন পেতে হাজিরহাটের যে ঠিকানা তিনি ব্যবহার করেছেন, সেখানে সেবা সোশ্যাল ফাউন্ডেশনের কোনো কার্যালয় নেই। প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্বও নেই।

Advertisement

আরও পড়ুন: ৬৮ পর্যবেক্ষক সংস্থাকে অনুমোদন দিতে চায় ইসি

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে সটকে পড়েছেন রিপন। স্থানীয় লোকজন তাকে বিএনপির সমর্থক হিসেবে চেনেন। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের মিয়াপাড়ায়।

ওই গ্রামের ইউপি সদস্য হাসান মাহমুদ আপেল বলেন, জসিম উদ্দিন রিপন কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন। এলাকায় থাকাকালে তিনি ব্যাংক, এনজিও ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। অন্তত ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তার কাছে টাকা পায়। এলাকায় তিনি প্রতারক হিসেবে পরিচিত। পাওনাদাররা তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

জসিম উদ্দিন রিপনের ভগ্নিপতি ইলিয়াস আহমেদ বলেন, রিপন সৌদি আরবে থাকেন। তার সঙ্গে আমাদের কারও সম্পর্ক নেই।

Advertisement

অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের তালিকার ৩৪ নম্বরে থাকা লক্ষ্মীপুরের আরেক প্রতিষ্ঠান জেন্ডার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির (জেমস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাহাবুব মোহাম্মদ আলী ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। এর পর থেকে তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

জেমসের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সোহাগ বলেন, আমরা অনেক আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষকের জন্য আবেদন করেছি। তখন মাহাবুব মোহাম্মদ আলী আমাদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার মৃত্যুর পর আবুল মোবারক ভূঁইয়া ওই পদে আছেন।

সোহাগের ভাষ্যমতে, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের তারা পর্যবেক্ষকের অনুমতি পেলেও মাঠে দায়িত্ব পালন করেননি। তাদের সংস্থাতে প্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ করা হয়। নির্বাচনী পর্যবেক্ষণের অনুমতি পেলে আগ্রহীদের থেকে বাচাই করে পর্যবেক্ষক প্রশিক্ষণ দিয়ে দায়িত্ব পালন করা হবে।

আরও পড়ুন: নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এখনো বিদেশি কোনো পর্যবেক্ষকের অনুরোধ নেই

লক্ষ্মীপুর ডায়েরির লেখক সানা উল্লাহ সানু বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষকের জন্য অনুমোদন দেয় তা হবে দুঃখজনক। যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, মনে হচ্ছে নির্বাচন নিয়ে কমিশনের পুরোদমে প্রস্তুতি না থাকায় দায়সারা একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য এবং খোঁজ-খবর নেওয়া প্রয়োজন ছিল। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় নির্বাচন কমিশনের প্রতি বহু রাজনৈতিক দলের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকেও আমাদের কাছে কোনো তালিকা পাঠানো হয়নি।

কাজল কায়েস/এমআরআর/এমএস