স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম হাস্যকর

সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মশা নিধনে যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, সেগুলোর কোনোটিরই বাস্তব কার্যকারিতা নেই বলে দাবি গবেষকদের। একই সঙ্গে এসব কার্যক্রমের বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই বলেও মনে করেন কীটতত্ত্ববিদরা।

Advertisement

শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গবেষক ও কীটতত্ত্ববিদরা। দেশে চলমান ডেঙ্গু সমস্যা সমাধানে আশু করণীয় বিষয়ে জনগণকে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় ডেঙ্গু কমিটির সাবেক সদস্য ও বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। তারা মশা মারতে যে কীটনাশক প্রয়োগ করছে, তার প্রয়োগ পক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। তারা মশা নিধনে পানিতে হাঁস, ব্যাঙ ছাড়ছে। মশা নিধন করতে ফড়িং ছাড়ছে, এসব কার্যক্রম খুবই হাস্যকর এবং লোক দেখানো। এসব কার্যক্রমের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে মৃত্যু সাড়ে ৪০০ ছাড়ালো

Advertisement

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক কারণে ডেঙ্গু হচ্ছে, আবার প্রাকৃতিক কারণেই ডেঙ্গু কমে যাচ্ছে। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনগুলো যেসব কর্মসূচি নিচ্ছে, সেগুলোর কোনো কার্যকারিতা নেই। সুতরাং এসব ফগিং করলেও যা, না করলেও তা। সিটি করপোরেশন যদি এই মুহূর্তে তাদের মশা নিধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় তাতেও যা হবে, কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও তাই হবে।

মঞ্জুর আহমেদ বলেন, মশা মারার জন্য যেসময়ে ফগিং দেওয়া হয়, সেই সময়ে মশা তার নিজ জায়গায় থাকে না। বিভিন্ন দিকে ওড়াউড়ি করে। ঠিক সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্তে মশা কামড়ায়। এজন্য ফগিংটা হওয়া উচিত সেই সময়ে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সবাই প্রচারণা চালাচ্ছে যে, দূষিত পানিতেও এডিস মশা জন্মায়। এর বৈজ্ঞানিক কোনো রেফারেন্স তারা দেখাতে পারবে না। এডিস মশা কখনোই দূষিত পানিতে জন্মায় না। এছাড়াও বলা হচ্ছে, তিনদিনের জমা পানিতে এডিস মশা জন্মায়, কিন্তু বিষয়টি তা নয়। এডিস মশা জন্মাতে অন্তত ৭ দিন সময় লাগে।

আরও পড়ুন: সাধারণ জ্বর নাকি ডেঙ্গু বুঝবেন যেসব লক্ষণে

Advertisement

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বলেন, মশাকে আমরা আসলে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছি না, যে কারণে মশার কবল থেকেও আমরা বের হয়ে আসতে পারছি না। রোববার (২০ আগস্ট) মশা দিবস, এই দিবস উপলক্ষে আমাদের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা দরকার। এই দিবস উপলক্ষেও যদি আমরা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি এবং সচেতনতা বাড়াতে পারি, তাহলেও ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কাজে আসতো।

তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কারণে এখন শহরের মানুষ মোটামুটি সচেতন হলেও গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সচেতনতা নেই বললেই চলে। এজন্য সরকারের কাছে আমার আহ্বান থাকবে, অন্তত মশা দিবসকে কেন্দ্র করে এই বছর না হোক, আগামী বছরগুলোতে কিছু কার্যক্রম ও পরিকল্পনা হাতে নেওয়া উচিত।

ব্যক্তি সচেতনতায় গুরুত্বারোপ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু ফয়েজ মো. আসলাম বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে কী প্রটেকশন নিয়েছি, সেটা আমাদের ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার আমার জন্য কী করছে সেটা পরের বিষয়। কারণ আমি যদি ফুল হাতা জামা পরি, আমি যদি দরজা-জানালা সময়মতো বন্ধ করে দেই, দিনে ঘুমানোর সময় আমি যদি মশারি ব্যবহার করি, এসব ক্ষেত্রে আমাকে মশা কামড়ানোর সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যাবে।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু আক্রান্ত বহু শিক্ষার্থী, দরখাস্ত দিয়েও গুনতে হচ্ছে জরিমানা

গবেষণায় গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আমাদের এমনকিছু লোক থাকতে হবে, যারা সবসময় এসব বিষয়ে গবেষণা করবেন। কারণ মশা প্রতিনিয়ত তার ধরন পাল্টাচ্ছে। আমরা যেসব ওষুধ ব্যবহার করছি, সেগুলো নতুন ধরনেও কার্যকর হচ্ছে কি না- এসব বিষয়েও গবেষণা করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সাবেক সচিব মার্গুব মোরশেদ, কীটতত্ত্ববিদ ইন্দ্রাণী ধর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুর রহমান প্রমুখ।

এএএম/কেএসআর/এমএস